ট্রেজ়ার হান্ট। কেমন যেন হলিউড হলিউড গন্ধ আসে নামটা থেকে। বাংলায় যেটাকে আমরা বলি গুপ্তধনের সন্ধানে। গতবছর ঠিক গরমের ছুটিতে এই গুপ্তধনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জি। আপামর বাঙালি দর্শকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সোনাদা, ঝিনুক ও আবিরের। চলতি বছরের গরমের ছুটিতেই ফিরলেন ধ্রুব। সঙ্গে সেই ফিল এই ট্রায়োও। এবারের ছবিতে আরও জোরালো রহস্য। আরও ধাঁধা। আর বড় গুপ্তধন!
এবারের প্রেক্ষাপট ১৭৫৭ সাল। ইতিহাসের একটা চেনা সাল। কেন বলুন তো ? ঠিক ধরছেন, পলাশীর যুদ্ধের সাল। সেই সালকে ঘিরেই এবারের গুপ্তধনের গল্প বেঁধেছেন ধ্রুব। জায়গার নাম দুর্গেশগড়। সেখানেই লুকিয়ে আছে নবাবি সম্পত্তি। দুর্গাপুজো ও বাঙালিয়ানাকে ভরপুর দেখিয়েছেন ছবিতে। বলা যেতে পারে দুর্গাপুজোর আড়ালেই গুপ্তধনের রহস্য সমাধন হয়েছে ছবিতে। কিভাবে দুর্গা ঠাকুরের মূর্তি আড়ালে লুকিয়ে আছে গুপ্তধন তার হদিশ দিল সোনাদা। এবার তাঁরা আরও বেশি জোরালো ভঙ্গিতে সন্ধান করলেন গুপ্তধনের। আবির, অর্জুন এবং ইশাকে আরও ভালো লেগেছে এই ছবিতে।
ছবির শুরুটা পরিচালক খুব সুন্দরভাবে অ্যানিমেশন মারফত ফুটিয়ে তুলেছেন বড় পরদায়। সেখানে মুর্শিদাবাদের তথা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যা রহস্য, পলাশীর যুদ্ধ, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নবাব বিরোধিতা ও কীভাবে বাংলার বিপুল ধনসম্পত্তি দুর্গেশগড়ের লুকায়িত থাকে তা এক অনন্য কায়দায় দেখা মেলে অ্যানিমেশনে। বোঝাই যায় পরিচালক তার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকে অ্যানিমেটর হিসেবে বেশ সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
ছবিতে উল্লেখযোগ্য দুটি চরিত্রে রয়েছেন খরাজ মুখোপাধ্যায় এবং কৌশিক সেন। এই দুটি চরিত্র নিয়ে পরিচালক অনেক খেল দেখিয়েছেন। সেটা বলে দিলে ছবি দেখার আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে। অনেক রিসার্চওয়ার্ক আছে ছবিকে ঘিরে।
বাংলাকে খুঁজে পাওয়া আছে। বাংলার ঐতিহ্য বাংলার সংস্কৃতি থেকে যেভাবে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন পরিচালক। একজন পরিচালকের সমাজের প্রতি যা দায়বদ্ধতা, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন পরিচালক ধ্রুব। সেটা ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
যদিও কিছু কিছু জায়গায় ফাঁক থেকে গেছে। বিশেষ করে আবির, অর্থাৎ অর্জুন যখন জলে ঝাঁপ দেয় এবং জলের ভিতরকার অংশ দেখানো হয়, সেখানে কিছু অসংলগ্নতা ধরা পড়েছে। যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে না। এছাড়া 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' ট্রেজ়ার হান্ট হিসেবে ভাল প্রয়াস। আগামীদিনে সোনাদা ফ্রাঞ্চাইজি আরও হিসেবে সুনাম অর্জন করবে, তা আশা করা যায়।
গরমের ছুটি পড়ে গেছে। বাড়ির ছোট্ট থেকে নিয়ে যদি কোনও সিনেমা দেখার প্ল্যান করে থাকেন, তাহলে চলে যেতে পারেন 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' দেখতে। ছোটা ভীম, অ্যাভেঞ্জার্স, সুপারম্যানদের ভিড় ঠেলে এই ছবি ছোটদের মনে জায়গা করে নেবে। সেইসঙ্গে বড়রাও উপভোগ করবেন রহস্যে রোমাঞ্চে ভরা গুপ্তধনের নব সন্ধানকেও।