ETV Bharat / sports

"মানুষের দুর্দশা দূর করার লক্ষ্যেই রাজনীতিতে", নির্বাচনে জয়লাভ করে বলছেন জেজে

Jeje Lalpekhlua Interview: হাঁটুর চোটে ক্রমাগত ভুগতে থাকা জেজে লালপেখলুয়া চলতি বছর মাত্র বত্রিশেই বিদায় জানিয়েছেন ফুটবলকে ৷ তবে এখন তাঁর নতুন পরিচয় রাজনীতিবিদ ৷ মিজোরামে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর তিনিই কি রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ? ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি সঞ্জয় অধিকারীকে কী বললেন প্রাক্তন স্ট্রাইকার ৷

Etv BharatJeje Lalpekhlua
নির্বাচনে জয়ের জেজেকে নিয়ে উচ্ছ্বাস সহকর্মীদের
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 7, 2023, 5:58 PM IST

ইটিভি ভারতকে জেজের সাক্ষাৎকার

আইজল, 7 ডিসেম্বর: 56 ম্যাচে 23 গোল ৷ জাতীয় দলের জার্সিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি ৷ ঝুলিতে রয়েছে চারটি আন্তর্জাতিক ট্রফি ৷ পাশাপাশি কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল-সহ একাধিক ক্লাবের হয়ে কুড়িয়েছেন বহু মণিমানিক্য ৷ তাঁর গোলস্কোরিং দক্ষতার জন্য ভারতীয় ফুটবলে তিনি পরিচিত ছিলেন 'মিজো স্নাইপার' নামে ৷ কিন্তু হাঁটুর চোটে ক্রমাগত ভুগতে থাকা জেজে লালপেখলুয়া চলতি বছর মাত্র বত্রিশেই তুলে রেখেছেন বুটজোড়া ৷ তবে 3 ডিসেম্বর থেকে জেজের নয়া পরিচিতি, তিনি মিজোরামের বিধায়ক ৷ ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর রাজনীতিতে কী কারণে? একদা বাইচুং ভুটিয়া-সুনীল ছেত্রীদের গোলস্কোরিং পার্টনার ইটিভি ভারতকে জানালেন, সবটাই মানুষের জন্য ৷

জোরামথাংগার মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ধরাশায়ী করে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা উত্তর-পূর্বের রাজ্যে ইতিহাস গড়েছে জোরাম পিপল'স মুভমেন্ট। 40টি'র আসনের মধ্যে 27টি'তে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা। একইসঙ্গে আকর্ষণীয় প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার জেজে লালপেখলুয়ার জয়। দক্ষিণ তুইপুই আসন থেকে জয়লাভ করেছেন 2020-21 আইএসএলে শেষবার ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করা প্রাক্তন ফুটবলার।

ক্রীড়াবিদদের নির্বাচনে অংশগ্রহন নতুন নয়। কিন্তু জেজে মিজোরামের ফুটবল আঙিনায় বড় নাম। সিকি শতাব্দী ধরে ভারতীয় ফুটবল এবং অন্যান্য খেলাধুলোর সাপ্লাই লাইন দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। আর মিজোরাম এর মধ্যে অন্যতম। জেজে জানাচ্ছেন তিনি মানুষের কাজ করতে চান। 32 বছরের জেজেই সম্ভবত মিজোরামের পরবর্তী ক্রীড়ামন্ত্রী। ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে 'মিজো স্নাইপার' যদিও বলছেন, "এটা আমার ঠিক করার বিষয় নয়। আমি রাজনৈতিক কর্মী মাত্র। নেতৃত্ব ঠিক করবে। আমি মানুষের হয়ে কাজ করতে চাই। সেটাই অগ্রাধিকার। সেক্ষেত্রে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটাই করব।"

নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়েই বিধায়ক। শুক্রবার শপথ গ্রহণ মিজোরামের নয়া মন্ত্রিসভার ৷ তার আগে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে জেজে বলছেন, "সত্যি বলতে কী আগে কখনও রাজনীতিতে অংশ নেব এমন কথা ভাবিনি। যদিও আমার কাছে অন্য দলের প্রস্তাব ছিল। ওরাও বলেছিল তাঁদের হয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে। ফুটবলার জীবন থেকেই প্রস্তাব ছিল। তবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কখনোই আমার স্বপ্ন ছিল না। ফুটবল ছাড়ার পর মিজোরামে থাকাকালীন আমি অনেক কিছুই খেয়াল করছিলাম। একদিন কাজ না-করলে এখানকার মানুষের খানাপিনা জোটে না। তখনই মনে হল এদের জন্য কিছু করতে হবে। আমার কাছে অন্যান্য দলের প্রস্তাব ছিল। সবকিছু দেখেশুনে চিন্তা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে জেডপিএমে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । গরিব মানুষের জন্য কিছু করতে হবে এই ভাবনা থেকেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। আশা করি আমি মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।"

জেজে হারিয়েছেন তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী লালথিংয়ানাকে ৷ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফুটবলার জীবনে গোল করার অভ্যাস ছিল প্রাক্তন পাহাড়ি স্ট্রাইকারের। রাজনীতিতে অংশ নিয়ে জেজের জয় সেই পুরোনো অভ্যাসেরই প্রতিফলন যেন। আইএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাইয়িন এফসি'র হয়ে সর্বোচ্চ গোল করা তারকা ফুটবলার বলছেন, "আমার বিরুদ্ধে যে দাঁড়িয়েছিল সে ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দারুণ ভালো মানুষ। আমি তাঁকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কংগ্রেস দলে আমার আত্মীয় রয়েছে। সেও দারুণ ভালো মানুষ। সমাজের জন্য কাজ করেছে। তবে আমি যখন ফুটবল খেলতাম তখনও প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করিনি। তাদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে কাটাছেঁড়া করার চেয়ে আমি নিজের একশো শতাংশ উজাড় করে দিয়েছি সবসময়। প্রতিপক্ষ দলে ভালো খেলোয়াড় থাকলে আমি মোটিভেশন পেতাম। ভালো দলের বিরুদ্ধে খেলার সময় প্রস্তুতিতে বেশি সময় দিতাম। আমি সবসময় শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে চেয়েছি। কাউকে কোনওদিন ভয় পাইনি। প্রতিপক্ষের দিকে না-তাকিয়ে আমি নিজের খেলা এবং গোল করায় মনোসংযোগ করেছি। সেইভাবেই আমার বিরুদ্ধে ভালো লোকেরা দাঁড়ালেও কঠোর পরিশ্রম করেছি। ওদের অভিজ্ঞতা বেশি ছিল। কেউ ভাবেনি আমি জিততে পারি। আমি শুধু পরিশ্রম করে গিয়েছি। ভগবানের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। আমার কর্মীরাও প্রচুর পরিশ্রম করেছে। ওদের লড়াই পরিশ্রমের কারণেই আমি জয় পেয়েছি।"

ফুটবলের ময়দান থেকে রাজনীতিতে। স্বাভাবিকভাবেই ক্রীড়াজগৎ জেজের কাছে বাড়তি প্রত্যাশা করবে। প্রত্যাশার চাপ যে থাকবে, সেটা জেজেও জানেন ভালোভাবে। নিজের পরিকল্পনাও সাজাচ্ছেন সেভাবেই। দেশের প্রাক্তন প্রতিভাবান স্ট্রাইকার বলছেন, "আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের লড়াইটা কেমন, তা আমি জানি। বিশেষ করে মিজোরামের খেলাধুলোর জগতে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু তারা সামনে যেতে পারছে না। কারণ, তৃণমূল স্তরে পরিকাঠামোর অভাব। সুযোগ-সুবিধার অভাব। যদি আমরা সেগুলো জোগাড় করে দিতে পারি তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।"

মিজোরামের নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী কি তাহলে জেজে লালপেখলুয়া? এখনও কি বার্তা এসেছে নতুন বিধায়কের কাছে? জেজে বলছেন, "আমার কোনও ধারণা নেই। নেতৃত্ব কী বলবে তা জানি না। এই ব্যাপারে কোনও ধারণা আমার কাছে নেই।" প্রাক্তন ফুটবলার আরও বলছেন, "আমার কাছে মিজোরামের মানুষ, আমার বিধানসভার সুবিধা-অসুবিধা সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে ৷" দেশের সমস্ত রাজ্যেই কোনও না কোনও দুর্নীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷ জেজে বলছেন, "বিষয়টি আমাকে ভাবায়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমি ওনাকে খুব ভালো করে জানি। ওনার এই মনোভাবের কারণেই আমি দলে যোগ দিয়েছি। দুর্নীতির কারণেই আমাদের দেশ, আমার রাজ্য পিছিয়ে পড়ছে। মিজোরামেও দুর্নীতি রয়েছে। যেখানে উন্নয়ন দরকার সেখানে তা হচ্ছে না। যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত তা পৌঁছচ্ছে না। গরীব কৃষকরা বঞ্চিত। সব মানুষ বঞ্চিত। আমাদের সমস্ত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ আমার রাজ্য আমার বিধানসভা উন্নতির ছোঁয়া পাবে ৷"

মোহনবাগান-চেন্নাইয়িন এফসি'র তরফেও শুভেচ্ছা পেয়েছেন জেজে। আর সেই শুভেচ্ছাকে সঙ্গে নিয়ে আপাতত মানুষের কাজে মনসংযোগ করতে চান জেজে লালপেখলুয়া। অন্যদিকে জেজের মতোই জয় পেয়েছেন মিজোরাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা টেটিয়া। তিনিও জানাচ্ছেন, তাদের দলের এই বিরাট জয় পরিশ্রমের ফসল। তারা প্রতিদ্বন্দী দলগুলোর চেয়ে অনেক আগে প্রচার শুরু করেছিলেন। আগামী পাঁচ বছর কৃষক, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করাই লক্ষ্য। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মুছে ফেলাই তাঁদের লক্ষ্য। এই প্রতিশ্রুতি জনগণকে তাদের দিকে নিয়ে এসেছে। যারা আমাদের এইবার জিতিয়েছে সেই তারা প্রতিশ্রুতি পালন করতে না দেখলে ছুঁড়ে ফেলবে। তাই প্রতিশ্রুতি পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে বলে মনে করেন টেটিয়া। পাশাপাশি এই জয় মিজোরামের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে সফলভাবে চলার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে বলেও জানিয়েছেন টেটিয়া ৷

আরও পড়ুন:

  1. মিজোরামে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন ইন্দিরা গান্ধির প্রাক্তন দেহরক্ষী
  2. মিজোরামে সরকার গঠনের পথে জেডপিএম, রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন লালডুহোমা
  3. নজর এবার 'সুখী রাজ্য' মিজোরামে, এমএনএফ-র সঙ্গে তাল কাটায় কতটা শঙ্কিত বিজেপির ?

ইটিভি ভারতকে জেজের সাক্ষাৎকার

আইজল, 7 ডিসেম্বর: 56 ম্যাচে 23 গোল ৷ জাতীয় দলের জার্সিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি ৷ ঝুলিতে রয়েছে চারটি আন্তর্জাতিক ট্রফি ৷ পাশাপাশি কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল-সহ একাধিক ক্লাবের হয়ে কুড়িয়েছেন বহু মণিমানিক্য ৷ তাঁর গোলস্কোরিং দক্ষতার জন্য ভারতীয় ফুটবলে তিনি পরিচিত ছিলেন 'মিজো স্নাইপার' নামে ৷ কিন্তু হাঁটুর চোটে ক্রমাগত ভুগতে থাকা জেজে লালপেখলুয়া চলতি বছর মাত্র বত্রিশেই তুলে রেখেছেন বুটজোড়া ৷ তবে 3 ডিসেম্বর থেকে জেজের নয়া পরিচিতি, তিনি মিজোরামের বিধায়ক ৷ ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর রাজনীতিতে কী কারণে? একদা বাইচুং ভুটিয়া-সুনীল ছেত্রীদের গোলস্কোরিং পার্টনার ইটিভি ভারতকে জানালেন, সবটাই মানুষের জন্য ৷

জোরামথাংগার মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে ধরাশায়ী করে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা উত্তর-পূর্বের রাজ্যে ইতিহাস গড়েছে জোরাম পিপল'স মুভমেন্ট। 40টি'র আসনের মধ্যে 27টি'তে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা। একইসঙ্গে আকর্ষণীয় প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার জেজে লালপেখলুয়ার জয়। দক্ষিণ তুইপুই আসন থেকে জয়লাভ করেছেন 2020-21 আইএসএলে শেষবার ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করা প্রাক্তন ফুটবলার।

ক্রীড়াবিদদের নির্বাচনে অংশগ্রহন নতুন নয়। কিন্তু জেজে মিজোরামের ফুটবল আঙিনায় বড় নাম। সিকি শতাব্দী ধরে ভারতীয় ফুটবল এবং অন্যান্য খেলাধুলোর সাপ্লাই লাইন দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। আর মিজোরাম এর মধ্যে অন্যতম। জেজে জানাচ্ছেন তিনি মানুষের কাজ করতে চান। 32 বছরের জেজেই সম্ভবত মিজোরামের পরবর্তী ক্রীড়ামন্ত্রী। ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে 'মিজো স্নাইপার' যদিও বলছেন, "এটা আমার ঠিক করার বিষয় নয়। আমি রাজনৈতিক কর্মী মাত্র। নেতৃত্ব ঠিক করবে। আমি মানুষের হয়ে কাজ করতে চাই। সেটাই অগ্রাধিকার। সেক্ষেত্রে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটাই করব।"

নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়েই বিধায়ক। শুক্রবার শপথ গ্রহণ মিজোরামের নয়া মন্ত্রিসভার ৷ তার আগে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে জেজে বলছেন, "সত্যি বলতে কী আগে কখনও রাজনীতিতে অংশ নেব এমন কথা ভাবিনি। যদিও আমার কাছে অন্য দলের প্রস্তাব ছিল। ওরাও বলেছিল তাঁদের হয়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে। ফুটবলার জীবন থেকেই প্রস্তাব ছিল। তবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কখনোই আমার স্বপ্ন ছিল না। ফুটবল ছাড়ার পর মিজোরামে থাকাকালীন আমি অনেক কিছুই খেয়াল করছিলাম। একদিন কাজ না-করলে এখানকার মানুষের খানাপিনা জোটে না। তখনই মনে হল এদের জন্য কিছু করতে হবে। আমার কাছে অন্যান্য দলের প্রস্তাব ছিল। সবকিছু দেখেশুনে চিন্তা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে জেডপিএমে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । গরিব মানুষের জন্য কিছু করতে হবে এই ভাবনা থেকেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। আশা করি আমি মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।"

জেজে হারিয়েছেন তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী লালথিংয়ানাকে ৷ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফুটবলার জীবনে গোল করার অভ্যাস ছিল প্রাক্তন পাহাড়ি স্ট্রাইকারের। রাজনীতিতে অংশ নিয়ে জেজের জয় সেই পুরোনো অভ্যাসেরই প্রতিফলন যেন। আইএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাইয়িন এফসি'র হয়ে সর্বোচ্চ গোল করা তারকা ফুটবলার বলছেন, "আমার বিরুদ্ধে যে দাঁড়িয়েছিল সে ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দারুণ ভালো মানুষ। আমি তাঁকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কংগ্রেস দলে আমার আত্মীয় রয়েছে। সেও দারুণ ভালো মানুষ। সমাজের জন্য কাজ করেছে। তবে আমি যখন ফুটবল খেলতাম তখনও প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করিনি। তাদের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে কাটাছেঁড়া করার চেয়ে আমি নিজের একশো শতাংশ উজাড় করে দিয়েছি সবসময়। প্রতিপক্ষ দলে ভালো খেলোয়াড় থাকলে আমি মোটিভেশন পেতাম। ভালো দলের বিরুদ্ধে খেলার সময় প্রস্তুতিতে বেশি সময় দিতাম। আমি সবসময় শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে চেয়েছি। কাউকে কোনওদিন ভয় পাইনি। প্রতিপক্ষের দিকে না-তাকিয়ে আমি নিজের খেলা এবং গোল করায় মনোসংযোগ করেছি। সেইভাবেই আমার বিরুদ্ধে ভালো লোকেরা দাঁড়ালেও কঠোর পরিশ্রম করেছি। ওদের অভিজ্ঞতা বেশি ছিল। কেউ ভাবেনি আমি জিততে পারি। আমি শুধু পরিশ্রম করে গিয়েছি। ভগবানের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। আমার কর্মীরাও প্রচুর পরিশ্রম করেছে। ওদের লড়াই পরিশ্রমের কারণেই আমি জয় পেয়েছি।"

ফুটবলের ময়দান থেকে রাজনীতিতে। স্বাভাবিকভাবেই ক্রীড়াজগৎ জেজের কাছে বাড়তি প্রত্যাশা করবে। প্রত্যাশার চাপ যে থাকবে, সেটা জেজেও জানেন ভালোভাবে। নিজের পরিকল্পনাও সাজাচ্ছেন সেভাবেই। দেশের প্রাক্তন প্রতিভাবান স্ট্রাইকার বলছেন, "আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের লড়াইটা কেমন, তা আমি জানি। বিশেষ করে মিজোরামের খেলাধুলোর জগতে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু তারা সামনে যেতে পারছে না। কারণ, তৃণমূল স্তরে পরিকাঠামোর অভাব। সুযোগ-সুবিধার অভাব। যদি আমরা সেগুলো জোগাড় করে দিতে পারি তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।"

মিজোরামের নতুন ক্রীড়ামন্ত্রী কি তাহলে জেজে লালপেখলুয়া? এখনও কি বার্তা এসেছে নতুন বিধায়কের কাছে? জেজে বলছেন, "আমার কোনও ধারণা নেই। নেতৃত্ব কী বলবে তা জানি না। এই ব্যাপারে কোনও ধারণা আমার কাছে নেই।" প্রাক্তন ফুটবলার আরও বলছেন, "আমার কাছে মিজোরামের মানুষ, আমার বিধানসভার সুবিধা-অসুবিধা সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে ৷" দেশের সমস্ত রাজ্যেই কোনও না কোনও দুর্নীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷ জেজে বলছেন, "বিষয়টি আমাকে ভাবায়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমি ওনাকে খুব ভালো করে জানি। ওনার এই মনোভাবের কারণেই আমি দলে যোগ দিয়েছি। দুর্নীতির কারণেই আমাদের দেশ, আমার রাজ্য পিছিয়ে পড়ছে। মিজোরামেও দুর্নীতি রয়েছে। যেখানে উন্নয়ন দরকার সেখানে তা হচ্ছে না। যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত তা পৌঁছচ্ছে না। গরীব কৃষকরা বঞ্চিত। সব মানুষ বঞ্চিত। আমাদের সমস্ত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একজোট হতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ আমার রাজ্য আমার বিধানসভা উন্নতির ছোঁয়া পাবে ৷"

মোহনবাগান-চেন্নাইয়িন এফসি'র তরফেও শুভেচ্ছা পেয়েছেন জেজে। আর সেই শুভেচ্ছাকে সঙ্গে নিয়ে আপাতত মানুষের কাজে মনসংযোগ করতে চান জেজে লালপেখলুয়া। অন্যদিকে জেজের মতোই জয় পেয়েছেন মিজোরাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা টেটিয়া। তিনিও জানাচ্ছেন, তাদের দলের এই বিরাট জয় পরিশ্রমের ফসল। তারা প্রতিদ্বন্দী দলগুলোর চেয়ে অনেক আগে প্রচার শুরু করেছিলেন। আগামী পাঁচ বছর কৃষক, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করাই লক্ষ্য। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মুছে ফেলাই তাঁদের লক্ষ্য। এই প্রতিশ্রুতি জনগণকে তাদের দিকে নিয়ে এসেছে। যারা আমাদের এইবার জিতিয়েছে সেই তারা প্রতিশ্রুতি পালন করতে না দেখলে ছুঁড়ে ফেলবে। তাই প্রতিশ্রুতি পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে বলে মনে করেন টেটিয়া। পাশাপাশি এই জয় মিজোরামের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে সফলভাবে চলার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে বলেও জানিয়েছেন টেটিয়া ৷

আরও পড়ুন:

  1. মিজোরামে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন ইন্দিরা গান্ধির প্রাক্তন দেহরক্ষী
  2. মিজোরামে সরকার গঠনের পথে জেডপিএম, রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন লালডুহোমা
  3. নজর এবার 'সুখী রাজ্য' মিজোরামে, এমএনএফ-র সঙ্গে তাল কাটায় কতটা শঙ্কিত বিজেপির ?
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.