কলকাতা, 2 জুলাই : অবশেষে দেড় বছর পর কলকাতায় ফিরলেন প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় । FIFA রেফারি প্রাঞ্জল নিজের পরিবারকে বাঁচাতে কলকাতা ছেড়েছিলেন । বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি । এবার তাঁর কম্পানি তাঁকে ফের কলকাতার অফিসে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । বছর 34-এর MBA পাশ FIFA রেফারি ফের কলকাতায় ফেরার সুযোগ পেয়ে খুশি । গতকাল কলকাতায় ফিরে তাঁর গলায় ছিল নিজের শহরে ফেরার উচ্ছ্বাস । মাঠে ওর প্রাঞ্জল উপস্থিতি ফুটবলের সৌন্দর্য বাড়ায় । কুশলী ফুটবলাররা তাঁদের ফুটবল নৈপুন্য সুন্দরভাবে মেলে ধরার সুযোগ পান । প্লে অ্যাক্টিংয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা ফুটবলাররা ওকে সমঝে চলেন ।
প্রাঞ্জল ব্যানার্জি,বর্তমান ভারতীয় ফুটবলে ভালো রেফারিং-এর শেষ কথা । আগরপাড়ার ছেলে । এতদিন চাকরিসূত্রে শিলিগুড়িতে ছিলেন । ময়দান থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণার সঙ্গে আপস করলেও প্রাঞ্জল ব্যানার্জি তাঁর রেফারিং নিয়ে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া ।
ভালো ফুটবলের জন্য ভালো রেফারিং জরুরি । সঠিক ম্যাচ পরিচালনা ফুটবলের সৌন্দর্য বাড়ায় । ম্যাচ পরিচালনা করা ফুটবলার এবং দর্শকদের কাছ থেকে আদায় করে নেন সম্ভ্রম । তবুও রেফারিরা থেকে যান নেপথ্যে । প্রতুল চক্রবর্তী, রবি চক্রবর্তী, মিলন দত্ত, নৃসিংহ চট্টোপাধ্যায়, সুদীন চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ নাগ, হাকিমদের মত কিংবদন্তি রেফারিদের নাম তাই স্মৃতির আড়ালে । বাংলার ফুটবলের ভালোমানের রেফারিদের ব্যাটন এই মুহূর্তে বয়ে চলেছেন প্রাঞ্জল ব্যানার্জি । একটা চাকরির জন্য কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে । সুঠাম চেহারা , দীর্ঘদেহী , উজ্জ্বল বর্ণের বছর 34-এর MBA পাশ করা তরুণ ভারতের সেরা রেফারি ।
ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে খেল সম্মানে সেরার স্বীকৃতি দিয়েছেন । তারপর ? প্রাপ্তি শুধুই আশ্বাস । অথচ কলকাতা শহরে থেকে ম্যাচ পরিচালনার কাজটি আরও সুষ্ঠু এবং শান্ত মনে করতে প্রাঞ্জল একটা চাকরি চেয়েছিলেন। রেফারিদের সরকারি চাকরির অতীত রেকর্ড রয়েছে । অথচ প্রাঞ্জল নবান্ন থেকে ক্রীড়াদপ্তরে হত্যে দিয়েও চাকরি পাননি । ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্লা ঐকান্তিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি । শেষ পর্যন্ত একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি হল । তবে তার জন্য প্রাঞ্জলকে শিলিগুড়ি যেতে হয়েছিল । কলকাতা লিগে নতুনভাবে শুরু করার স্টান্স নিচ্ছেন । কিন্তু শিলিগুড়িকে ভুলছেন না । একদিকে সংসারের চাপ অন্যদিকে ফিফার এলিট প্যানেলে পৌছানো লক্ষ্য । দুয়ের মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেকারত্ব ।
"আমার সামনে আর কোনও পথ খোলা ছিল না । নতুন বিয়ে করা বউকে নিয়ে কিছুটা অনন্যোপায় হয়েই কলকাতা ছেড়েছিলাম । বছর দেড়েক ওখানে ছিলাম । কলকাতা মাঠে নিয়মিত খেলানোর সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ তো ছিল । শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং অফিস সাহায্য করেছে । পাশে দাঁড়িয়েছে । এভাবেই ছিলাম । ওদের সাহায্য কোনওদিন ভুলতে পারব না", বলছিলেন প্রাঞ্জল । কলকাতা ছাড়ার কথা কখনও ভাবেননি । লক্ষীরতন শুক্লার চেষ্টার কথা বারবার বলছিলেন ।
বলেন, "নিজেকে ম্যাচ ফিট রাখতে শিলিগুড়িতে স্থানীয় লিগ, টুর্নামেন্ট খেলিয়েছি । এর পাশাপাশি আই লিগ, ISL-র ম্যাচ খেলিয়েছি । FIFA রেফারি হওয়ায় আমি 14 থেকে 15টি ম্যাচ পাই । এভাবেই স্বপ্নপূরণের চেষ্টা বাঁচিয়ে রেখেছিলাম । এবার অফিস সামলে নতুনভাবে নামতে পারব ৷"
শংকরের মত বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলানোর স্বপ্ন ।ইতিমধ্যে চারটি ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার খেলিয়েছেন । স্মরণীয় ম্যাচ বলতে ইরান বনাম কম্বোডিয়ার ম্যাচ । আপাতত এশিয়ান কাপের ম্যাচ খেলানোকে পাখির চোখ করছেন প্রাঞ্জল । নিয়ম অনুসারে আরও 11 বছর খেলাতে পারবেন । 45-এর পর আর মাঠে নামতে পারেন না রেফারিরা । প্রাঞ্জল বলছেন, 45-এর পর রেফারিদের চলবে কী করে । কোনও চাকুরির সুযোগ নেই ।
2005 সালে IFA-র রেফারি অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন প্রাঞ্জল । ওই ব্যাচে তার থেকেও ভালো মানের রেফারি থাকলেও প্রতিষ্ঠা পাননি । কারণ আর্থিক নিরাপত্তার অভাব । তাই প্রাঞ্জল ফেডারেশন, IFA-র কাছে বিষয়টি ভেবে দেখার এবং পরিকল্পনা করার আবেদন করতে চান । একইভাবে জাপানের আদলে রেফারিং-এর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সওয়াল করছেন । তবে তাঁর প্রশ্ন, ফুটবলাররা সরকারি চাকরি পেলেও রেফারিরা কেন বঞ্চিত হবেন । অনেক ফুটবলার আছেন যাঁরা ন্যূনতম ফুটবল না খেলেও চাকরি পেয়েছেন । অথচ রেফারিদের জন্য শুধুই শুকনো সম্ভ্রম ।
লকডাউনের বাজারে ঘরবন্দী অবস্থায় থাকলেও ফিটনেস বজায় রাখার জন্য এক্সারসাইজ় করেছেন । আজও ম্যাচ পরিচালনায় কিছু ভুল করলে প্রাক্তন রেফারি প্রদীপ নাগকে ফোন করেন । স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে লকডাউনেও অক্লান্ত প্রাঞ্জল ব্যানার্জি নতুন অক্সিজেন নিয়ে কলকাতা ময়দানে ফিরে এলেন ।