বর্ধমান, ২৮ এপ্রিল: বর্ধমানের জামালপুরের সভা থেকে শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "বর্ধমানের মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে জোড়া ফুলে ভোট দিন । আর BJP-কে ভালো করে এই মাটিতে গণতন্ত্রের কবর দিন। গণতন্ত্রের কবর দিন । আর গণতন্ত্রের কবর দিন ।" তাঁর এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন অনেকে।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, "গণতন্ত্রের কবর মুখ্যমন্ত্রী আর দেবেন কী করে ? উনি তো গণতন্ত্রের কবর দিয়েছেন। গণতন্ত্রের কবর জনগণ কী করে দেবে ? গণতন্ত্রের কবর মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই দিয়েছেন । সেটা রাজ্যে আমরা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি । ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থীকে আক্রমণ করা হয়েছে । সেখানকার স্থানীয় কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন । তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে । নির্বাচনে প্রার্থী যদি রেহাই না পান সেখানে গণতন্ত্রের সমাধি তো তৈরি করাই হয়েছে । উনি আর কী করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবেন ? করেছেন তো । উনি গণতন্ত্রের কবর দিয়েছেন বলেই ওঁনার মুখে গণতন্ত্রের কবর কথাটা আসছে । গণতন্ত্রের কবর দিয়েই কাজ শুরু করেছেন । তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কথাটা ।"
কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেন, "পশ্চিমবাংলায় উনি গণতন্ত্র রক্ষা করেননি । উনি গণতন্ত্রকে বাঁচাতে পারেননি । মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছে ওঁনার দলের লোকেরা ।"
এই বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "এই কথাটি একজন প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উনি কখনই বলতে পারেন না । কারণ উনি প্রশাসনিক প্রধান বা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে । উনি সংবিধান রক্ষা ও সংবিধানের আদর্শ তুলে ধরার শপথ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছেন । গণতন্ত্রের কবর দিন বলা মানে সম্পূর্ণ একটা অসাংবিধানিক স্লোগানকে জোর গলায় বলা । এই কথাটা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে একেবারেই সমীচীন নয় । একদমই বেমানান একটা স্লোগান । এতে বোঝা যায় গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর কী মনোভাব। খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা এই রাজ্যে বাস করি । তিনি আমাদেরও মুখ্যমন্ত্রী । সবার মুখ্যমন্ত্রী । মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই কথা তিনি কী করে বলেন ? তিনি যদি বলে থাকেন তবে আমার মনে হয় তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত । সেই বক্তব্য সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করা উচিত ।" তাঁর আরও বক্তব্য, " মুখ্যমন্ত্রী এত গণতান্ত্রিক কথা নিয়ে বড়াই করেন, সারা ভারতে তিনি গণতান্ত্রিক জোট করছেন গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য । আর নিজের মুখে বলছেন গণতন্ত্রের কবর দিন । এতে তাঁর দ্বিচারিতা সামনে এসে যাচ্ছে ।"