কলকাতা : টলিউডের অনেকেই যুক্ত হয়েছিলেন বিজেপি গোষ্ঠীর সঙ্গে । ভেসেছিলেন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিতে । তবে এখন বিজেপির কার্যকলাপে বিরক্ত অনেকেই । টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়ও সেই অনেকের মধ্যে একজন । সাম্প্রতিক সামাজিক অবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ অভিনেত্রী অনেকটা তিক্ততা নিয়ে বিজেপির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন ।
সাম্প্রদায়িক হিংসা, বিদ্বেষের ঘটনা এখন আমাদের দেশে প্রতিদিনের ঘটনা । মোদিজির সরকার মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে । এই সব নিয়ে অনেকদিন ধরেই একটা রাগ তৈরি হচ্ছিল সুভদ্রার । অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন তিনি ।
সুভদ্রা আমাদের জানিয়েছেন, "আমি ভেবেছিলাম দেশের উন্নতি হবে, দশের ভালো হবে । ভেবেছিলাম মানুষকে মানুষের সম্মান দেওয়া হবে, সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল আমার কাছে । তবে সেই জায়গাটারই ভীষণ অভাব দেখছি এখন । এখানে যে যার মত পন্থী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এখন দিল্লিতে ঘটছে, ভোটের আগে কলকাতাতেও একই জিনিস হবে । এখানে আমরা কেউ ছাড় পাব না । এটা খালি নামেই হিন্দু-মুসলমান । এই করে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে । আজ ওই মুসলমান ভদ্রলোক বলে দিলেন, দেশের ১৫ কোটি মুসলমান লড়ে যাবে হিন্দুদের সঙ্গে । কাল হিন্দু বলবে আমরা লড়ে যাব মুসলমানদের সঙ্গে । আমরা তো এটা করতে আসিনি । অন্তত আমি তো করতে আসিইনি । তিনদিন ধরে দিল্লিতে সমস্যা চলছে । তিনদিন ধরে কেউ কিছু করছে না । হঠাৎ করে তিনদিন পর থামানো হচ্ছে । ঠিক এরকমটাই আমেদাবাদে হয়েছিল..."
সুভদ্রা আরও বললেন, "তাহলে কি প্রত্যেকটা জায়গাতে এরকমভাবে আগুন জ্বলতে থাকবে ? এটা কি কোনও রেমিডি ? বিষয়টা এরকম, আমি একটা অসুখ বাধিয়ে দিলাম, তারপরে এসে আমি ডাক্তারি করলাম এবং প্রমাণ করলাম যে আমি ভালো ডাক্তার । আমার এইরকম অসুখের মধ্যে থাকার দরকার নেই । আমি একজন সাধারন মানুষ । মানুষের জন্যই কাজ করতে চাই । আমার কোনও পদ, কোনও তকমার প্রয়োজন নেই । আমার প্রশ্ন আমি কাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলাম ? যাদের সঙ্গে আমার কোনও মানসিক মিলই নেই । দিল্লিতে ৯ মাসের একটা বাচ্চাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দিয়েছে । যেই পুড়িয়ে থাকুক, যারাই পুড়িয়ে থাকুক, তারা তো মানুষ ।"
এসব ভেবেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুভদ্রা । বললেন, "আমি এই পরিস্থিতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না । আমারই ট্রমাটাই কাটছে না । কোনওরকম দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছি না এই মুহূর্তে । আমার মত অনেকেই বিতশ্রদ্ধ, অনেকেই বলছিলেন বেরিয়ে আসবেন । কিন্তু তাদের আমি নাম আমি বলতে চাই না । আমার কোনও ভয় নেই, কোনও তকমার দরকার নেই বলে আমি ছেড়ে দিয়েছি । একটা কিছু পরিবর্তন চেয়েছিলাম, একটা কিছু ভালো হবে ভেবেছিলাম কিন্তু কোথায় কী? খালি ভূরি ভূরি মিথ্যে কথা বলেছে ।"
একজন মানুষ হিসেবে এই দলের সঙ্গে আর থাকতে চাইছেন না সুভদ্রা । থাকলে তাঁর মানবিকতাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াবে, মনে করছেন অভিনেত্রী ।