নাচ যে শুধুমাত্র কয়েকটা স্টেপ নয়, তার মধ্যে যে অভিনয় আর শিল্পের সূক্ষ্ম মিশেল থাকতে হয়, সেটা বুঝিয়েছিলেন সরোজ খান । এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন তিনি বলিউড কোরিওগ্রাফিকে । শুধুমাত্র তাঁকে সম্মান জানাতেই ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে 'বেস্ট কোরিওগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড' দেওয়া শুরু হয় । ইন্ডাস্ট্রির এতগুলো বছরে তাঁর মতো সফল কোরিওগ্রাফার ক'জন হয়েছেন তা বলা মুশকিল ।
দেশভাগের পর ছোট্ট নির্মলা তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে ভারতে চলে আসেন । মাত্র তিন বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেন নির্মলা, 'নজ়রানা' ফিল্মে শিশুশিল্পী শ্যামা হিসাবে । পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে নির্মলা একজন ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে কাজের সুযোগ পান ।
কোরিওগ্রাফার বি. সোহনলালের তত্ত্বাবধানে কাজ করার সময় নাচ শিখতে শুরু করেন সরোজ । পরে সোহনলালের সঙ্গেই বিয়ে হয় তাঁর, মাত্র 13 বছর বয়সে । তখন সোহনলাল তেতাল্লিশের কোটায়, চার সন্তানের বাবা তিনি । কিন্তু, সন্তানের কথা না জেনেই বিয়ে করে ফেলেন সরোজ । তখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তিনি ।
যদিও বেশিদিন টেকে না সম্পর্ক, চার বছরের ব্যবধানে ছেদ হয় বিবাহিত জীবনের । তারপরে আবার বিয়ে করেন সরোজ । তবে সেই খবরটা বেশ ব্যক্তিগতই রেখেছিলেন তিনি ।
এরপর সরোজ সহকারী কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং 1974 সালে স্বাধীন কোরিওগ্রাফার হিসেবে 'গীতা মেরা নাম' ছবিতে আত্মপ্রকাশ করেন । তবে সাফল্য পেতে তাঁকে বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয় ।
1987 সালে, সরোজ প্রথম সফলতার মুখ দেখেন । শ্রীদেবীর সঙ্গে 'মিস্টার ইন্ডিয়া' ছবিতে 'হাওয়া হাওয়াই' গানটি দারুণ প্রশংসিত হয় এবং তারপর একে একে 'নাগিনা' (1986),'তেজাব' (1988), 'চাঁদনি' (1989), 'থানেদার' (1990) 'বেটা' (1992)-র মতো ফিল্মে একাধিক সফল নাচ উপহার দিয়েছেন কোরিওগ্রাফার । হয়ে উঠেছেন সব হিরোইনদের 'মাস্টারজী' ।
শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিত, কাজল, শাহরুখ খান, ঐশ্বরিয়া, সঞ্জয় দত্ত, করিনা কাপুর থেকে শুরু করে হালফিলের দীপিকা পাড়ুকোন, কঙ্গনা রানাওয়াত, আলিয়া ভাট, জাহ্নবী কাপুরের মতো নায়ক-নায়িকাদের পরদার অপ্সরা বানিয়ে তুলতে একটুও বেগ পেতে হয়নি 'মাস্টারজী'-কে ।
17 জুন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি করা হয় সরোজকে । কোরোনা পরীক্ষাও করা হয় তাঁর । কিন্তু, সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । এরপর খবর আসে যে, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন কোরিওগ্রাফার । এতগুলো বছর ধরে তিনি যে সমস্ত অভিনেত্রীদের নাচের ট্রেনিং দিয়েছেন, তাঁরাও সবাই সোশাল মিডিয়ায় 'মাস্টারজী'-র আরোগ্য কামনা করতে থাকেন । মনে হতে থাকে যে, ফাঁড়াটা কাটল বোধহয় ।
কিন্তু, সবাইকে চমকে দিয়ে 3 জুলাই রাত 1.52 মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সরোজ খান । এমনিতেই ডায়বেটিস ও আরও আনুসাঙ্গিক সমস্যা ছিল, এবার তার সঙ্গে যুক্ত হল শ্বাসকষ্ট । আর শেষ মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাক হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন কোরিওগ্রাফার ।
শেষ সময় সরোজ তাঁর পাশে পেয়েছেন বর্তমান স্বামী, ছেলে হামিদ খান ও দুই মেয়ে সুকন্যা আর হিনাকে । পরিবারের সান্নিধ্যেই পরলোকে পাড়ি দেন সরোজ ।
কিংবদন্তি এই কোরিওগ্রাফারের আত্মার শান্তি কামনা করে ETV ভারত সিতারা ।