ওয়াশিংটন, 20 জানুয়ারি : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে ৷ এর সঙ্গে অফিসের প্রতি তাঁর প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সাধারণত সতর্কতার সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে ৷ এখন যেহেতু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হাউজ দ্বিতীয়বারের জন্য ইমপিচ করেছে, তাই এখন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে সেনেটের সামনে এই মামলা পেশ করার জন্য যথোপযুক্ত পরিকল্পনা করতে হবে ৷
সেনেটের নিয়ম অনুযায়ী, ইমপিচমেন্টের বিষয়টি চেম্বারের কাছে আসার পরই বিষয়টি নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে ৷ ট্রাম্পের সমর্থকদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে গত সপ্তাহে ক্যাপিটলে আক্রমণ করে ৷ এতে ‘বিদ্রোহের প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৷ কিন্তু পেলোসি জানাননি কবে হাউজ এই বিষয়টি জানাবে ৷
যদি হাউজ এটি পরের সপ্তাহের প্রথম দিকে সেনেটে পাঠায়, তাহলে 20 জানুয়ারি দুপুরে যখন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন শপথ নেবেন, তখন দুপুর 1টাতেই ট্রাম্পের বিচার শুরু হয়ে যাবে ৷
আপাতত এটা নিশ্চিত যে ট্রাম্প পদ ছেড়ে দেওয়ার পর তাঁর ইমপিচমেন্ট ট্রায়াল শুরু হবে ।
আরও পড়ুন : ট্রাম্পের মুসলিম অভিবাসন নীতি খারিজের পথে জো
তবে বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে এবং সেনেটের কোনও রিপাবলিকান সদস্য কি ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে ভোট দেবে, এই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় ।
বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আর ভিন্ন ধরনের ইমপিচমেন্ট
এই ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালটি আগেরবারের থেকে বিভিন্ন ভাবে আলাদা হতে পারে ৷
ট্রাম্প বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে যে আবেদন করেছিলেন ৷ 2019 সালে হাউজ এই অভিযোগ তুলেছিল ৷ এই নিয়ে একাধিক সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল ৷ যদিও ডেমোক্র্যাটরা সর্বসম্মতিক্রমে এই আচরণের সমালোচনা করেছিলেন এবং ট্রাম্পকে ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন, অভিযোগগুলি একত্রিত করে একাধিক প্রমাণও তৈরি করেছেন ৷
এবার ডেমোক্র্যাটরা অনুভব করছেন যে তদন্তের খুব দরকার নেই ৷ কারণ, ক্যাপিটালে আক্রমণ করার ঘটনাটি সরাসরি টেলিভিশনে দেখিয়েছে ৷ আর সেখানে সেই সময় কংগ্রেসের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন ৷
যে সেনেটররা সেখানে বসে ছিলেন তাঁরা কেবল ঘটনার সাক্ষীই নন, তাঁরা অন্যদের মতো একই অপরাধের শিকার হয়েছিলেন ।
নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে শেষপর্যন্ত লড়াই করতে হবে, ওই ঘটনার আগেই ট্রাম্প ভাষণ দিয়েছিলেন৷ যা টিভিতে দেখিয়েওছিল ৷ সেই সময় কংগ্রেসও আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোট গণনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল ৷
হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ, যিনি আগের হাউজ ইমপিচমেন্ট দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন যে ক্যাপিটালে হামলার ঘটনা ‘‘ইমপিচ করার মতো অপরাধ প্রকাশ্যে করেছে ৷ যা সারা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে ৷’’ তিনি বলেছেন যে ইমপিচমেন্ট দ্রুত করার ‘‘পরিস্থিতির উদ্দীপনা দ্বারা আবশ্যক ছিল এবং অপরাধের প্রকৃতি দ্বারা এটি সম্ভব হয়েছিল ।”
দ্য আর্টিক্যাল
ট্রাম্পকে ইমপিচ করার জন্য একটি চার পাতার একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে ৷ সেখানে লেখা হয়েছে যে, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা ভয়ঙ্কর সংকটে’’ ট্রাম্পের জন্য ৷
এটা এনেছে ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি রোডে দ্বীপের ডেভিড সিসিলিনে, ক্যালিফোর্নিয়ার টেড লিউ এবং মেরিল্যান্ডের জেমি রাস্কিন ৷ সেনেট ট্রায়ালের জন্য তাঁরা ইমপিচমেন্ট ম্যানেজারকে লিখেছেন ৷
ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে নির্বাচনের ফলাফলকে "বিকৃত ও বাধা দেওয়ার" পূর্বের প্রচেষ্টার সঙ্গে ট্রাম্পের আচরণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জর্জিয়ার রাজ্য সেক্রেটারির সঙ্গে তাঁর সাম্প্রতিক আহ্বানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি বাইডেনের কাছে প্রদেশ হারানোর পরে তাঁকে আরও বেশি ভোট চান ৷
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প মিথ্যাভাবে দাবি করেছেন যে নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ছিল ৷ আর তাঁর ভিত্তিহীন দাবির কথা বারবার রিপাবলিকান কংগ্রেসেনাল এবং ক্যাপিটালে নামা বিদ্রোহীদের কথায় শোনা গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : প্রথম বক্তৃতায় ভারতীয় কলমেই ভরসা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের
বিক্ষোভকারীরা যখন হামলা চালায়, তখন উভয়কক্ষই বাইডেনের নির্বাচনের জয়ের আগে অ্যারিজোনার ভোট গণনা নিয়ে জিওপি চ্যালেঞ্জগুলি দেখা হচ্ছিল ৷
শপথের সময় হিংসা সংক্রান্ত আইনকে ব্যবহার করা
শপথের আগে এফবিআই 50 টি প্রদেশে এবং ওয়াশিংটনের সশস্ত্র বিক্ষোভের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছে । গত সপ্তাহের ক্যাপিটালের যে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বুধবার দ্বিতীয়বারের জন্য ইমপিচমেন্টের জন্য অভিযুক্ত হওয়ার পর ট্রাম্প ওই ঘটনা অস্বীকার করতে চলেছেন ৷ ওয়াশিংটন এবং দেশজুড়ে আইন প্রয়োগকারী এবং ন্যাশনাল গার্ড উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে ৷ এবং প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্প যে ভাষণ দেন, তাতে বিক্ষোভের ইঙ্গিত রয়েছে ৷
ঐতিহ্যকে তাচ্ছিল্য করার অভিযোগ
বুধবার সকালে ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প । জো বাইডেনের শপথের আগেই তিনি চলে যাবেন ৷ তার পর ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট পরবর্তী জীবন শুরু করবেন ৷
ঐতিহ্য মেনে চলতে এবং ক্ষমতার আনুষ্ঠানিক স্থানান্তরে অংশ নিতে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প ৷ পরিবর্তে তিনি এয়ার ফোর্স ওয়ান-এ শেষবার বসে তিনি মেরিল্যান্ডের জয়েন্ট বেস অ্যান্ড্রুজ থেকে বেরিয়ে যাবেন ৷
বাইডেন বলেছেন, সেনেটের উচিত এই মুহূর্তে ইমপিচমেন্ট মামলার শুনানির সঙ্গেই তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের নিশ্চিতকরণ এবং আইনসম্মত অগ্রাধিকারের বিষয়গুলিও দেখা উচিত ৷
ট্রাম্প হয়তো সেনেটের শুনানিতে নিজের সমর্থনে যুক্তি পেশ করবেন
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে “বিদ্রোহ উস্কানি দেওয়ার” অভিযোগ উঠেছে ৷ ইমপিচমেন্টে এই একটাই লাইন হাউজের তরফে অনুমোদন করা হয়েছে ৷ ট্রাম্প সমর্থক জনতার ক্যাপিটলে হামলা চালানোর সামান্য আগে হাজার হাজার সমর্থকদের দেওয়া ট্রাম্পের বক্তৃতাকে এর কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে ৷
ট্রাম্প বিচারের সময় যুক্তি হিসেবে পেশ করতে পারেন যে যুক্ত হতে পারেন যে তাঁর মন্তব্য সংবিধানের প্রথম সংশোধনী দ্বারা রক্ষিত ছিল ৷ তিনি বলতে পারেন যে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না ৷ তিনি শুধু ‘লড়াই’ করতে বলেছিলেন ৷
ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ গভীর ভাবে অনিশ্চিত হয়ে গেল
ট্রাম্প ওয়াশিংটন ছাড়লেন তাঁর গভীর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ৷ ক্ষমতার হস্তান্তর শান্তিপূর্ণ ভাবে হওয়া থেকে আটকাতে কংগ্রেসেনাল ও আইন প্রস্তুতকারদের মনে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্পের সমর্থকরা ৷ 2024 সালে ট্রাম্পকেই রিপাবলিকানদের তরফে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে মনে করা হচ্ছিল ৷ কিন্তু ক্যাপিটালে হামলার পর ট্রাম্পের যা প্রতিক্রিয়া, তাতে সেই বিষয়টি দলও সমালোচনা করেছে ৷ ওই হামলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয় ৷ সেই পাঁচজনের মধ্যে একজন আবার ক্যাপিটালে নিযুক্ত পুলিশ অফিসার ৷ ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার জন্য ট্রাম্প ফ্লোরিডায় তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও খবর ৷
তিনি এর পর কী করতে পারেন ?
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার পর ট্রাম্প কী করবেন, সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানাননি ৷ প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে নিজের অফিস তৈরির জায়গা খোঁজার কাজও করেননি ৷ 2024 সালে হোয়াইট হাউজের লড়াই সামিল হওয়ার জন্য ট্রাম্প দরজা খোলা রেখেছেন ৷ কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহে দ্বিতীয় ইমপিচমেন্ট শুনানি শুরু হলে সেনেট সেই দরজা বন্ধ করে দিতে পারে ৷
আরও পড়ুন : আজ প্রেসিডেন্ট পদে শপথ-গ্রহণ, ওয়াশিংটন ডিসিতে বাইডেন
যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে ট্রাম্পকে সেনেটে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে, যাতে তিনি ফেডারেল অফিসে আর না আসতে পারেন ৷ এমনকী, তাঁর পেনশনও কেড়ে নেওয়া হতে পারে ৷