ETV Bharat / elections

পুরুলিয়ার জলকষ্ট কি ম্যান-মেড ? মোদির রামায়ণ প্রসঙ্গে উঠছে প্রশ্ন

author img

By

Published : Mar 18, 2021, 3:45 PM IST

Updated : Mar 18, 2021, 4:30 PM IST

পুরুলিয়ার ভাঙড়ার সভামঞ্চ থেকে জেলার জলকষ্ট নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁর প্রশ্ন, রামায়ণের বর্ণনাতেও পুরুলিয়ার ভৌম জলের অফুরন্ত ভাণ্ডারের উল্লেখ আছে ৷ তাহলে আজ সেই ভূমি এত রুখা, শুখা কেন ? মোদির আশ্বাস, বিজেপির সরকার ক্ষমতায় এলে জেলার এই সমস্য়া মিটবেই ৷

west bengal assembly election 2021_prime minister narendra modi question water crisis of purulia referring ramayana
পুরুলিয়ার জলকষ্ট কি ‘ম্য়ান-মেড’ ? মোদির রামায়ণ প্রসঙ্গে উঠছে প্রশ্ন

ভাঙড়া (পুরুলিয়া), 18 মার্চ : ক্য়ালেন্ডারের তারিখ মাঝ-মার্চ পার ৷ দক্ষিণবঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে সুয্যিমামার আঁচ ৷ পুড়ছে পুরুলিয়ার রুখা মাটি ৷ শুখা মরশুমে বাড়ছে জলকষ্ট ৷ সদরের লোকেরা তবু দিনে একবার করে হলেও টাইম কলের জল ঘরে পাচ্ছে ৷ বাকিদের অবস্থা আরও শোচনীয় ৷ কংসাবতীতে এখন ক্ষীণ ধারা ৷ ভাঁড়ার কমছে পুকুর, জলাশয়ের ৷ তবুও রোজের কাজ সারতে এগুলোই ভরসা পুরুলিয়াবাসীর ৷ আর পানীয় জল পেতে কখনও দাঁড়াতে হচ্ছে টিউবওয়েলের লম্বা লাইনে, আবার কখনও মাইলের পর মাইল উজিয়ে মিলছে মাত্র দুই জ্য়ারিকেন জল ৷

পুরুলিয়ার মানুষের এই বেহাল দশা অজানা নয় দেশের প্রশাসনিক প্রধানেরও ৷ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার ভাঙড়ায় নির্বাচনী জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভাষণের শুরুতেই জেলার মানুষের জলকষ্টের কথা তুলে ধরেন তিনি ৷ জলযন্ত্রণার সঙ্গে জুড়ে দেন রামায়ণের মিথ !

পুরুলিয়ার আনাচ-কানাচে কান পাতলে শোনা যায় এক কাহিনি ৷ সেই কাহিনি রাম-সীতার ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, 14 বছরের বনবাস হওয়ার পর পঞ্চাবটী যাওয়ার পথে পুরুলিয়াতেও এসেছিলেন রাম-সীতা ৷ একটানা পথ হেঁটে অযোধ্যার সাম্রাজ্ঞী তখন ক্লান্ত, পিপাসার্ত ৷ স্ত্রীর কষ্ট বুঝেই তা নিবারণে তৎপর হন শ্রীরাম ৷ পাহাড়ি মাটিতে তির ছুড়ে বের করে আনেন মিষ্টি জলের ধারা ৷ তাতেই তেষ্টা মেটান সীতা ৷

এদিন সভামঞ্চে রামায়ণের এই প্রসঙ্গই টেনে আনেন নরেন্দ্র মোদি ৷ তবে মহাকাব্যের পাঠ দেওয়া তাঁর লক্ষ্য ছিল না মোটেই ৷ বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, রাজনীতির মঞ্চে জলকষ্ট ও তাকে ঘিরে মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্য়াকে সহজ ভাষায় আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়া ৷ মোদির যুক্তি ছিল সহজ ৷ তাঁর বক্তব্য, ভৌম জলের ভাণ্ডার কতটা পরিপুষ্ট হলে স্রেফ তির মেরেই তাকে মাটির উপরে তুলে আনা যায় ৷ অথচ সেই পুরুলিয়াতেই এখন জলকষ্ট প্রায় সারা বছরের সঙ্গী ৷ মোদির অভিযোগ, পূর্বতন বামফ্রন্ট এবং বর্তমান তৃণমূল সরকারই এর জন্য দায়ী ৷ তারা চাইলে অনায়াসে ভৌম জলের ভাণ্ডার ব্য়বহার করে জেলার মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারত ৷ কিন্তু তা করা হয়নি ৷

west bengal assembly election 2021_prime minister narendra modi question water crisis of purulia referring ramayana
পুরুলিয়ার ভাঙড়ায় নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী জনসভা ৷

পুরুলিয়া স্থানীয় তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, মোদির যুক্তিতে জোর আছে যথেষ্ট ৷ কেন ? এর উত্তর লুকিয়ে আছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নামকরণেই ৷ যে নামকরণের কথা এদিন মোদির ভাষণেও উঠে এসেছে ৷ উঠে এসেছে সীতাকুণ্ডের কথা ৷ সীতাকুণ্ড হল সেই জায়গা, যেখানে রামচন্দ্র তির ছুড়ে ভৌম জলের স্রোত মাটির উপর তুলে এনেছিলেন বলে কথিত আছে ৷

জেলার অভিজ্ঞ ঐতিহাসিক মহল ও ভূগোল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযোধ্য়া পাহাড়ের নামকরণের পিছনে একটা বিশেষ কারণ রয়েছে ৷ মাটির নীচে অঝোর জলের হ্রদ থাকাতেই এই নামকরণ ৷ আসলে জায়গাটির নাম হল ‘অঝৈদা’ (দা অর্থে দহ বা হ্রদ) ৷ পরে লোকমুখে তা হয়ে যায় অযোধ্যা ৷ অর্থাৎ ভৌম জলের ভাণ্ডার এখানকার অন্যতম ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ৷ যা আজও বিদ্যমান ৷

মোদির রামায়ণ প্রসঙ্গে উঠছে প্রশ্ন

পুরুলিয়া জেলার মোট চারটি থানা (বলরামপুর, বাঘমুণ্ডী, আরশা, কোটশিলা) জুড়ে রয়েছে অযোধ্য়া পাহাড় ও তার লাগোয়া এলাকা ৷ এই গোটা এলাকায় পাহাড়ের নানা অংশে অন্তত 20টি ঝরনা রয়েছে, যেগুলি আজও ভৌম জলে পুষ্ট ৷ এর মধ্যে বামনি আর টুর্গা অন্যতম ৷ এমনকি, বামনি ঝরনার জল ব্য়বহার করে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ারও উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার ৷ ঠিক হয়েছিল, 1000 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এই কেন্দ্রে ৷ কিন্তু এর জন্য প্রায় 3 লাখ গাছ কাটার প্রয়োজন ৷ আর তাতেই বেঁকে বসেন পরিবেশবিদরা ৷ মামলা যায় গ্রিন ট্রাইবিউনালে ৷ ট্রাইবুনাল প্রকল্প রূপায়ণে স্থগিতাদেশ জারি করে ৷

আরও পড়ুন : টিএমসি-র পাল্টা মোদির দাওয়াই ডিবিটি !

সীতাকুণ্ড-ও এমনই একটি ঝরনা ৷ অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপের এই ‘কুণ্ডে’ সারা বছর জল থাকে ৷ ভূগোলের ভাষায় একে বলে আর্টেজিও কূপ ৷ মূলত, ভূগর্ভস্থ জলের চাপেই সঞ্চিত ভৌমজল মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে এই রকম কূপ তৈরি করে ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও তার রূপায়নে জলের এই ভাণ্ডার মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতেই পারে ৷ তবে তাতে পরিবেশের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে ৷

এই প্রসঙ্গে কোটশিলার মুরগুমা সেচ প্রকল্পের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য ৷ একটি জলাধার ঘিরে সেখানে তৈরি হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র ৷ জলাধারের জলই ব্য়বহার করা হচ্ছে সেচের কাজে ৷ তবে কি এইসব তথ্যতালিকা মাথায় রেখেই ভাষণের শুরুতে রামায়ণের কাহিনি শোনালেন মোদি ? তাঁর আশ্বাস, 2 মে-র পর বিজেপির সরকার গঠিত হলে পুরুলিয়ার জলের সমস্য়া মেটাতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবেন তাঁরা ৷

ভাঙড়া (পুরুলিয়া), 18 মার্চ : ক্য়ালেন্ডারের তারিখ মাঝ-মার্চ পার ৷ দক্ষিণবঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে সুয্যিমামার আঁচ ৷ পুড়ছে পুরুলিয়ার রুখা মাটি ৷ শুখা মরশুমে বাড়ছে জলকষ্ট ৷ সদরের লোকেরা তবু দিনে একবার করে হলেও টাইম কলের জল ঘরে পাচ্ছে ৷ বাকিদের অবস্থা আরও শোচনীয় ৷ কংসাবতীতে এখন ক্ষীণ ধারা ৷ ভাঁড়ার কমছে পুকুর, জলাশয়ের ৷ তবুও রোজের কাজ সারতে এগুলোই ভরসা পুরুলিয়াবাসীর ৷ আর পানীয় জল পেতে কখনও দাঁড়াতে হচ্ছে টিউবওয়েলের লম্বা লাইনে, আবার কখনও মাইলের পর মাইল উজিয়ে মিলছে মাত্র দুই জ্য়ারিকেন জল ৷

পুরুলিয়ার মানুষের এই বেহাল দশা অজানা নয় দেশের প্রশাসনিক প্রধানেরও ৷ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার ভাঙড়ায় নির্বাচনী জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভাষণের শুরুতেই জেলার মানুষের জলকষ্টের কথা তুলে ধরেন তিনি ৷ জলযন্ত্রণার সঙ্গে জুড়ে দেন রামায়ণের মিথ !

পুরুলিয়ার আনাচ-কানাচে কান পাতলে শোনা যায় এক কাহিনি ৷ সেই কাহিনি রাম-সীতার ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, 14 বছরের বনবাস হওয়ার পর পঞ্চাবটী যাওয়ার পথে পুরুলিয়াতেও এসেছিলেন রাম-সীতা ৷ একটানা পথ হেঁটে অযোধ্যার সাম্রাজ্ঞী তখন ক্লান্ত, পিপাসার্ত ৷ স্ত্রীর কষ্ট বুঝেই তা নিবারণে তৎপর হন শ্রীরাম ৷ পাহাড়ি মাটিতে তির ছুড়ে বের করে আনেন মিষ্টি জলের ধারা ৷ তাতেই তেষ্টা মেটান সীতা ৷

এদিন সভামঞ্চে রামায়ণের এই প্রসঙ্গই টেনে আনেন নরেন্দ্র মোদি ৷ তবে মহাকাব্যের পাঠ দেওয়া তাঁর লক্ষ্য ছিল না মোটেই ৷ বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, রাজনীতির মঞ্চে জলকষ্ট ও তাকে ঘিরে মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্য়াকে সহজ ভাষায় আমজনতার কাছে পৌঁছে দেওয়া ৷ মোদির যুক্তি ছিল সহজ ৷ তাঁর বক্তব্য, ভৌম জলের ভাণ্ডার কতটা পরিপুষ্ট হলে স্রেফ তির মেরেই তাকে মাটির উপরে তুলে আনা যায় ৷ অথচ সেই পুরুলিয়াতেই এখন জলকষ্ট প্রায় সারা বছরের সঙ্গী ৷ মোদির অভিযোগ, পূর্বতন বামফ্রন্ট এবং বর্তমান তৃণমূল সরকারই এর জন্য দায়ী ৷ তারা চাইলে অনায়াসে ভৌম জলের ভাণ্ডার ব্য়বহার করে জেলার মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারত ৷ কিন্তু তা করা হয়নি ৷

west bengal assembly election 2021_prime minister narendra modi question water crisis of purulia referring ramayana
পুরুলিয়ার ভাঙড়ায় নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী জনসভা ৷

পুরুলিয়া স্থানীয় তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, মোদির যুক্তিতে জোর আছে যথেষ্ট ৷ কেন ? এর উত্তর লুকিয়ে আছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নামকরণেই ৷ যে নামকরণের কথা এদিন মোদির ভাষণেও উঠে এসেছে ৷ উঠে এসেছে সীতাকুণ্ডের কথা ৷ সীতাকুণ্ড হল সেই জায়গা, যেখানে রামচন্দ্র তির ছুড়ে ভৌম জলের স্রোত মাটির উপর তুলে এনেছিলেন বলে কথিত আছে ৷

জেলার অভিজ্ঞ ঐতিহাসিক মহল ও ভূগোল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অযোধ্য়া পাহাড়ের নামকরণের পিছনে একটা বিশেষ কারণ রয়েছে ৷ মাটির নীচে অঝোর জলের হ্রদ থাকাতেই এই নামকরণ ৷ আসলে জায়গাটির নাম হল ‘অঝৈদা’ (দা অর্থে দহ বা হ্রদ) ৷ পরে লোকমুখে তা হয়ে যায় অযোধ্যা ৷ অর্থাৎ ভৌম জলের ভাণ্ডার এখানকার অন্যতম ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ৷ যা আজও বিদ্যমান ৷

মোদির রামায়ণ প্রসঙ্গে উঠছে প্রশ্ন

পুরুলিয়া জেলার মোট চারটি থানা (বলরামপুর, বাঘমুণ্ডী, আরশা, কোটশিলা) জুড়ে রয়েছে অযোধ্য়া পাহাড় ও তার লাগোয়া এলাকা ৷ এই গোটা এলাকায় পাহাড়ের নানা অংশে অন্তত 20টি ঝরনা রয়েছে, যেগুলি আজও ভৌম জলে পুষ্ট ৷ এর মধ্যে বামনি আর টুর্গা অন্যতম ৷ এমনকি, বামনি ঝরনার জল ব্য়বহার করে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ারও উদ্যোগ নিয়েছিল রাজ্য সরকার ৷ ঠিক হয়েছিল, 1000 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে এই কেন্দ্রে ৷ কিন্তু এর জন্য প্রায় 3 লাখ গাছ কাটার প্রয়োজন ৷ আর তাতেই বেঁকে বসেন পরিবেশবিদরা ৷ মামলা যায় গ্রিন ট্রাইবিউনালে ৷ ট্রাইবুনাল প্রকল্প রূপায়ণে স্থগিতাদেশ জারি করে ৷

আরও পড়ুন : টিএমসি-র পাল্টা মোদির দাওয়াই ডিবিটি !

সীতাকুণ্ড-ও এমনই একটি ঝরনা ৷ অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপের এই ‘কুণ্ডে’ সারা বছর জল থাকে ৷ ভূগোলের ভাষায় একে বলে আর্টেজিও কূপ ৷ মূলত, ভূগর্ভস্থ জলের চাপেই সঞ্চিত ভৌমজল মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে এই রকম কূপ তৈরি করে ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও তার রূপায়নে জলের এই ভাণ্ডার মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতেই পারে ৷ তবে তাতে পরিবেশের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে ৷

এই প্রসঙ্গে কোটশিলার মুরগুমা সেচ প্রকল্পের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য ৷ একটি জলাধার ঘিরে সেখানে তৈরি হয়েছে পর্যটনকেন্দ্র ৷ জলাধারের জলই ব্য়বহার করা হচ্ছে সেচের কাজে ৷ তবে কি এইসব তথ্যতালিকা মাথায় রেখেই ভাষণের শুরুতে রামায়ণের কাহিনি শোনালেন মোদি ? তাঁর আশ্বাস, 2 মে-র পর বিজেপির সরকার গঠিত হলে পুরুলিয়ার জলের সমস্য়া মেটাতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবেন তাঁরা ৷

Last Updated : Mar 18, 2021, 4:30 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.