কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি: ট্যাংরায় একই পরিবারের তিনজনের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় বুধবার সকাল থেকেই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছিল ৷ ঘটনাটি খুনেরও হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছিলেন ৷ সন্ধ্যায় শেষপর্যন্ত এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু হল ৷
বুধবার সকালে ট্যাংরার 21/সি অতুল সুর রোডের একটি বাড়ির তিনতলা থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার হয় ৷ সেই তিনজনের মধ্যে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ৷ যাঁদের নাম রোমি দে ও সুদেষ্ণা দে ৷ এছাড়াও এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয় ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, রোমির বাবা স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের কাছে অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷
এই নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) রূপেশ কুমার ও একাধিক শীর্ষ আধিকারিক বৈঠক করেন ৷ তদন্তে এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ নিয়ে সেখানে আলোচনা হয় ৷ তদন্তের পরবর্তী রূপরেখাও ঠিক হয় ৷ কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেলেও বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তার বিস্তারিত কোনও তথ্য মেলেনি ৷
ট্যাংরার ঘটনাটি ঠিক কী ?
ট্যাংরার 21/সি অতুল সুর রোডের বাড়িটিতে প্রসূন দে ও প্রণয় দে থাকেন ৷ সেই বাড়িতে তাঁদের স্ত্রী রোমি (প্রসূনের স্ত্রী) ও সুদেষ্ণা (প্রণয়ের স্ত্রী) এবং তাঁদের সন্তানেরা থাকতেন ৷ বুধবার সকালে ওই বাড়ি থেকে রোমি ও সুদেষ্ণা এবং এক কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয় ৷ ওই কিশোরী প্রসূন ও রোমির মেয়ে ৷
ট্যাংরা থানার পুলিশ যখন দেহ উদ্ধার করছে, সেই সময় তাঁদের কাছে খবর আসে যে বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রসূন ও প্রণয় ৷ তাঁদের সঙ্গে এক নাবালকও ছিল ৷ সেও আহত হয় ৷ ওই নাবালক প্রণয় ও সুদেষ্ণার ছেলে ৷
তিনজনকেই বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ৷ তখন প্রসূন-প্রণয় পুলিশকে জানান যে তাঁরা মরার উদ্দেশ্যেই রাস্তার ধারের পিলারে ধাক্কা মেরেছিলেন গাড়ি নিয়ে ৷ যদিও তাঁদের কথায় অনেক অসঙ্গতি ছিল বলে পুলিশের দাবি ৷ তাঁদের বয়ানের ভিডিয়োগ্রাফিও করা হয় ৷
ট্যাংরার ঘটনাস্থলে যান স্বয়ং পুলিশ কমিশনার ও জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) ৷ পরে পুলিশ কমিশনার এই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকও করেন ৷ সেখানেই তিনি জানান যে নিহতদের শরীরের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় ৷ এর পরই রহস্য আরও ঘণীভূত হয়৷ প্রশ্ন ওঠে, ঋণের জন্য এঁরা নিজেরাই নিজেদের জীবন নিয়েছেন, নাকি এটা খুনের ঘটনা ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, আগামিকাল বৃহস্পতিবার এই নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে ৷ সেখানে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিক এবং চারজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক থাকবেন । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে ৷
তবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে যে এই পরিবার আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল ৷ তার পর এটা কি দ্বিতীয় চেষ্টা ছিল ? যদি সেটা হয়, তাহলে নিহতদের শরীরে এত আঘাতের চিহ্ন কেন ? নিহত কিশোরীর মাথায় ভোঁতা কোনও অস্ত্র দিয়ে আঘাত কেন করা হয় ? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা ৷