কলকাতা, 14 সেপ্টেম্বর: সালটা 1990 ৷ বছর ষোলোর লিয়েন্ডার পেজ (Leander Paes) সুযোগ করে নিলেন ভারতের ডেভিস কাপ (Davis Cup) দলে ৷ যদিও কলকাতাজাত কিশোর লিয়েন্ডারের এই সুযোগ পাওয়ার নেপথ্যে ছিলেন এক তৃতীয় ব্যক্তি ৷ সে সময় ডেভিস কাপের দল বেছে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা নির্বাচকদের কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে সেই তৃতীয় ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর কাঁধে যে গুরুদায়িত্ব বর্তেছে, সেই দায়িত্ব তিনি প্রত্যাখ্যান করবেন যদি লিয়েন্ডারকে এই দলে না-রাখা হয় ৷
নরেশ কুমারের এই হুঁশিয়ারি শুনে লিয়েন্ডারকে ব্যতিরেকে ডেভিস কাপ ঘোষণার সাহস আর দেখাননি নির্বাচকরা ৷ ভারত তথা বিশ্ব টেনিসের কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেকের নেপথ্যে কারণ হিসেবে ইতিহাস এভাবেই মনে রাখবে নরেশ কুমারকে (Naresh Kumar) ৷ 2020 টেনিসের প্রথম শিক্ষাগুরু হিসেবে নরেশ কুমার দ্রোণাচার্য সম্মান পাওয়ার পর স্বভাবতই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি লি ৷ কুঁড়ি থেকে তাঁর ফুল হয়ে ওঠা যে নরেশ কুমারের জন্যই ৷
আদর করে নরেশ কুমারকে তাই 'নরেশ আঙ্কল' বলে ডাকতেন লিয়েন্ডার ৷ নরেশ কুমার দ্রোণাচার্য সম্মানে (Dronacharya Award) ভূষিত হওয়ার পর এক ক্রীড়া সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী বলেছিলেন, "আমি অত্যন্ত সম্মানিত যে আমার প্রথম ডেভিস কাপ অধিনায়ক এইমাত্র দ্রোণাচার্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ৷ কোন সন্দেহ নেই যে এই সম্মান ওনার প্রাপ্য ছিল কারণ, সারাজীবন উনি দেশের উঠতি প্রতিভাদের প্রতিপালনে সময় ব্যয় করেছেন তিনি ৷"
কলকাতায় লিয়েন্ডারের বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকতেন নরেশ কুমার ৷ অঙ্কুরে প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি তিনি ৷ লিয়েন্ডার জানান, সময়ের কোনও বালাই ছিল না ৷ যখন মনে হত, যে কোনও বিষয়ে পরামর্শ নিতে নরেশ আঙ্কলের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তাম আমি ৷ প্রয়োজনে টেলিফোনে সাহায্য নিতেও কোনও বাধা ছিল না ৷ 11 বছর বয়স থেকে লি-কে হাতে করে গড়ে তোলা সেই নরেশ কুমারই বুধবার পাড়ি দিলেন চিরঘুমের দেশে ৷
তবে প্রতিভা প্রতিপালনেই কেবল আটকে ছিলেন না 'দ্রোণাচার্য' নরেশ কুমার ৷ 1928 লাহোরে জন্ম নেওয়া লি-এর নরেশ আঙ্কল খেলোয়াড় হিসেবেও ছিলেন কিংবদন্তি ৷ 1949 এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে পথচলা শুরু করার পর পঞ্চাশের দশকে রমানাথন কৃষ্ণাণের সঙ্গে ভারতীয় লন টেনিসে শাসন করেছিলেন নরেশ কুমার ৷ 1952 নিজে ডেভিস কাপের আঙিনায় প্রথম পদার্পণ করেছিলেন লি-এর 'নরেশ আঙ্কল' ৷
আরও পড়ুন: প্রাক্তন টেনিস তারকা নরেশ কুমারের জীবনাবসান
কেরিয়ারে তাঁর সেরা সময় 1955 সাল ৷ উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে চতুর্থ রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন নরেশ কুমার ৷ রেকর্ড 101টি উইম্বলডন ম্যাচ খেলার নজিরের পাশাপাশি এই কিংবদন্তির ঝুলিতে রয়েছে পাঁচটি সিঙ্গলস খেতাব (আইরিশ চ্যাম্পিয়নশিপ 1952, 1953, ওয়েলশ চ্যাম্পিয়নশিপ 1952, এসেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ 1957, ওয়েঙ্গান টুর্নামেন্ট 1958) ৷ 1969 এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কেরিয়ারের শেষ প্রতিযোগিতা খেলেছিলেন তিনি ৷
নরেশ কুমারের মৃত্যুতে তাই ভারতীয় টেনিসে একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল বুধবার ৷ বার্ধক্যজনিত কারণে 93 বছরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কলকাতার বাসভবনে ৷ কিংবদন্তির মৃত্যুতে ভারতীয় টেনিস আজ অভিভাবকহীন ৷