কলকাতা: ওয়ার্কিং ভিসায় ভারতে এসেছিলেন ছবির শুটিংয়ে। কিন্তু, এর ফাঁকেই রাজনৈতিক দলের প্রচারে যোগ দেন অভিনেতা ফিরদৌস আহমেদ। সেই অভিযোগে ইতিমধ্যে দেশ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ফের এমন অভিযোগ উঠল রানি রাসমনি ধারাবাহিক খ্যাত বাংলাদেশি অভিনেতা গাজ়ি আবদুন নুরের বিরুদ্ধে।
গতকাল ফিরদৌসের ঘটনার পর অভিযোগ তোলা হয়, গাজ়ি আবদুন নুর তৃণমূল নেতা মদন মিত্রর হয়ে প্রচারে গেছেন দক্ষিণেশ্বরে। এই অভিযোগ সামনে আসতেই গাজ়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে ETV Bharat-এর প্রতিনিধি। তিনি বলেন, "মদনদার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। কারণ, আমার মা এসেছিলেন কলকাতায় ঘুরতে। সেই সময় আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তখন আউটডোর শুটিংয়ে ছিলাম। মদনদা দাঁড়িয়ে থেকে মাকে ভরতি করিয়েছিল। সেই থেকে তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রয়েছে। একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।"
২০১১ সালে থিয়েটার করতে প্রথম ভারতে আসেন গাজ়ি। গতবছর রবীন্দ্রভারতী থেকে মাস্টারস শেষ করেছেন সাংবাদিকতায়। ধারাবাহিক রানি রাসমনি করতে গিয়ে একাধিকবার দক্ষিণেশ্বর গেছেন। সেই সূত্রে দক্ষিণেশ্বর-বেলুড় তাঁর প্রিয় জায়গা। তাঁর কথায়, "যেহেতু আমি বাবু রাজচন্দ্রে মতো একটা চরিত্র করেছি, যেহেতু মানুষটির সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে থাকা, তাই সেদিন আমি দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছিলাম।...এবার সেদিন মদনদার সঙ্গে দেখা হল, তো মদনদা বলল দক্ষিণশ্বর যাচ্ছি একটা অনুষ্ঠান আছে। তো আমি বললাম আমিও আজ দক্ষিনশ্বর যেতে চাই, রাজচন্দ্রর চরিত্রটা মারা গেছে মন ভালো নেই। এবার দক্ষিণশ্বরে গেলে আমি বাউন্সার নিতে পারি না। স্বাভাবিকভাবে আমি সেইভাবে চলা ফেরা করতে পারি না। তো আমাকে দক্ষিণেশ্বরে রেখে মদনদা চলে যায়। তো বেরিয়ে মদনদাকে ফোন করতে ও বলল আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি চলে আয়। আমি গিয়ে দেখলাম এটা নির্বাচনী প্রচার চলছে।"
গাজ়ি আরও বলেন, "আমি মদনদাকে বললাম আমার এখানে থাকা উচিত হবে না। কারণ, আমাদের নির্বাচনী প্রচারে থাকতে না করা হয়েছে। তো মদনদা বলল ঠিক আছে আমি তোকে ছেড়ে দেব, তুই আমার সঙ্গে গাড়িতে থাক। এবার ওই সময় এত লোকের মাঝে বাউন্সার ছাড়া আমি বেরিয়ে আসতে পারি না। আর যদি আমি তৃণমূলের প্রচারে যেতাম তাহলে তৃণমূলের ব্যাচ লাগাতাম বা গলায় উত্তরীয় পরতাম। যদি আমাকে প্রচারের জন্যই নিয়ে যাওয়া হত তাহলে আমাকে দিয়ে কথা বলাল না কেন।...আমি তো সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারি না। ওই মুহূর্ততে কীভাবে আমি মদনদার কাছ থেকে বেরিয়ে যাই। এমনকী সৌগত রায়ের সঙ্গে দেখাই হয়নি। আমি ওনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। ওটা ছিল তৃণমূলের প্রচার। আমার যদি ভুল হয়ে থাকে যে আমি ওই সময় আমার ওখানে থেকে যাওয়াটা। সেটা আমি মানছি।"
গাজ়ির দাবি তিনি জানতে না ওখানে নির্বাচনী প্রচার চলছে। পাশাপাশি গাজ়ি মেনে নেন যে এইভাবে বিদেশী নাগরিক হয়ে কোনও দলের সঙ্গে প্রচারে যাওয়ায় ভুল বার্তা যাচ্ছে। এবং সেটা নিয়ে আগে সাবধান হওয়া উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন,"বাংলাদেশে আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করি না। আজ আমরা এখানে কাজ করি, এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। এই বিষয় আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।"
যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে কী করবেন গাজ়ি ? তিনি বলেন, "ভারত সরকারের সমস্ত আইনের প্রতি আমি সম্মান জানাই। নিজের সাফাই গাইব না। আমি ভুল করেছি, আমার ওখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। কিন্তু, পরিস্থিতি তেমনটা ছিল না।"
তবে ফিরদৌস বা গাজ়ি শুধু নয়, বাংলাদেশের এক অভিনেত্রীর বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আছে যে তিনি শিলিগুড়িতে এক নির্বাচনী প্রচার সভায় উপস্থিত ছিলেন। যদিও সভায় তিনি কোনও বক্তব্য রাখেননি।