চুঁচুড়া, 22 অগাস্ট : কোরোনাজয়ীরা বলছেন, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে মানসিক জোর প্রয়োজন । মনের জোর হারালে কোরোনা ভাইরাস কব্জা করে ফেলবে । বছর তেরোর জাতীয় পর্যায়ের ডাইভার সৃষ্টি চট্টোপাধ্যায়ও মনের জোর হারায়নি ৷ জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিত রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে সৃষ্টি । জুলাই মাসে কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছিল । শুধু সৃষ্টিই নয়, তার পরিবারের উপরও আঘাত হেনেছিল কোরোনা । সেই সৃষ্টির মুখে এখন যুদ্ধ জয়ের আলো । মানসিক জোর আর একে অপরের পাশে থেকে কোরোনাকে হারিয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবার ৷ কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সৃষ্টি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে । প্রতিকূলতা কাটিয়ে এবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রস্তুতি করছে চট্টোপাধ্যায় পরিবার । সৃষ্টি বলছে, "সুইমিং পুল খুললেই সবচেয়ে উঁচু ডাইভিং বোর্ড থেকে লাফ দিতে চাই ।" 13-র কিশোরীর গলায় জয়, আত্মবিশ্বাস, মুক্তির আনন্দের কোলাজ ।
সৃষ্টির বাবা রাজীব চট্টোপাধ্যায় সল্টলেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের OC । দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার তিনি । তাই কাজে দ্রুত যোগ দেওয়ার বাড়তি তাগিদ রয়েছে রাজীব চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে । তাঁর সহধর্মিণী কাকলি চট্টোপাধ্যায় যুদ্ধ শেষে নতুন স্ট্যান্স নিয়ে সংসারের দায়িত্ব তুলে নিতে চান । সিনিয়র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "এই কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ানোটা জরুরি । কেউ কোরোনায় আক্রান্ত হলে তাঁকে অচ্ছুৎ করে দূরে সরিয়ে দেবেন না । আমার কঠিন সময়ে প্রতিটি মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে । জীবনের রোজকার প্রয়োজনের যাবতীয় জিনিস সরাবরাহ করেছে সবাই । সবার চেষ্টায় আজ জয় পেয়েছি ।" আপাতত শরীরটা দুর্বল । এখন সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে চট্টোপাধ্যায় পরিবার ৷ রাজ্য সাঁতার সংস্থার সচিব স্বপন আদক বলেছেন, "সৃষ্টির খবরটা শুনে মন খারাপ হয়েছিল । এই প্রথম কোনও সাঁতারু কোরোনা আক্রান্ত হয়েছিল । এমনিতেই সাঁতার, ডাইভিং বন্ধ রয়েছে । এই অবস্থায় সৃষ্টির আক্রান্ত হওয়ার খবর চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছিল । তবে ওর মানসিক জোর সবসময় বেশি । ওর সুস্থতার খবরে আনন্দ হচ্ছে ।"
চুঁচুড়ার মহসিন কলেজের সামনে বেলতলা মোড়ে সৃষ্টি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি । চুঁচুড়ার বাড়ি থেকে প্রতিদিন মোটর সাইকেলে 70 কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অফিস যান সৃষ্টির বাবা রাজীব চট্টোপাধ্যায় । রাজীববাবুর অনুমান, তাঁর থেকেই সৃষ্টি সহ পুরো পরিবার কোরোনায় আক্রান্ত হয় ৷ একদিন অফিস যাওয়ার সময় চোখ লাল হয় রাজীববাবুর । চোখের সংক্রমণ মনে করে চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করেন তিনি । চোখের লালচে ভাব কমলেও 24 ঘণ্টার মধ্যে তাঁর হালকা জ্বর আসে ৷ জিভের স্বাদও চলে যায় । রাজীববাবুর স্ত্রী কাকলি চট্টোপাধ্যায়ের শরীরেও একইরকম উপসর্গ দেখা দেয় । চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে টেস্ট করলে দু'জনেরই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । তাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছিল । এরপর একই উপসর্গ দেখা দেয় সৃষ্টিরও । তারও টেস্ট রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । হোম কোয়ারানটিনে চিকিৎসা চলে সকলের । আপাতত সকলেই কোরোনামুক্ত ।
হার না মানা মানসিকতা, চিকিৎসকদের পরামর্শ, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিরন্তর সমর্থন সৃষ্টিদের যুদ্ধ জয়ে সাহস দিয়েছে । সৃষ্টি নিজে বলছে, "বাবার ইস্পাত কঠিন মানসিক জোর থেকে শিক্ষা নিয়েছি । যা কঠিন সময়ে ছিল আমার অনুপ্রেরণা । সকলের কাছে আমার আবেদন, কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করুন । কোরোনা আক্রান্তকে অচ্ছুৎ করে রাখবেন না । বাড়িয়ে দিতে হবে সহমর্মিতার হাত ।"