বলরামপুর, 15 মার্চ : বলরামপুরে মমতার সভা থেকেই ফের একবার হাওয়া বদলের গন্ধ পাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ৷ অনেকেই মনে করছেন, পদ্ম ছেড়ে আবারও ঘাসফুলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে পুরুলিয়াবাসী ৷ কেন বলা হচ্ছ একথা ? তার ব্যাখ্য়ায় সামনে আনা হচ্ছে বেশ কিছু যুক্তি ৷
সোমবার পুরুলিয়ায় জোড়া সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ প্রথম সভাটি হয় বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্রের ঝালদায় ৷ পরেরটি বলরামপুর বিধানসভার রথতলা ময়দানে ৷ দু’টি ক্ষেত্রেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো ৷ আর এখানেই নতুন সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা ৷ তাঁদের মতে, 2018 সালে রাজ্য়ে পঞ্চায়েত ভোটের আবহেই খুন হয়েছিলেন বিজেপির দুই তরুণ কর্মী ৷ সেই ঘটনা পুরুলিয়াবাসীর থেকে তৃণমূলকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল ৷ যার রেশ গড়ায় লোকসভা ভোট পর্যন্ত ৷ পুরুলিয়ায় পদ্ম ফোটায় বিজেপি ৷ আর তারপর থেকেই আত্মতুষ্টিতে ভুগতে শুরু করেন বিজেপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা ৷
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিজেপি ধরেই নিয়েছে তারা রাজ্যের ক্ষমতায় আসছে ৷ তাই বদলে গিয়েছে তাদের আচার-আচরণ ৷ আমজনতার সঙ্গে কথাই বলতে চাইছেন না স্থানীয় নেতারা ৷ পাশাপাশি, জনসংযোগও কমছে ৷ আর এই দূরত্বকে কাজে লাগিয়েই আখের গোছাতে চাইছে তৃণমূল ৷ জেলাজুড়ে সংগঠনের ভিত মজবুত করা হচ্ছে ৷ সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জনসংযোগের উপর ৷ পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে প্রচার করছেন তৃণমূলকর্মীরা ৷ বুথস্তরে বাড়ানো হয়েছে সভা, জমায়েতের সংখ্যা ৷
আরও পড়ুন : 18 মার্চ পুরুলিয়ায়, 2 দিন পর কাঁথিতে মোদি
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তৃণমূলের এই উদ্য়োগেই উপচে গিয়েছে মমতার এদিনের দু’টি সভা ৷ বলরামপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শান্তিরাম মাহাত ৷ এর আগেও এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে পরপর দু’বার (2011, 2016) বিধায়ক হয়েছেন তিনি ৷ হয়েছেন মন্ত্রীও ৷ সামলেছেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরও ৷ এবারও তাই শান্তিরামের উপরেই ভরসা রেখেছেন মমতা ৷
এদিন বলরামপুরের রথতলা ময়দানে সভা ছিল মমতার ৷ সভামঞ্চের পিছনেই তৈরি করা হয় অস্থায়ী হেলিপ্য়াড ৷ তৃণমূল সুপ্রিমোর হেলিকপ্টার সেখানে নামে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ৷ মমতা ভাষণ শুরু করেন তিনটে নাগাদ ৷ বক্তব্য রাখেন প্রায় 40 মিনিট ৷ পায়ে প্লাস্টার থাকায় ব়্যাম্পের উপর দিয়ে হুইলচেয়ারে বসিয়ে তাঁকে সভামঞ্চে পৌঁছে দেওয়া হয় ৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হতেই সভাস্থলে ভিড় আরও বাড়তে থাকে ৷ যেখানে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো ৷
রুখা-শুখা এই জেলা বরাবরই কৃষিকাজে পিছিয়ে ৷ এদিন বলরামপুরের সভামঞ্চ থেকে জেলার চিরাচরিত সেই রূপই বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মমতা ৷ তিনি জানান, পুরুলিয়াকে শস্য শ্য়ামলা করতে উদ্যোগ শুরু করেছে তাঁর সরকার ৷ মাটির চরিত্র বদলে তাকে যাতে চাষযোগ্য করে তোলা যায়, তার জন্য শুরু হয়েছে গবেষণা ৷ উর্বর মাটি তৈরি করতে জেলা জুড়ে কাজ চলছে ৷ হাতে নেওয়া হয়েছে 64 হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৷ এছাড়াও, পুরুলিয়া ও পুরুলিয়াবাসীর উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার কী কী কাজ করেছে এবং করছে, তারও লম্বা ফিরিস্তি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তুলে ধরেছেন তৃণমূল জমানায় পুরুলিয়ার রাস্তাঘাট-সহ সামগ্রিক উন্নয়নের ছবি ৷
আরও পড়ুন : অভিমান ভুলে দলীয় কর্মীদের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার বার্তা মমতার
সভামঞ্চ থেকে ফের একবার নন্দীগ্রামে তাঁর আহত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন মমতা ৷ তিনি বলেন, আঘাত তিনি আগেও পেয়েছেন ৷ কিন্তু এভাবে তাঁকে কোনওদিন থামানো যায়নি ৷ মমতার দাবি, পায়ে চোট লাগার পর অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি আর নির্বাচনের ময়দানে থাকবেন না ৷ কিন্তু সেই অনুমান যে ভুল, তা তিনি ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে দিয়েছেন বলে বার্তা মমতার ৷ তাঁর আশঙ্কা, তিনি ভোটের ময়দান থেকে সরে গেলে বহিরাগতরা ভোট লুট করবে ৷ কিন্তু প্রাণ থাকতে তিনি তা হতে দেবেন না বলে জানান তৃণমূল সুপ্রিমো ৷
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ায় মোট বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে ন’টি (বলরামপুর, বাঘমুণ্ডী, পুরুলিয়া, পাড়া, কাশীপুর, মানবাজার, বান্দোয়ান, রঘুনাথপুর এবং জয়পুর) ৷ বলরামপুর ও জয়পুর বাদে বাকি আসনগুলিতে তৃণমূলের প্রার্থীরা হলেন যথাক্রমে সুশান্ত মাহাত, সুজয় বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, উমাপদ বাউরি, স্বপন বেলথোরিয়া, সন্ধ্য়ারানি টুডু, রাজীব লোচন টুডু এবং হাজারি বাউরি ৷ জয়পুরে উজ্জ্বল কুমারকে প্রার্থী করা হলেও পরে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন ৷ সূত্রের খবর, হলফনামায় ত্রুটি থাকাতেই এই পদক্ষেপ ৷ মনে করা হচ্ছে, ওই আসনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দিব্যজ্যোতি সিংদেওকে সমর্থন করতে পারে শাসকদল ৷