কাকদ্বীপ, 3 জানুয়ারি: সাধারণত বঙ্গোপসাগরের নোনা জলেই বসবাস তার ৷ তবে মাঝে মধ্যে খাবারে খোঁজে ভেসে আসে নদীর চরেও ৷ এবার তাতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেল সুন্দরবনের ঘোড়ামারা দ্বীপে ৷ কারণ, এর আগে কখনও বিশালাকার কালো রঙের তিমি চোখে দেখেননি এলাকাবাসী কিংবা মৎসজীবীরা ৷
ভাটাতে মুড়িগঙ্গা নদীর জল নামা শুরু হয়েছে ৷ আর তাতেই তীরে বিশালাকার তিমিটির দেখা পান মৎসজীবীরা ৷ দানবীয় তিমি দেখে স্বাভাবিকভাবেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় তাদের ৷ মৎসজীবীদের চিৎকারে নদীর তীরে ভিড় জমান এলাকাবাসী ৷ বিশালাকার এই তিমি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলে ৷
জানা গিয়েছে, প্রায় 20 ফুট দৈর্ঘ্যের তিমি অতীতে কখনও মুড়িগঙ্গা নদীতে দেখা যায়নি । ফলে, মুড়িগঙ্গায় এই বিশাল আকারের তিমি কোথা থেকে এলো, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা শুরু হয় । ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দা সঞ্জীব সাগর বলেন, "এর আগে এই নদীতে কখনও তিমি মাছ দেখা যায়নি । ঘোড়ামারা দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে মুড়িগঙ্গার চরে তিমিটিকে প্রথম দেখা যায় । তাকে জ্যান্ত দেখে এলাকার লোকজন ঠেলে নদীর জলে নিয়ে যায় । জল পেতেই তিমিটা ঝটকা দিয়ে নড়ে ওঠে ৷ ফের জলে চলে যায় সে ৷"
নদীতে বিশালাকার তিমি দেখে একদিকে যেমন উৎসাহিত হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী ৷ অন্যদিকে, তাকে নিয়ে মৎস্যজীবীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় । মূলত, ডিঙি নৌকা এবং ছোট ভুটভুটিতে করে মুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ ধরতে যান মৎস্যজীবীরা । বিশালাকার এই তিমির হামলায় যেকোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের ৷ সেকারণে, তিমিটিকে সাগরে ফেরানোর কাজ শুরু করেন বনকর্মীরা ৷ পুলিশ এবং মৎস্যজীবীদের সহযোগিতায় লঞ্চ এবং স্পিডবোটে করে মুড়িগঙ্গা নদীতে তিমির অবস্থান জানতে খোঁজ শুরু করেন তারা ৷
জেলা প্রশাসনের একাংশের মতে, দলছুট হয়ে খাবারের সন্ধানে নদীর তীরে চলে এসেছিল তিমিটি । দক্ষিণ 24 পরগনার সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগ বলেন, "গভীর সমুদ্রে না পৌঁছনো পর্যন্ত তিমিটি বারবার বাধা পেতে থাকবে । কারণ, নদীতে প্রচুর ট্রলার ও মাছ ধরার জাল পাতা থাকে । বিষয়টি জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-কে জানানো হয়েছে ।" এলাকাবাসী সঞ্জীব সাগর বলেন, "তিমিটিকে নদীতে ফেরানোর পর আতঙ্কে মাছ ধরতে যেতে চাইছে না মৎসজীবীরা । তিমিটিকে নদী থেকে দ্রুত সমুদ্রে পাঠানো না গেলে, যে কোনও মুহূর্তে কারও প্রাণ যেতে পারে ।"
এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সঞ্চার ঘটলেও, নদীর জলে নিজের তালে বেশ খোশমেজাজেই রয়েছে তিমিটি ৷ সারাদিন নদীতে তাকে বেশ কয়েকবার মুড়িগঙ্গার জলে ভাসতে দেখেন ভেসেলের যাত্রীরা । আর তাকে দেখে কাকদ্বীপের লট নম্বর আট থেকে সাগরের কচুবেড়িয়ার জেটিঘাট পর্যন্ত নদীতে যাতায়াতকারী নিত্যযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে ৷ সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা ৷ মূলত, এই পথে তীর্থযাত্রীরা বার্জ, ভেসেল এবং লঞ্চে করে মুড়িগঙ্গা নদী পারাপার করবেন । তার আগে নদীতে বিশালাকার তিমির আনাগোনায় উদ্বিগ্ন জেলা বন দফতর থেকে পুলিশ প্রশাসন । বন দফতরের পক্ষ থেকে তিমিটিকে দ্রুত বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ৷