দিল্লি, 24 ডিসেম্বর : টেমা-র মতে, এটাই মনে করা হচ্ছে যে বিশ্বাসযোগ্য নয়, এমন সরবরাহকারীদের মধ্যে হুয়ায়েই, ওপো, ভিভো-র মতো চিনা সংস্থাগুলি এবং বিশ্বাসযোগ্যদের তালিকায় ভারতীয় টেলিকম সামগ্রী নির্মাতারা থাকবেন । ভালো হয়, যদি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কো-অর্ডিনেটর লেঃ জেনারেল রাজেশ পন্থ এই তালিকা তৈরির পর, এনএসএ-র অধিকর্তার নেতৃত্বাধীন টেলিকম বিষয়ক জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি সেটা অনুমোদন করে । এটা আত্মনির্ভর ভারত এবং দেশীয় শিল্পের উন্নতির লক্ষ্যে একটা বিরাট পদক্ষেপ ।
এবিষয়ে টেমা-র চেয়ারম্যান রবি শর্মা বলেন, "জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটা একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত । এই সিদ্ধান্ত আমাদের ভরসাযোগ্য নয়, এমন উৎস থেকে আসা পণ্যের ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও আপগ্রেড করাকে পুনর্বিবেচনা করতে সাহায্য করে । ভরসাযোগ্য নয় এমন পণ্য নেটওয়ার্কে থাকলে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকেই যাবে, বিশেষ করে ফাইভ-জ়ির যুগে, যখন লাখ লাখ টেলিকম পণ্য একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চলেছে । উল্লেখ্য যে ব্রিটেন, অ্যামেরিকায় সরকার সমস্ত ভরসার অযোগ্য পণ্য সরিয়ে ফেলতে একটা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে । আর ভারতেরও এর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে ।"
ফাইভ-জ়ি আসার পর সমস্ত ডিভাইস একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে, যাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি বাড়বে । সুতরাং ভারতের স্বার্থেই, দেশের নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলোর তৈরি নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার করতে হবে । প্রাক্তন টেলিকম সচিব এবং বর্তমানে টেমা কাউন্সিল অন ডিজ়িটাল এমপাওয়ারমেন্টের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন আইএএস আর চন্দ্রশেখর বলেন, "এটা সরকারের অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ । ভবিষ্যতে শুধু বিশ্বাসযোগ্য উপকরণের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং অন্যান্য উপকরণকে ধাপে ধাপে নেটওয়ার্ক থেকে সরিয়ে দেওয়া, আমাদের টেলিকম পরিকাঠামোর জন্য একটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ । পাশাপাশি ফাইভ জ়ি নিয়ে গবেষণা বাড়াবার প্রয়োজন রয়েছে । তার সঙ্গে পিএমপি ও পিএলআই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে টেলিকম উপকরণ উৎপাদনও বাড়াতে হবে । আমাদের সামনে সুযোগ রয়েছে যে এই তিনটি ক্ষেত্রকে যুক্ত করে আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে টেলিকমে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে পৌঁছানোর। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর রোডম্যাপ তৈরি করতে সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে টেমা তৈরি।"
এটা আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে বিরাট পদক্ষেপ, কারণ দেশে তৈরি উপকরণকেই বিশ্বাসযোগ্য পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হতে চলেছে । ডিআইপিপি-র প্রাক্তন সচিব ও টেমা কাউন্সিল অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসির চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস শ্রী অজয় শঙ্কর বলেন, "জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ । টেলিকম প্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি আমাদের জীবন ও উৎপাদনশীলতাকে বদলে দিয়েছে । কিন্তু এর ফলে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে । শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য উপকরণের ব্যবহার সুনিশ্চিত করা এবং অন্য উপকরণকে যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে ফেলার পদক্ষেপকে হৃদয় থেকে সমর্থন জানাতেই হবে ।"
আরও পড়ুন : মানুষের বর্জ্য মানুষকে দিয়ে পরিষ্কার সংগঠিত অপরাধ !
এনসিএসসি-র প্রাক্তন জাতীয় কো-অর্ডিনেটর ড. গুলশন রাই বলেন, "পণ্যের ফিচার, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা বাড়ানো এখন দেশীয় উৎপাদকদের কর্তব্য এবং বাধ্যবাধকতা । এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে শিল্পে গতি আনতে হবে ।" টেমা-র চেয়ারম্যান এমিরেটাস, অধ্যাপক এন কে গোয়েল বলেন, "টেলিকম দপ্তরের অনুমোদিত পণ্য হিসেবে ভারতীয় পণ্যকে ঘোষণা করা, এবং টেলিকম নেটওয়ার্কে ভারতীয় পণ্য বাড়াতে এনএসসিটি-র কাজ করার সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এটা দেখেও ভাল লাগছে যে সরকারি হোক বা বেসরকারি, সমস্ত নেটওয়ার্কই এর আওতায় চলে আসবে ।"
প্রথমবার ফোর-জ়ি ও ফাইভ-জ়ি উপকরণ সরবরাহ করবে ভারত । নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য উপকরণ নির্মাণ করতে এবার উদ্যোগী হয়েছে ভারতীয় শিল্পমহল । টেমা কাউন্সিল অন সিক্স-জ়ি-র সদস্য এবং আইআইটি মুম্বইয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক স্বরূপ গাঙ্গুলি বলেন, "নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি যোগাযোগ পরিকাঠামোকে যে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে গুরুত্ব দিল, তার প্রয়োজন ছিল । বিদেশি ঝুঁকির থেকে একে রক্ষা করতেও একটা সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।"