নিউ ইয়র্ক, 7 অক্টোবর : গত সপ্তাহে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের জো বিডেনের বিতর্ক সভায় দর্শকরা সাক্ষী ছিলেন সভার সঞ্চালক কীভাবে প্রার্থীদের মাইক্রোফোন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন । সেই ঘটনার পর এই বুধবার রাতে দুই দলের ভাইস প্রেসিডেন্টপদপ্রার্থীদের বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে । বিতর্ক সভায় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী পেন্সের আচরণ অনেকটাই ট্রাম্পের মতো রুক্ষ । অ্যামেরিকায় কোরোনো মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, তার যথাযথ উত্তর তিনি বিতর্ক সভায় দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে । পেন্সের উলটো দিকে বিতর্ক সভায় যিনি থাকবেন তিনি কমলা হ্যারিস । তিনি অ্যামেরিকার এমন একজন মহিলা সেনেটর যিনি তাঁর ক্ষুরধার ও যুক্তিপূর্ণ প্রশ্নবাণে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে বিশেষ সুবিদিত ।
এই বিতর্ক সভায় অ্যামেরিকায় কোরোনা মহামারী প্রতিরোধে ট্রাম্প সরকারের ভূমিকা এবং সম্প্রতি হোয়াইট হাউজ়ে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও একাধিক উচ্চ পদস্থ সরকারি আধিকারিকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে । কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিতর্ক সভায় পেন্স ও হ্যারিস দুইজনকে কাচের দেওয়াল দ্বারা আলাদা রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে । পেন্স ও হ্যারিসের মধ্যে এই বিতর্ক সভা শুরু হবে বুধবার অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় অনুসারে রাত ৯টায় (EDT) উটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
দেখার বিষয় :
COVID– 19
কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ইতিমধ্যে অ্যামেরিকায় 2 লাখ 10 হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে । এই পরিস্থিতিতে মহামারী প্রতিরোধে ট্রাম্প সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ এই অভিযোগ উঠেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল সহ দেশের বিভিন্ন মহল থেকে । উল্লেখ্য, ট্রাম্প সরকারের তরফে এই মহামারী প্রতিরোধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য যে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স । তিনি বরাবর দাবি করে এসেছেন যে, কোরোনা মহামারী মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসন যথেষ্ট ভালো কাজ করছে । অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উড়িয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের জন্য ইতিমধ্যে ট্রাম্প বড় জমায়েত করে মিটিং মিছিল শুরু করে দিয়েছেন । তাই বিতর্ক সভায় কোরোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় ট্রাম্প সরকারের ভূমিকা কতটা ইতিবাচক এবং নির্বাচনী প্রচারে সামাজিক দূরত্ব শিকেয় তোলার যে অভিযোগ উঠেছে, সেই বিষয়গুলি নিয়ে পেন্সকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনেরাল কমলা হ্যারিস।
জাতি
অ্যামেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস প্রথম বাদামি মহিলা । তাই এই বিষয়টিও এবার সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশেষ মাত্রা পেয়েছে । তিনি ইতিমধ্যে একাধিকবার নিজের দলের অন্দরে এবং নির্বাচনী প্রচারে বর্ণ বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন । উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গত বিতর্ক সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ একটি মন্তব্য বর্ণ বৈষম্যের সমর্থন করে বলে সমালোচিত হয়েছিল । ২০১৭ সালে অ্যামেরিকার ভার্জিনিয়ায় বর্ণ বৈষম্যের সমর্থনকারী শ্বেতাঙ্গরা আন্দোলন শুরু করেছিল । উলটো দিকে সেই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল শ্বেতাঙ্গদের একটা অংশ । আন্দোলনের বিরোধিতা করায় একজনকে খুন করা হয় । এই বিষয়টি নিয়ে গত বিতর্ক সভায় ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, সেই আন্দোলেন দুই দিকেই ভালো লোকেরা ছিল । ট্রাম্পের এই মন্তব্য পরোক্ষে বর্ণ বৈষম্যকেই সমর্থন করে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল । এই বিষয়টি নিয়েও কমলা হ্যারিস বিতর্ক সভায় পেন্সকে প্রশ্ন করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
সুপ্রিম কোর্ট ও ঘটনাক্রম
সুপ্রিম কোর্টে আসীন রুথ ব্যাডার গিনসবার্গের মৃত্যুর পর তাঁর শূন্য আসনে কাউকে দ্রুত বসানোর জন্য বিশেষ চেষ্টা চলছে । রুথ ব্যাডার গিনসবার্গ গর্ভপাত, স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইশুতে বিশেষ সোচ্চার ছিলেন । উলটো দিকে পেন্স তাঁর কট্টরপন্থী ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য বিশেষ পরিচিত । তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ইতিমধ্যে গর্ভপাতের বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছেন এবং সেই সঙ্গে ভোটারদের এই বলেও সতর্ক করেছেন যে, ডোমোক্র্যাটরা ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিপক্ষে । উলটো দিকে কমলা হ্যারিস গর্ভপাতের স্বাধীনতার পক্ষে । তিনি এই বিষয়ে একাধিকবার নিজের মতামত স্পষ্ট করে দিয়েছেন । উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আদালত অ্যামেরিকায় সমলৈঙ্গিক বিবাহে স্বীকৃতি দিয়েছিল । কিন্তু সম্প্রতি সেই দেশের সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সেই রায় নিয়ে প্রশ্ন করেন এবং বলেন যে, রায় পুনর্বিবেচনা করা উচিত । এই ঘটনা সেই দেশের উদারপন্থী জনগণের মধ্যে বিশেষ আশঙ্কা তৈরি করেছে । তাঁরা মনে করছে যে, আগামী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হলে সেই রায় পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে । উল্লেখ্য, কমলা হ্যারিস শুধু গর্ভপাত নয়, সমলৈঙ্গিক বিবাহেরও জোরদার সমর্থক । উলটো দিকে ইন্ডিয়ানার গভর্নর থাকাকালীন পেন্স ২০১৫ সালে বিশেষ একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন যার দ্বারা ধর্মীয় কারণে ব্যবসায়ীরা সমকামী পুরুষদের কাজে নিয়োগে বন্ধ করতে পারেন ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পেন্সকে ট্রাম্পের উত্তরসূরী মনে করা হচ্ছে । রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেন্স প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারেন । কারণ তাঁর ইন্ডিয়ানায় গভর্নর হিসেবে এবং ট্রাম্প সরকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অন্যদের তুলনায় কয়েক কদম এগিয়ে রাখবে । সেই তুলনায় কমলা হ্যারিসের অভিজ্ঞতা কিছুটা কম । তবে তাঁরও ভবিষ্যতে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে । যেহেতু ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে বিডেন দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন, তাই ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের ফের লড়াই করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ।
লিঙ্গ ভিত্তিক ইশু
গত বিতর্ক সভায় প্রতিপক্ষ দুইজন এবং সঞ্চালক প্রত্যেকেই ছিলেন পুরুষ । কিন্তু এবারের বিতর্ক সভায় অন্যতম প্রার্থী কমলা হ্যারিস হলেন মহিলা । তিনি অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত চতুর্থ মহিলা । এছাড়া এবারের বিতর্ক সভায় সঞ্চালকও একজন মহিলা যাঁর নাম সুসান পেজ । তিনি USA টুডে পত্রিকার ওয়াশিংটন বিউরোর প্রধান । প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নেমে ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পেন্স অ্যামেরিকার মহিলা ভোটারদের মন জয় করতে সম্ভাব্য সমস্ত চেষ্টা করেছেন । অন্যদিকে কমলা হ্যারিসও পিছিয়ে নেই । তিনিও মহিলা ভোটারদের মন জয় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তাঁর নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম ইশু হল গর্ভপাতের স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য পরিষেবার বিমার সুবিধা নিশ্চিত করা ইত্যাদি ।
নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা
ট্রাম্প কোভিডে আক্রান্ত হলেও কোভিড পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে পেন সংক্রমিত নন । তবে বিতর্ক সভায় কোনও ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না । পেন্স ও হ্যারিস দুইজনকেই কমপক্ষে ১২ ফিট দূরত্বে রাখা হবে । তাঁরা নিজেদের মধ্যে করমর্দনও করবেন না । তবে তাঁরা কেউই মাস্ক পরবেন না । তা ছাড়া বিতর্ক সভায় নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শকের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে ।
ট্রাম্প
বিতর্ক সভায় ট্রাম্প থাকবেন না । তবে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তিন দিন সেনা হাসপাতালে থাকার পর তিনি হোয়াইট হাউজ়ে ফিরে ফের টুইটারে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন । তাই বিতর্ক সভা যখন চলবে তখন ট্রাম্প যিনি টেলিভিশনে খবর দেখতে বিশেষ পছন্দ করেন, টুইটারে ফের সক্রিয় হয়ে উঠবেন বলে আশা করা যাচ্ছে ।