ম্যানহাটন, 11 সেপ্টেম্বর : 2001 সালের 11 সেপ্টেম্বর । অ্যামেরিকার কর্মব্যস্ততম শহর নিউ ইয়র্ক । স্থানীয় সময় তখন 8টা 45 মিনিট । ব্রুকলিন ব্রিজে তখন শহরে ঢোকার জন্য গাড়ির দীর্ঘ লাইন । নিউ ইয়র্কের 110 তলা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের একটি টাওয়ারে হঠাৎ আছড়ে পড়ল অ্যামেরিকান এয়ারলাইনের বোয়িং 767 বিমান । প্রায় 20 হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত হানে বিমানটি । প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন এটি দুর্ঘটনা । ততক্ষণে টাওয়ারে আগুন ধরে গেছে । মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ঝাঁপ দিচ্ছেন টাওয়ারের জানালা দিয়ে ।
তবে 18 মিনিটের মাথায় ভুল ভাঙে । দেখা যায় ইউনাইটেড এয়ারলাইনের আরও একটি বোয়িং 767 বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ারের 60তম তলায় আছড়ে পড়ল । বোঝা গেল এটি পরিকল্পিত হামলা । মুহূর্তেই ম্যানহাটনের ছবিটা বদলে গেল । ধুলো, ধোঁয়া, মানুষের চিৎকার । সবমিলিয়ে এক আতঙ্কের পরিবেশ । মানুষ যে যেদিকে পারছে পালানোর চেষ্টা করছে । কিছক্ষণের মধ্যেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি টাওয়ারই ভেঙে পড়ে ।
ইতিমধ্যে স্থানীয় সময় 9টা 45 মিনিটে অ্যামেরিকান এয়ারলাইনের বোয়িং 757 বিমান আঘাত হানে দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে । ওই হামলায় পেন্টাগনের 125 জন সামরিক-অসামরিক কর্মী নিহত হন । এ ছাড়া, হামলাকারী বিমানের 64 জন আরোহীও ঘটনাস্থানেই মারা যান ।
জঙ্গিরা আরও একটি বিমান নিয়ে হানার পরিকল্পনা করেছিল । সেই বিমান নিউজার্সির ন্যুয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে । বিমানটির নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা । যাত্রীরা বুঝে গেছিল কী হতে চলেছে । তাঁরা বাধা দেন জঙ্গিদের । সকাল 10টা 10 মিনিটে পেনসিলভেনিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি । নিজেদের প্রাণ দিয়ে যাত্রীরা জঙ্গিদের পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি ।
জঙ্গিদের সেই হামলায় 2996 জন নিহত এবং ছয় হাজারের বেশি জখম হয়েছিলেন । নিহতদের মধ্যে চারটি বিমানের 265 জন যাত্রী ছিলেন । মারা যায় হামলায় জড়িত 19 জন জঙ্গিও । সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মৃতদের মধ্যে দমকলের 343 জন ও পুলিশের 71 জন কর্মী ছিলেন । অ্যামেরিকার মাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে জাপানি বিমান হামলাতেও এত প্রাণহানি ঘটেনি । 1941 সালের 7 ডিসেম্বর ভোরে সেই হামলায় 2403 জন নিহত হন ।