কলকাতা, 14 এপ্রিল : রাজ্যে চূড়ান্ত ব্যস্ততায় সিবিআই (CBI Investigating Several Cases of Bengal)। এই মুহূর্তে নারী নির্যাতন থেকে দুর্নীতি, খুন, গণহত্যার মতো একাধিক ঘটনার তদন্তের ভার রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ব্যুরোর হাতে ৷ সেই কারণেই চরম ব্যস্ততা সিজিও কমপ্লেক্স থেকে নিজাম প্যালেসে ৷ অথচ ঠিক সেই সময়ে চরম নিস্তব্ধতা এবং দোলাচালে দিন কাটছে ভবানী ভবনের অন্দরে (CID Struggles to Complete Many Investigation) ।
সিআইডি রাজ্যে যে ক’টি ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেছিল, তার মধ্যে সিংহভাগের তদন্তই এখনও পর্যন্ত অসমাপ্ত রয়েছে । সিআইডির আধিকারিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের একাধিক বিভাগে দক্ষ পুলিশ আধিকারিকের অভাব রয়েছে । ফলে একই পুলিশ আধিকারিকের ওপর একাধিক ঘটনার তদন্তভার চলে আসছে। তাই তদন্তের গতি কমে যাচ্ছে ৷
গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার অভিযান চলাকালীন পূর্ব মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Bengal CM Mamata Banerjee) পায়ে চোট লাগে । সেই ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি । কিন্তু সেই ঘটনার তদন্ত এখনও পর্যন্ত থমকে রয়েছে । ভবানী ভবন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা গ্রেফতার করতে সক্ষম হননি সিআইডির গোয়েন্দারা ।
2018 সালের 13 অক্টোবর তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) নিরাপত্তারক্ষী সুব্রত চক্রবর্তী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান । সেই ঘটনার বেশ কয়েক মাস পর মৃত নিরাপত্তারক্ষীর পরিবারের তরফ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় । সেই ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি । এক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে গিয়ে সিআইডির গোয়েন্দারা একাধিকবার তদন্ত করলেও আজ পর্যন্ত সেই ঘটনার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি । পাশাপাশি এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করতে সক্ষম হননি সিআইডির গোয়েন্দারা ।
2021 সালের 17 ফেব্রুয়ারি নিমতিতা রেল স্টেশনের ওপর বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেন-সহ 27 জন গুরুতরভাবে আহত হন । সেই ঘটনায় তদন্তভার গ্রহণ করে সিআইডি । একাধিকবার নিমতিতা রেল স্টেশনের সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাতে দেখা যায় সিআইডির গোয়েন্দাদের । কিন্তু প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি ৷
2021 সালের 29 জুলাই বাঁকুড়ায় শিশুপাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রথমদিকে তিনজনকে গ্রেফতার করলেও পরবর্তীকালে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে থাকে । এখনও পর্যন্ত সেই ভাবে কাউকে গ্রেফতার করে উঠতে পারেনি সিআইডি ।
অতি সম্প্রতি হাওড়া আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খান খুনের তদন্তে নামে সিআইডির স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিভ টিম । এই ঘটনা তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য দাবি করেছিলেন, ঘটনার 15 দিনের মধ্যে আসল অভিযুক্তদের সামনে আনা হবে । কিন্তু সেই ঘটনার প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও শুধুমাত্র কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং একজন হোম গার্ডকে গ্রেফতার ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি সিআইডির স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিভ টিম । পাশাপাশি আমতা থানার ওসিকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল । তদন্তে নেমে আমতা থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর ইনচার্জকে মাত্র দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তদন্ত প্রক্রিয়া একেবারে থিতিয়ে গিয়েছে ।
এই সব বিষয়ে ভবানী ভবনের সাফাই, তাদের হাতে দক্ষ পুলিশ অফিসার নেই । তাছাড়াও একজন পুলিশ আধিকারিকের ওপর 5 থেকে 6 টি মামলার দায়িত্ব । তাছাড়াও সিআইডিতে যে প্রক্রিয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করা হয়, সেই কাজ বুঝে ওঠার আগেই সিআইডি থেকে বদলি করে দেওয়া হয় একাধিক তদন্তকারী আধিকারিকদের । ফলে সে ক্ষেত্রে নতুন পুলিশ আধিকারিক এসে পুরোটা বুঝতেই অনেকটা সময় নিয়ে নেন ৷ ফলে তদন্ত থমকে যাচ্ছে বারবার ৷
আরও পড়ুন : CBI Probe on Hanskhali Rape : হাঁসখালি গণধর্ষণের তদন্তে অভিযুক্তের বাড়ির দরজা ভাঙল সিবিআই