কলকাতা, ৯ মার্চ : ওপার বাংলা থেকে কলকাতায় খেলতে আসা মানুষটি জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত ছিলেন মোহনবাগানের। ক্লাবের সম্মান বৃদ্ধি, লাভ নিয়ে লড়ে গিয়েছিলেন শেষদিন পর্যন্ত। ইচ্ছে ছিল মোহনবাগানে গড়া হবে মিউজ়িয়াম। যেখানে সবুজ মেরুন যোদ্ধারা তাঁদের জীবনের স্মারক দিয়ে সাজিয়ে দেবেন। সেই ভাবনা থেকেই মোহনবাগানে খেলে পাওয়া যাবতীয় সম্মান ১৯৯২ সালে তদানীন্তন ক্লাব প্রশাসকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন গোষ্ঠ পালের পরিবারের সদস্যরা। স্মারকগুলোকে সম্মানের সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অঞ্জন মিত্র, টুটু বসুরা। আশ্বাস পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন গোষ্ঠবাবুর পরিবারের সদস্যরা। পুত্র নীরাংশু পাল বাবার শেষ ইচ্ছা মর্যাদা পাবে দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। প্রতিবার গোষ্ঠ পালের জন্মদিনে ময়দানে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিতে মালা দিয়ে বলতেন সেই স্বপ্নপূরণ করার উদ্যোগের কথা। শুকনো আশ্বাসে ফের আশায় বুক বাঁধতেন।
২০০৪ সালে মোহনবাগান রত্ন দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত গোষ্ঠ পালকে। আশায় বুক ভরেছিল পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু আশ্বাস ও বাস্তবায়নের মধ্যে যে আসমান-জমিন ফারাক। উপলব্ধিটা হতেই বাবার সম্মান স্মারক ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেন নীরাংশুবাবু। আর তখনই হাটে হাঁড়ি ভাঙে। বিদায়ি সচিব অঞ্জন মিত্র, বর্তমান প্রশাসনের সহসচিব সৃঞ্জয় বসু সকলেই বলেছিলেন ফিরিয়ে দেওয়া হবে গোষ্ঠ পালের সম্মান স্মারক। সেইমতো আজ দুপুরে গোষ্ঠবাবুর পুত্র ও নাতিকে ক্লাবে আসতে বলা হয়। সুষ্ঠভাবে কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদায়ি কর্মসমিতির সদস্য স্বাধীন মল্লিককে। আলমারির কোনায় অবহেলায় তুলে রাখা স্মারক তুলে দেওয়া হয় নীরাংশু পালের হাতে।
ফিরে তো পেলেন। কিন্তু সব স্মারক ঠিক আছে তো? ব্যাগ খুলতেই ভুল ভাঙল। পদ্মশ্রী পুরস্কারের পদকটা নেই। নেই মোহনবাগানের আদি প্রতীকের স্মারকটিও। যা আদতে দেওয়া হয়েছিল ১৯১১ সালের IFA শিল্ডজয়ী দলের সদস্যদের। একটি স্মারক ব্যাজ অতিরিক্ত ছিল। তা গোষ্ঠবাবুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন ক্লাবকর্তারা। আদায় করেছিলেন ক্লাব ছেড়ে না চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি। ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান স্মারকের খোঁজ নেই দেখে কার্যত ভেঙে পড়েছেন পুত্র নীরাংশু পাল। নাতি ফুঁসছেন রাগে। দেখা নেই আরও অনেক সম্মান স্মারকের। পুরো কর্মকাণ্ডটি যখন ঘটছে তখন বর্তমান ক্লাব প্রশাসনের কেউ ছিলেন না। না পাওয়া স্মারকের তালিকা ও অভিযোগ ক্লাবের কাছে সরকারিভাবে জমা দিয়েছেন নীরাংশু পাল। কিন্তু তা কবে পাওয়া যাবে কেউ জানে না। আশঙ্কায় চোখ ছলছল চাইনিজ় ওয়ালের উত্তরাধিকারীদের। গোষ্ঠ পাল যেন 'সম্মান' ফিরে পেলেন।