ETV Bharat / international

স্রেব্রেনিকা, এক ধিকৃত গণহত্য়া - আমির আলি

1990 এর গোড়ার দিকে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন স্লোবোড্যান মিলোসেভিক ৷ 1990 এর গোড়ার দিকে যুগোস্লোভিয়ার থেকে ভেঙে যাওয়ার জন্য সার্বিয়ার জাতীয়তাবাদের নামে যে হিংসা ছড়িয়েছিল, তার জন্য তাঁকেই একমাত্র দায়ী করা হয় ৷ আর এই হিংসার মধ্যে সবচেয়ে বিদ্বেষমূলক উদাহরণ ছিল স্রেব্রেনিকার ঘটনা ৷

স্রেব্রেনিকার কথা মনে পড়ছে
স্রেব্রেনিকার কথা মনে পড়ছে
author img

By

Published : Jul 15, 2020, 3:16 PM IST

Updated : Jul 15, 2020, 3:32 PM IST

আজ থেকে 25 বছর আগের কথা ৷ 1995 সালের 11 থেকে 16 জুলাইয়ের মধ্যে স্রেব্রেনিকা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দ্বারা ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী ছিল ইউরোপ ৷ সেই ঘটনায় 6 মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তারপর ইউরোপে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় গণহত্যা ৷ স্রেব্রেনিকার মতো গণহত্যা যখনই ঘটে, তখন প্রতিবারই প্রথাগত ভাবে "আর হবে না" জাতীয় কথা আবার শোনা যায় ৷ এর কারণ বোধহয় আবার হবে বলেই এটা বলা হয় ৷ স্রেব্রেনিকার ঠিক আগের বছর 1994 সালে রাওয়ান্ডার টুটসিসে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড হয়েছিল ৷ যেখানে ওই বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে 8 লাখ মানুষকে হত্যা করা হয় ৷

গণহত্যা হওয়া উচিত নয় ৷ অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নির্বিঘ্নে পাশে সরিয়ে রেখে এই ধরনের ঘটনা ঘটার উদাহরণ রয়েছে ৷ স্রেব্রেনিকার ঘটনায় ডাচ শান্তিরক্ষা বাহিনী কার্যত কোনও নজরই দেয়নি এবং ঘটনাচক্রে তারা বসনিয়ার 300 জন মুসলিম পুরুষকে আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ বসনিয়ান সার্ব মিলিটারি জেনারেল ব়্যাটকো ম্ল্যাডিকের বাহিনীর দ্বারা ওই 300 জন খুন হয়েছিলেন ৷ 2017 সালের দ্য হেগের একটি অ্যাপিল কোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল যে ওই 300 জন পুরুষ, যাঁরা আশ্রয়ের সন্ধান করছিলেন, তাঁদের জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছে ডাচ শান্তিরক্ষা বাহিনী ৷ বরং হাস্যকর ভাবে স্রেব্রেনিকাকে UN এর তরফে "নিরাপদ অঞ্চল" বলে ঘোষণা করা হয় ৷ আর পুরোটাই করা হয়েছিল খুন হওয়া বসনিয়ার 8 হাজার মুসলিম পুরুষকে উপেক্ষা করে ৷ ওই 8 হাজার জন বসনিয়ান সার্ব ফোর্সের হাতে খুন হন ৷

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতোই গণহত্যার আভাস আগে পাওয়া যায় ৷ গোটা বিষয়টিই আগে থেকে হাওয়ায় ভাসতে থাকে ৷ যার থেকে স্পষ্ট অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে যে একটা গণহত্যার পরিকল্পনা চলছে ৷ ঠিক যেমন রাওয়ান্ডায় হয়েছিল ৷ সেখানে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগেই রাওয়ান্ডার ইউনাইটেড ন্যাশনস অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন (UNAMIR) এর নেতৃত্বে থাকা কানাডার মেজর জেনারেল রোমিও ডালায়ার তাঁর ভয়ঙ্কর ভয়ের কথা জানিয়ে দ্রুত বার্তা পাঠিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সারা বিশ্ব থেকে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি ৷ একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা খুব দ্রুত যে ছড়াচ্ছে এবং এর ফল যে অমানবিক হবে, সেই খবর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল ৷ 1994 সালের রাওয়ান্ডা, যখন ইন্টারনেট পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি আর ফেসবুকের মতো সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতে তখনও দশ বছর বাকি, সেই সময় ঘৃণা ছড়ানোর জন্য হাতিয়ার করা হয়েছিল নতুন তৈরি করা রেডিয়ো-টেলিভিশন লিব্রে দেস মিল্লে কল্লিনেস ৷ যেখানে টুটিসদের উদ্দেশে করা সম্প্রচারিত হত যে ‘আরশোলাকে মেরে ফেলো’ ৷ ওই ব্রডকাস্টার যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁর নাম ফেলিসিয়েন কাবুগা ৷ সম্প্রতি তাঁকে প্যারিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷ এখন তাঁর বয়স 84 ৷ তিনি ভুয়ো পরিচয়ে থাকছিলেন ৷

এই ধরনের ঘৃণার বৃদ্ধির মধ্যেই ছিল স্পষ্ট ইঙ্গিত ৷ খুবই খারাপ মানের জাতীয়তাবাদের দ্রুত বৃদ্ধির মধ্যেই তখন লুকিয়ে ছিল ঘৃণার উৎস ৷ 1990 এর গোড়ার দিকে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন স্লোবোড্যান মিলোসেভিক ৷ তাঁর কেরিয়ারের দিকে শুধু একবার ভালো করে নজর দিতে হবে ৷ 1990 এর গোড়ার দিকে যুগোস্লোভিয়ার থেকে ভেঙে যাওয়ার জন্য সার্বিয়ার জাতীয়তাবাদের নামে যে হিংসা ছড়িয়েছিল, তার জন্য তাঁকেই একমাত্র দায়ী করা হয় ৷ আর এই হিংসার মধ্যে সবচেয়ে বিদ্বেষমূলক উদাহরণ ছিল স্রেব্রেনিকার ঘটনা ৷ 1980-তে মিলোসেভিক কমিউনিস্ট পার্টিতে ছিলেন ৷ কিন্তু পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে সার্বিয়ার জাতীয়বাদের অংশ হতে পারলে, সেটা তাঁর কেরিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে ৷ 1986 সাল থেকে মেলোসেভিক বারবার বোঝাতে শুরু করেন যে কসোভোর স্বায়ত্তশাসনকারী এলাকায় সার্বিয়ার মানুষদের উপর গণহত্যা চালানোর আশঙ্কা রয়েছে ৷ কসোভোতে সংখ্যালঘু সার্বিয়ানদের উপর এই আতঙ্কের কথা বলতে বলতেই সার্বিয়া তৈরি পরিকল্পনা গঠন করা হয় ৷ প্রথমে যেটা আমরা দেখছিলাম যে তাঁদের গোষ্ঠীর উপর গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে তুলে ধরা হচ্ছে ৷ তারপর বাস্তবে সেই পরিস্থিতিটাই ঘুরে গেল ৷ পরিবর্তে যাঁরা এর বিরোধিতা করছিলেন তাঁদের উপরই গণহত্যা সংগঠিত করা হল ৷

1989 সালে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হন মিলোসেভিক ৷ ওই বছরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন কসোভোর স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে নেওয়া হবে ৷ যা দেওয়া হয়েছিল 1974 সালে ৷ যুগস্লোভিয়া ভেঙে যাওয়ার সময় এটাই ছিল ভয়ঙ্কর হিংসার সূচনা ৷ আর তা চলেছিল 1990 এর গোড়ার দিক পর্যন্ত ৷ কসোভোতে একটা অহিংস ও নাগরিক অমান্য আন্দোলন হয় ৷ যার নেতৃত্বে ছিলেন বালকানসের "প্রকৃত গান্ধি" ইব্রাহিম রুগোভা ৷ যিনি পরে কসোভোর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ৷ আর তার আগে তিনি প্যারিসের সাহিত্য তাত্ত্বিক রোলান্ড বার্থেজের অধীনে পড়াশোনা করেছিলেন ৷ এমনকী এই ধরনের আন্দোলনও মিলোসেভিককে এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসবাদ আসছে বলে অভিযোগ তোলা থেকে বিরত করতে পারেনি ৷ যা তাঁর কাছে গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলকরণের জন্য আরও বেশি দমন পীড়ন চালানোকে ন্যায্য অজুহাত বলে মনে হয়েছিল ৷

এটা খুবই বেদনাদায়ক যে এই গণহত্যা আটকানোর জন্য কোনও রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যায়নি ৷ স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও তার উপর ভিত্তি করে এর সম্ভাবনা নিয়ে যে কোনও পর্যবেক্ষকের কাছে যুক্তিসঙ্গত ভাবে বোধগম্য হতে পারে ৷ গণহত্যার বিষয়টি আগে উল্লেখ করা ঘৃণার বিষয়টির মাধ্যমে সামনে আনা সম্ভব ছিল ৷ যা নিয়ে ফরাসি ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জ্যাক সেমেলিন তাঁর বই পিউরিফাই অ্যান়্ ডেস্ট্রয়: দ্য পলিটিক্যাল ইউসেজ অফ ম্যাসাকার অ্যান্ড জেনোসাইড বইতে উল্লেখ করেছেন ৷ এই বিষয়টিকে "নীরবতার চক্র" হিসেবে উল্লেখ করেছেন জার্মানির সমাজতত্ত্ববিদ এলিজাবেথ নোইল্লে-নিউমন ৷ এটা বোঝায় সেই বড় অংশের মানুষকে, যাঁরা হয়তো ঘৃণা ছড়ানোর সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি ৷ হয়তো এর সঙ্গে পুরোপুরি সহমতও তাঁরা হতে পারেননি ৷ কিন্তু কথা বলতে এবং প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন ৷ যে গোষ্ঠী প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে সহ্য করছিল, হয়তো তাঁদের জন্য এই মানুষরা ততটা সহানুভূতি প্রকাশ করতে চায়নি ৷ অথবা নিজেদের গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে কিছু করেননি ৷

বিংশ শতাব্দীতে গণহত্যার খবর খুবই যন্ত্রণাদায়ক ৷ গণহত্যার ঘটনাগুলি একটি আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটিয়েছে ৷ যেখানে তারা এই জাতীয় আচরণকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ একই সঙ্গে এর পিছনে থাকা অপরাধীদের শুধুমাত্র দীর্ঘ সময় পরই ধরা গিয়েছে ৷ তবে, প্রতিটি ফেলিসিবিয়ান কাবুগা, স্লোভোড্যান মিলোসেভিক এবং ব়্যাটকো ম্লাডিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে ৷ কিন্তু এমন অনেক অপরাধী রয়েছেন যাঁরা পালিয়ে থেকে বেঁচে থেকেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ৷ শুধুমাত্র একটাই বিস্ময় যে তাঁরা কি রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারতেন !

লেখক- আমির আলি

আজ থেকে 25 বছর আগের কথা ৷ 1995 সালের 11 থেকে 16 জুলাইয়ের মধ্যে স্রেব্রেনিকা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দ্বারা ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী ছিল ইউরোপ ৷ সেই ঘটনায় 6 মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তারপর ইউরোপে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় গণহত্যা ৷ স্রেব্রেনিকার মতো গণহত্যা যখনই ঘটে, তখন প্রতিবারই প্রথাগত ভাবে "আর হবে না" জাতীয় কথা আবার শোনা যায় ৷ এর কারণ বোধহয় আবার হবে বলেই এটা বলা হয় ৷ স্রেব্রেনিকার ঠিক আগের বছর 1994 সালে রাওয়ান্ডার টুটসিসে ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড হয়েছিল ৷ যেখানে ওই বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে 8 লাখ মানুষকে হত্যা করা হয় ৷

গণহত্যা হওয়া উচিত নয় ৷ অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নির্বিঘ্নে পাশে সরিয়ে রেখে এই ধরনের ঘটনা ঘটার উদাহরণ রয়েছে ৷ স্রেব্রেনিকার ঘটনায় ডাচ শান্তিরক্ষা বাহিনী কার্যত কোনও নজরই দেয়নি এবং ঘটনাচক্রে তারা বসনিয়ার 300 জন মুসলিম পুরুষকে আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ বসনিয়ান সার্ব মিলিটারি জেনারেল ব়্যাটকো ম্ল্যাডিকের বাহিনীর দ্বারা ওই 300 জন খুন হয়েছিলেন ৷ 2017 সালের দ্য হেগের একটি অ্যাপিল কোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল যে ওই 300 জন পুরুষ, যাঁরা আশ্রয়ের সন্ধান করছিলেন, তাঁদের জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছে ডাচ শান্তিরক্ষা বাহিনী ৷ বরং হাস্যকর ভাবে স্রেব্রেনিকাকে UN এর তরফে "নিরাপদ অঞ্চল" বলে ঘোষণা করা হয় ৷ আর পুরোটাই করা হয়েছিল খুন হওয়া বসনিয়ার 8 হাজার মুসলিম পুরুষকে উপেক্ষা করে ৷ ওই 8 হাজার জন বসনিয়ান সার্ব ফোর্সের হাতে খুন হন ৷

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতোই গণহত্যার আভাস আগে পাওয়া যায় ৷ গোটা বিষয়টিই আগে থেকে হাওয়ায় ভাসতে থাকে ৷ যার থেকে স্পষ্ট অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে যে একটা গণহত্যার পরিকল্পনা চলছে ৷ ঠিক যেমন রাওয়ান্ডায় হয়েছিল ৷ সেখানে হিংসা ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগেই রাওয়ান্ডার ইউনাইটেড ন্যাশনস অ্যাসিস্ট্যান্স মিশন (UNAMIR) এর নেতৃত্বে থাকা কানাডার মেজর জেনারেল রোমিও ডালায়ার তাঁর ভয়ঙ্কর ভয়ের কথা জানিয়ে দ্রুত বার্তা পাঠিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সারা বিশ্ব থেকে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি ৷ একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা খুব দ্রুত যে ছড়াচ্ছে এবং এর ফল যে অমানবিক হবে, সেই খবর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল ৷ 1994 সালের রাওয়ান্ডা, যখন ইন্টারনেট পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি আর ফেসবুকের মতো সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতে তখনও দশ বছর বাকি, সেই সময় ঘৃণা ছড়ানোর জন্য হাতিয়ার করা হয়েছিল নতুন তৈরি করা রেডিয়ো-টেলিভিশন লিব্রে দেস মিল্লে কল্লিনেস ৷ যেখানে টুটিসদের উদ্দেশে করা সম্প্রচারিত হত যে ‘আরশোলাকে মেরে ফেলো’ ৷ ওই ব্রডকাস্টার যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁর নাম ফেলিসিয়েন কাবুগা ৷ সম্প্রতি তাঁকে প্যারিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷ এখন তাঁর বয়স 84 ৷ তিনি ভুয়ো পরিচয়ে থাকছিলেন ৷

এই ধরনের ঘৃণার বৃদ্ধির মধ্যেই ছিল স্পষ্ট ইঙ্গিত ৷ খুবই খারাপ মানের জাতীয়তাবাদের দ্রুত বৃদ্ধির মধ্যেই তখন লুকিয়ে ছিল ঘৃণার উৎস ৷ 1990 এর গোড়ার দিকে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন স্লোবোড্যান মিলোসেভিক ৷ তাঁর কেরিয়ারের দিকে শুধু একবার ভালো করে নজর দিতে হবে ৷ 1990 এর গোড়ার দিকে যুগোস্লোভিয়ার থেকে ভেঙে যাওয়ার জন্য সার্বিয়ার জাতীয়তাবাদের নামে যে হিংসা ছড়িয়েছিল, তার জন্য তাঁকেই একমাত্র দায়ী করা হয় ৷ আর এই হিংসার মধ্যে সবচেয়ে বিদ্বেষমূলক উদাহরণ ছিল স্রেব্রেনিকার ঘটনা ৷ 1980-তে মিলোসেভিক কমিউনিস্ট পার্টিতে ছিলেন ৷ কিন্তু পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে সার্বিয়ার জাতীয়বাদের অংশ হতে পারলে, সেটা তাঁর কেরিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে ৷ 1986 সাল থেকে মেলোসেভিক বারবার বোঝাতে শুরু করেন যে কসোভোর স্বায়ত্তশাসনকারী এলাকায় সার্বিয়ার মানুষদের উপর গণহত্যা চালানোর আশঙ্কা রয়েছে ৷ কসোভোতে সংখ্যালঘু সার্বিয়ানদের উপর এই আতঙ্কের কথা বলতে বলতেই সার্বিয়া তৈরি পরিকল্পনা গঠন করা হয় ৷ প্রথমে যেটা আমরা দেখছিলাম যে তাঁদের গোষ্ঠীর উপর গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে বলে তুলে ধরা হচ্ছে ৷ তারপর বাস্তবে সেই পরিস্থিতিটাই ঘুরে গেল ৷ পরিবর্তে যাঁরা এর বিরোধিতা করছিলেন তাঁদের উপরই গণহত্যা সংগঠিত করা হল ৷

1989 সালে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হন মিলোসেভিক ৷ ওই বছরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন কসোভোর স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে নেওয়া হবে ৷ যা দেওয়া হয়েছিল 1974 সালে ৷ যুগস্লোভিয়া ভেঙে যাওয়ার সময় এটাই ছিল ভয়ঙ্কর হিংসার সূচনা ৷ আর তা চলেছিল 1990 এর গোড়ার দিক পর্যন্ত ৷ কসোভোতে একটা অহিংস ও নাগরিক অমান্য আন্দোলন হয় ৷ যার নেতৃত্বে ছিলেন বালকানসের "প্রকৃত গান্ধি" ইব্রাহিম রুগোভা ৷ যিনি পরে কসোভোর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ৷ আর তার আগে তিনি প্যারিসের সাহিত্য তাত্ত্বিক রোলান্ড বার্থেজের অধীনে পড়াশোনা করেছিলেন ৷ এমনকী এই ধরনের আন্দোলনও মিলোসেভিককে এই অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসবাদ আসছে বলে অভিযোগ তোলা থেকে বিরত করতে পারেনি ৷ যা তাঁর কাছে গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলকরণের জন্য আরও বেশি দমন পীড়ন চালানোকে ন্যায্য অজুহাত বলে মনে হয়েছিল ৷

এটা খুবই বেদনাদায়ক যে এই গণহত্যা আটকানোর জন্য কোনও রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যায়নি ৷ স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও তার উপর ভিত্তি করে এর সম্ভাবনা নিয়ে যে কোনও পর্যবেক্ষকের কাছে যুক্তিসঙ্গত ভাবে বোধগম্য হতে পারে ৷ গণহত্যার বিষয়টি আগে উল্লেখ করা ঘৃণার বিষয়টির মাধ্যমে সামনে আনা সম্ভব ছিল ৷ যা নিয়ে ফরাসি ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জ্যাক সেমেলিন তাঁর বই পিউরিফাই অ্যান়্ ডেস্ট্রয়: দ্য পলিটিক্যাল ইউসেজ অফ ম্যাসাকার অ্যান্ড জেনোসাইড বইতে উল্লেখ করেছেন ৷ এই বিষয়টিকে "নীরবতার চক্র" হিসেবে উল্লেখ করেছেন জার্মানির সমাজতত্ত্ববিদ এলিজাবেথ নোইল্লে-নিউমন ৷ এটা বোঝায় সেই বড় অংশের মানুষকে, যাঁরা হয়তো ঘৃণা ছড়ানোর সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি ৷ হয়তো এর সঙ্গে পুরোপুরি সহমতও তাঁরা হতে পারেননি ৷ কিন্তু কথা বলতে এবং প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন ৷ যে গোষ্ঠী প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে সহ্য করছিল, হয়তো তাঁদের জন্য এই মানুষরা ততটা সহানুভূতি প্রকাশ করতে চায়নি ৷ অথবা নিজেদের গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে কিছু করেননি ৷

বিংশ শতাব্দীতে গণহত্যার খবর খুবই যন্ত্রণাদায়ক ৷ গণহত্যার ঘটনাগুলি একটি আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটিয়েছে ৷ যেখানে তারা এই জাতীয় আচরণকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ একই সঙ্গে এর পিছনে থাকা অপরাধীদের শুধুমাত্র দীর্ঘ সময় পরই ধরা গিয়েছে ৷ তবে, প্রতিটি ফেলিসিবিয়ান কাবুগা, স্লোভোড্যান মিলোসেভিক এবং ব়্যাটকো ম্লাডিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে ৷ কিন্তু এমন অনেক অপরাধী রয়েছেন যাঁরা পালিয়ে থেকে বেঁচে থেকেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ৷ শুধুমাত্র একটাই বিস্ময় যে তাঁরা কি রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারতেন !

লেখক- আমির আলি

Last Updated : Jul 15, 2020, 3:32 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.