কলকাতা, 16 মে : বদলে যাওয়া কলকাতা ময়দানে এখন পরিবর্তনের ঢেউ । যেখানে আবেগ ভাঙিয়ে কর্মকর্তাদের অপেশাদারী পরিকাঠামোয় ক্লাব চালানোর দিন শেষ । ইস্টবেঙ্গল বর্তমান ক্লাব কর্তারা বিষয়টি বুঝতে পারলেও নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে আপ্রাণ লড়াই চালাচ্ছেন । চুড়ান্ত চুক্তি নিয়ে লকডাউনের ময়দান এখন সরগরম । গতবছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে আইএসএলে খেলার কড়ি জুগিয়েছিল বাঙ্গুর গোষ্ঠী । যা ছিল বিনিয়োগের অভাবে মরুভূমি হতে চলা কলকাতা ময়দানের মরুদ্যান । কারণ কলকাতা ময়দানে ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান ছাড়া বাকি ক্লাবগুলো বছর যাপন করে কিছু আবেগ সর্বস্ব মানুষের পাগলামিতে ভর করে । তাঁদের আবেগ কুর্নিশ যোগ্য । কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে অন্তসারশূন্য ।
বাঙ্গুর গোষ্ঠীর চুড়ান্ত চুক্তিপত্র যদি স্বাক্ষর না হয় তাহলে ময়দানে বিনিয়োগ নিয়ে আসার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ মাঠে মারা যাবে। বঙ্গে বিনিয়োগ এমনিতেই বাড়ন্ত । এই অবস্থায় বাঙ্গুর গোষ্ঠী চলে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে শিল্পপতিদের জন্য ফের ভুল বার্তা যাবে । যার দায় পড়বে ইস্টবেঙ্গলের কর্তাদের উপর । এই বিষয়টি লাল হলুদ কর্তারা বুঝতে পারছেন । তাই প্যানডেমিক সামলাতে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রয়োজনীয় বৈঠক না করতে পেরে ক্রীড়ামন্ত্রী, কলকাতার মহানাগরিকের মাধ্যমে একটা চেষ্টা করছেন । তবে এই পরিস্থিতিতে তার বাস্তবায়ন কঠিন ।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে মোহনবাগান বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে । একটু তলিয়ে দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে । মোহনবাগানে গত দেড়দশকের বেশি সময় ধরে অলিখিত স্পনসর বসু পরিবার । প্রেসিডেন্ট টুটু বসু, প্রয়াত সচিব অঞ্জন মিত্র, অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত এবং বর্তমান সচিব সৃঞ্জয় বসু ক্লাব চালিয়েছেন । রসায়নে বলা হয় কার্বনের চারটে হাত । সবুজ মেরুন ক্লাব প্রশাসনে এই চার হাতই ছিল চালিকাশক্তি । টুটু বসু এবং প্রয়াত অঞ্জন মিত্রের বন্ধুত্ব এবং দেবাশিস দত্ত, সৃঞ্জয় বসুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল মোহনবাগানে কোনও দিন আর্থিক কষ্ট আসতে দেয়নি । আপাত হিসাব করলে দেখা যাবে টুটু বসু, সৃঞ্জয় বসুরা শুধু নিজেদের আবেগে লগ্নি করে প্রায় দেড়শো কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছেন । কিন্তু ভুললে চলবে না, দিনের শেষে তাঁরা ব্যবসাদার । আইএসএলে অংশগ্রহণ ভবিতব্য বুঝতে পেরে পয়লা সুযোগে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন টুটু বসুরা । ফুটবলের ৮০ শতাংশ স্বত্ত্ব তুলে দিয়ে বার্ষিক আর্থিক দায় ঝেড়ে ফেলেছেন । মোহনবাগানে বাকি খেলা নিয়ে যা রয়েছে তা খাতায় কলমে, কার্যকরী কমিটির সদস্য সংখ্যা ভরাতে । তাই ফুটবলের দায় হস্তান্তর করে এবং বাকি অংশ নিজেদের হাতে রেখে ময়দান ঘিরে নিজেদের আবেগের সঙ্গে বাস্তোবচিত সমঝোতা করেছেন সবুজ মেরুনের সাবেক কর্তারা । তাই তাঁরা এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড অব ডিরেক্টরে রয়েছেন শুধুই প্রতিনিধি হয়ে ।
এই বাস্তব ছবিটি মানতে পারছেন না ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা। তারা বিজয় মালিয়ার পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ নামক পেশাদারিত্বের আঁচে যতবার হাত পুড়িয়েছেন ততবারই চরম অস্বস্তি নিয়ে ছিটকে বেরিয়ে এসেছেন । কোয়েস কর্তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার সাতদিনের মধ্যে অস্বস্তি টের পেয়েছেন । তাই কোচ আলেয়ান্দ্রোর মাঝমরসুম থেকে দায়িত্ব নিয়ে সাফল্য পাওয়া সেই অস্বস্তি চাপতে কর্তাদের বাধ্য করেছিল । দ্বিতীয় মরসুমে বিনিয়োগ সংস্থা কোয়েসের অর্থকরী বিপর্যয় এবং দলের খারাপ পারফরম্যান্স ইস্টবেঙ্গলের সাবেক কর্তাদের বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে সাহায্য করেছিল । এই অবস্থায় লাল হলুদ কর্তারা শ্বাস নিতে পারতেন । কিন্তু মোহনবাগানের আইএসএলে এটিকের হাত ধরে যোগদান চাপে ফেলে দেয় । চাপ আরও বাড়ে করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনে।
আরও পড়ুন : কিছুটা স্বস্তি, পরপর দু’দিন নামল করোনা আক্রান্তের গ্রাফ
বাঙ্গুর গোষ্ঠী দেশের প্রথম পাঁচ অগ্রণী শিল্প গোষ্ঠীর অন্যতম । বাংলায় তারা ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে প্রসারিত হতে চাইছে । মুখ্যমন্ত্রী তাদের ভরসার স্থল । ইস্টবেঙ্গলের সদস্যদের স্বার্থ স্বাধীনতা রক্ষা করে আর্ন্তজাতিক মানে উত্তরণ তাদের পাখির চোখ । তাই চুক্তি অনুসারে ক্লাবের উন্নয়ন চাইছে । সার্বিক স্পোর্টিং রাইটসে পেশাদারি ছাপ ফেলতে চায় বাঙ্গুর গোষ্ঠী । যা রূপায়ণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন লাল হলুদের কর্তারা । তাঁরা পড়ে রয়েছেন সাতের দশকের মানসিকতায় । প্রশ্ন করলে বিষয়টি আইনজীবীরা দেখছেন বলছেন । আটমাস ধরে যে আইনজীবী মউ এবং চুড়ান্ত চুক্তির প্রভেদ খুঁজে পান না তাঁদের কেন লাল হলুদ কর্তারা কুলোর বাতাস দিচ্ছেন না তা অবিশ্বাস্য। এই ‘অজুহাতের রাজনীতি’ যা ক্লাবকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে । হয়তো আরও বড় অন্ধকারে ঠেলে দেবে । তাই আবেগ ছেড়ে পেশাদারিত্ব আঁকড়ে ধরলে মুক্তি ইস্টবেঙ্গলের । এই বিষয়ে মোহনবাগানের সাবেক কর্তাদের ব্যবসায়ী মানসিকতা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন । না হলে শুধু ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ডুববে না অসম্মানিত হবে মুখ্যমন্ত্রীর বিনিয়োগ টানার প্রয়াস । যা তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে চাইবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।