কলকাতা, 9 মে: লকডাউন উঠে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা, শিক্ষাবর্ষসহ বিষয়গুলি নিয়ে ব্যবস্থা নেবে। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 11 জুন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি খুলে গেলে জুলাই মাসেই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা। আজ দুপুরে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে এই তথ্য। পাশাপাশি, পরীক্ষা অনলাইন বা অফলাইন কোন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেই নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে এবং অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার কী হবে তা নিয়ে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে গাইডলাইন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তারপর থেকেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের পরিকাঠামো ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কীভাবে পরীক্ষা নেবে এবং নতুন শিক্ষাবর্ষ কবে থেকে চালু হবে সেই বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু করে। আজ এই বিষয়গুলি নিয়ে সামগ্রিক ধারণা পেতে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী, উপাচার্যরা ছাড়াও শিক্ষা দপ্তরে সচিব মণীশ জৈন, উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান মমতা রায় উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ সময়ের এই বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। মূলত, পরীক্ষা, ভরতি ও শিক্ষাবর্ষের বিষয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজকের বৈঠক নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। সবাই মিলে প্রস্তুত হয়েছে। পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে, তার কর্মসূচিও ঠিক করা হয়ে গেছে। কী প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেওয়া হবে সেই কর্মসূচিও ঠিক করা হয়ে গেছে। তাঁরা সকলেই অপেক্ষা করছেন কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। যেদিন থেকে খুলবে তার একমাসের মধ্যেই সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হস্টেলগুলিকেও স্যানিটাইজ় করা হবে। মূলত এই বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইন আমরা পেয়েছি। আশা করি, লকডাউনটা কেটে গেলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি খুললেই এক মাসের মধ্যে শিক্ষাবর্ষসহ সব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জুলাই মাসে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি, রাজ্যের যে সব একক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অর্থাৎ, যাদের অধীনে কলেজ নেই সেগুলির ক্ষেত্রে অফলাইন পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। তবে, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একক নয় তাদের অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থার বিষয়ে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে, অনলাইন বা অফলাইন দুটো বিষয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের অধীন কলেজগুলির পরিকাঠামো বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। অফলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে, একসঙ্গে সব পড়ুয়ার পরীক্ষা না নিয়ে জুলাই মাসে ধাপে ধাপে পরীক্ষা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সবমিলিয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থা ঠিক রাখাটাই রাজ্যের প্রধান লক্ষ্য। জানা গেছে, পরীক্ষা নিতে গিয়ে পড়ুয়াদের যাতে অহেতুক হয়রানি না হয় বা তাদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই দিকটিতেও নজর দিতে বলা হয়েছে।
সূত্রের খবর, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছে বৈঠকে। তবে, লকডাউন উঠলে প্রতিষ্ঠান খোলার পর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নিতে ন্যূনতম 1 মাস সময় লাগবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি ছাড়া অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, লকডাউনের পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট 8 টি ক্যাম্পাস ও 16টি হস্টেল স্যানিটাইজ় করতে হবে। স্যানিটাইজ় না করে পড়ুয়াদের ফেরানো যাবে না। যার জন্য প্রায় 10 দিন সময় লাগবে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা করাতে এক মাস সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী, রাজ্য BEd বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি আগেই অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আজ উপাচার্য সৈকত মৈত্র বৈঠকে জানিয়েছেন, তাঁরা অনলাইনে পরীক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
চূড়ান্ত সেমিস্টারের পরীক্ষার আগে অন্যান্য সেমিস্টারের একটি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই করেছিলেন। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইনেও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সিমেস্টারের মূল্যায়ন অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ও আগের সিমেস্টারের ভিত্তিতে করতে। যদিও, অন্যান্য সেমেিস্টারের বিষয়ে আজকের বৈঠকে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই জানা যাচ্ছে। তবে, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সেমিস্টারের মূল্যায়নের পক্ষে মত দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া, এই বছর সেপ্টেম্বর মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে, রাজ্য এই শিক্ষাবর্ষ আরও এগিয়ে আনতে চেয়েছিল।কিন্তু, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় UGC-র গাইডলাইন মেনে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে চেয়ে মত দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রের খবর, পরীক্ষা হোক বা শিক্ষাবর্ষ, সব বিষয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্বতা অর্থাৎ, উপাচার্যদের মতামতের উপরই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরই জোর দিয়েছেন। বারবারই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্বতার উপর জোর দিয়েছেন।" এদিনের বৈঠকে যদি 10 জুনের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় সেক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কীভাবে পরিচালিত হবে সেই বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে।