কলকাতা, 2 জানুয়ারি : থামলেন নৌছনপুর এক্সপ্রেস । সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা ৷ আজ বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি ৷ দীর্ঘ সময় বাংলার হয়ে হাত ঘোরানো দিন্দা যদিও শেষ বেলায় গোয়ার জার্সি গায়ে তুলেছিলেন । জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন 13টি একদিনের ম্যাচ ৷
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য তার বাংলা দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন । আইপিএলে অর্ন্তভুক্তির কারণও ছিলেন সৌরভ । তাই চিরদিনের মতো 22 গজকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন ৷ 36 বছরের এই ক্রিকেটার বললেন, ক্রিকেটজীবনে উত্তরণের প্রতিটি পদক্ষেপে সৌরভের সাহায্য তাঁকে কীভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল ৷ পাশাপাশি রণদেব বসুকে সেরা সতীর্থ বলেছেন তিনি ৷ এসেছে ছোটবেলার কোচের সার্বিক সাহায্যের কথা ।
মেদিনীপুর জেলার নৌছনপুর থেকে জাতীয় ক্রিকেটের রাজপথ ৷ বাংলার ক্রিকেটার অশোক দিন্দার এই স্বপ্নের উত্তরণ তাঁকে আলোচনায় তুলে নিয়ে এসেছিল । বল হাতে আগুনে গতির কারণে অশোক দিন্দা ছিলেন অধিনায়কের আস্থা, প্রতিপক্ষের চিন্তা । তাই নিয়মিত সেরা বোলারের পুরস্কার হাতে ওঠা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল । তবে গত একবছর ধরে অশোক দিন্দা এবং বাংলা দলের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট দুই প্রান্তে অবস্থান করছিলেন । দূরত্ব বেড়েছিল বাংলার বর্তমান কোচ অরুণ লালের সঙ্গে । বোলিং কোচ এবং একদা সতীর্থ রণদেব বসুর সঙ্গে তিক্ততা বিচ্ছেদের পথ প্রশস্ত করেছিল । ক্ষুব্ধ দিন্দা বাংলা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন গোয়া । কিন্তু মন বসেনি ।
আরও পড়ুন : অভিষেক থেকে 'সেঞ্চুরি' টেস্ট, জো রুটের ভারত-যোগ
চেনা অশোক দিন্দা কার্যত বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছিলেন । চলতি মরসুমে মুস্তাক আলি ট্রফিতে খেলতে নামলেও বুঝতে পেরেছিলেন চেনা ছন্দে ফেরা অসম্ভব । তাই স্ত্রী, সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া, যুগ্ম সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এবং দেবব্রত দাসকে নিয়ে সরে দাঁড়ানোর কথা জানালেন তিনি । বিদায় বেলায় কোনও তিক্ততাকে স্থান দিতে চাননি । তবে দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে নতুন বলের সতীর্থ হিসেবে রণদেব বসুর নাম করেছেন । বললেন, "শামির সঙ্গে 12টি ম্যাচ খেলেছি । পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে রণদেবের সঙ্গেই বেশি ম্যাচ খেলেছি । তাই সেরা পার্টনার হিসেবে রণদেবের কোনও বিকল্প নেই ৷" জাতীয় দলের জার্সিতে 13টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন দিন্দা ৷ নিয়েছেন 12টি উইকেট ৷ 2009 সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-20 ফরম্যাটে অভিষেক হয় তাঁর ৷ দেশের হয়ে 9টি টি-20 ম্যাচ খেলে 17টি উইকেট পেয়েছেন ৷ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন 115টি ৷
আরও পড়ুন : করোনা মহামারির জের, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল অস্ট্রেলিয়ার
অশোক দিন্দার মত ক্রিকেট চরিত্রকে কাজে লাগাতে আগ্রহী সিএবি । চ্যালেঞ্জ ক্রিকেট প্রজেক্টে দিন্দাকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া । তুলে দেন সম্মান স্মারক । ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর দিনে শেষবারের মত সাজঘরে প্রবেশ করেন অশোক দিন্দা । স্ত্রীকে ঘুরিয়ে দেখান ড্রেসিংরুম । বসেন নিজের পছন্দের চেয়ারে । নৌছনপুর থেকে যাত্রা শুরু করা অশোক দিন্দা এরপর গাড়ি করে বেরিয়ে যান । পিছনে ফেলে গেলেন অসাধারণ পারফরম্যান্সের সোনালি বিকেল, বিতর্কের অস্বস্তি । বলা যায় বঙ্গ ক্রিকেটে শেষ হল একটি চরিত্র ।