বর্ধমান, 11 নভেম্বর: দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক শিশুকে স্থানান্তরিত করার ঘটনায় হয়রানির শিকার শিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা ৷ অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে রেফার করা হলেও, কলকাতার তিন হাসপাতাল ঘুরেও বেড পাওয়া যায়নি ৷ পরে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে ৷ কিন্তু, সেখানেও বেড পেতে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের ৷
এই ভাবে প্রায় 24 ঘণ্টা কেটে গেলেও শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়নি বলে জানা গিয়েছে ৷ যদিও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে শিশুটির মাথায় চোট থাকায় তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, হাসপাতালে ভরতি করাতে বলা হলে, পরিবারের লোকজন রাজি হননি ৷ তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে ৷ ফলে শিশুটিকে স্থানান্তরিত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ৷
ঘটনাটা কী ঘটেছে ?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছরের শিশুটির বাড়ি বাঁকুড়াতে ৷ দুর্ঘটনার জেরে শিশুটি মাথায় চোট পায় ৷ রবিবার দুপুর নাগাদ চিকিৎসার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শিশুটিকে নিয়ে আসা হয় ৷ সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে সিটি স্ক্যান লিখে দেন ৷ সঙ্গে আরও বেশ কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয় ৷
এই বিতর্কে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি চিকিৎসক তাপস ঘোষ বলেন, "মাথায় আঘাত লেগেছে শিশুটির ৷ গতকাল দুপুর নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে ৷ তাকে ইমারজেন্সিতে চিকিৎসা করার পরে, সিটি স্ক্যান-সহ বেশ কিছু পরীক্ষা করতে বলা হয় ৷ সিটি স্ক্যান রিপোর্টে দেখা যায়, তার মাথায় ইনজুরি আছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘শিশুটিকে এখানেই ভর্তি রেখে চিকিৎসা করতে বলা হয় ৷ যে চিকিৎসকরা শিশুটিকে চিকিৎসা করছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে শুনলাম, ওই রোগীর বাড়ির লোকেরা জানিয়েছে তাঁরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান না ৷ সেই মতো তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে চলে যান ৷ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে শিশুটি ভর্তি হয়নি ৷ তাহলে তো রেফার করার প্রশ্নই ওঠে না ৷"
যদিও, রোগীর পরিবার অন্য কথা বলছে ৷ তাঁদের অভিযোগ, শিশুটিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে সিটি স্ক্যান করা হয় ৷ কিন্তু, আর কোনও চিকিৎসা হয়নি ৷ এরপর কলকাতার তিনটি হাসপাতালে ঘুরলেও, কোথাও বেড পাওয়া যায়নি ৷ যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷ রাজনৈতিক দলগুলির দাবি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ৷ সেটা এই শিশুকে রেফারের ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ৷
কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন, "বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ-সহ রাজ্যের বেশ কিছু মেডিক্যাল আছে ৷ শুধুমাত্র সুপার স্পেশালিটি, মাল্টি স্পেশালিটি-সহ একাধিক গালভরা নামকরণ করা হয়েছে ৷ কিন্তু, সেখানে কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না ৷ তা না-হলে তিন বছরের একটা শিশুকে কেন এখানে চিকিৎসা না-করিয়ে কলকাতায় রেফার করা হবে ? কেন এখানে চিকিৎসা হবে না ? কেন সে বেড পাবে না ? এখান থেকেই স্পষ্ট রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে ৷"
রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, "বর্ধমান হাসপাতাল থেকে রেফার করার পরে কেন সে কলকাতায় বেড পেল না, সেটা স্বাস্থ্য দফতরের দেখা উচিত ৷ তবে, এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা ভালো না-হলে বিহার, ঝাড়খণ্ড, অসম, ত্রিপুরা-সহ ভিনরাজ্য থেকে রোগীরা কেন চিকিৎসা করতে আসছেন ? রেফারের বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর নিশ্চয়ই দেখবে ৷"
এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি কোনও হাসপাতালের নাম না-নিয়েই বলেন, "এই বিষয় নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন ৷ আমি দেখেছি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীকে রেফার করে দেওয়া হয় ৷ তাকে তিন চারটে হাসপাতালে ঘুরতে হয়, কারণ বেড নেই ৷ আমার মনে হয়, এই বিষয়টা বন্ধ হওয়া উচিত ৷ আমি স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়েও বলেছি ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে যে পোর্টাল চালু হতে চলেছে, তার সাহায্যে আগামিদিনে আপনারা জানতে পারবেন কোথায় বেড আছে ৷ আমার মনে হয়, এর ফলে সাধারণের হয়রানি অনেক কম হবে ৷"
এর প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অধ্যক্ষ ৷ তিনি বলেন, "হাসপাতালের নাম লিখে রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ আদতে সেখানে বেড আছে কিনা, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না ৷ বিষয়টা দুঃখজনক ! এমন ঘটনা হওয়া কাম্য নয় ৷"