কলকাতা, 9 জানুয়ারি: একদিকে যখন পথে নেমেছেন জুনিয়র থেকে সিনিয়র চিকিৎসক, বৃহস্পতিবার অন্যদিকে তখন শিয়ালদা আদালত জানিয়ে দিল আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলার রায় ঘোষণার দিন ৷ মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই সেই খবর পান আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, সঞ্জয় যদি একাই দোষী হয়, তাহলে তার মোটিভ কী ছিল ?
উল্লেখ্য, গত 9 অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার রুম থেকে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয় ৷ অভিযোগ ওঠে ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে ৷ কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে ৷
পরে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের কাছে ৷ সিবিআই চার্জশিট জমা দেয় ৷ সেখানে সঞ্জয় রায়কেই মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয় ৷ এই মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷
তবে তাঁদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ে চার্জশিট পেশ করতে পারেনি সিবিআই ৷ সেই কারণে তাঁরা জামিন পেয়ে যান ৷ ফলে 18 জানুয়ারির রায় যে শুধু সঞ্জয় রায়কে নিয়েই হবে, তা একপ্রকার স্পষ্ট ৷ আর সেই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো ৷
তিনি বলেন, "এই ঘটনার মোটিভ কী ? যদি সঞ্জয় রায় একাই দোষী হয়, তাহলে সে সিভিক ভলান্টিয়ার হয়ে কীভাবে একা একটা মেডিক্যাল কলেজের ভিতরে ঘটালো ? এই তথ্যপ্রমাণ লোপাট কি সঞ্জয় রায়কে বাঁচানোর জন্য ? তাহলে উনি এমন কোন ব্যক্তি তার জন্য এত কিছু ? সিএফএসএল রিপোর্ট অনুযায়ী, সঞ্জয় রায় একাই এই কাজ করতে পারেন না । তাহলে বাকিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।"
বৃহস্পতিবার কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । তারপর শ্যামবাজারে অবস্থান শুরু করেছেন তাঁরা ৷ শুক্রবার ভোর 6টা পর্যন্ত অবস্থান করবেন তাঁরা ৷ সেখানে সামিল হয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ এবং সিনিয়র চিকিৎসকরা ।
এই মিছিলে আগামী 24 ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় দু’হাজার চিকিৎসককে নিয়ে যে বৈঠক করতে চলেছেন সেই প্রসঙ্গও ওঠে । সেই প্রসঙ্গে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, "ক’দিন আগে আমরা দেখলাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করলেন । মুখ্যমন্ত্রীও সভা করছেন, করতেই পারেন । আমাদের বিচার চাই । তার সঙ্গে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যে দুর্নীতি চলছে, তার সঙ্গে যেভাবে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করল, তার জবাব চাই ।"
অন্যদিকে এই সভা থেকে আমন্ত্রণ এলে প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে উপস্থিত হবেন সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ । চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্র বলেন, "সেবা করবেন তো ডাক্তারা । কিন্তু তাঁরাই যদি কর্তব্যরত অবস্থায় খুন হয়ে যান ! থ্রেট কালচারের মাথা বিনা শাস্তিতে মেডিক্যাল কলেজে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সেবা কারা দেবেন ? আগে সন্দীপ ঘোষের মতো মানুষেরা শাস্তি পাক । তাহলেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা কাজ করতে পারবেন ।"
অন্যদিকে চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী বলেন, "মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন । কিন্তু সেই সভার গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো আগে পূরণ করা হোক । তাই আমরা সভার সিদ্ধান্তগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি ।"