কলকাতা, 18 জুন : COVID-19 রোগীদের ওয়ার্ডে চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের MBBS পড়ুয়াদের ডিউটি করানো বিষয়ে বিরোধিতা করল ছাত্রসংগঠন AIDSO। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এই ছাত্রসংগঠনের তরফে বলা হয়, এই অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন মানুষকে প্রকৃত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে, অন্যদিকে উপযুক্ত ট্রেনিং এবং সুরক্ষা ছাড়া এই মেডিকেল পড়ুয়াদের কাজ করতে বাধ্য করিয়ে তাঁদেরও সংক্রমণের মুখে ফেলে দেওয়া হবে।
বুধবার নবান্নে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে COVID-19-র বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে কোরোনা চিকিৎসায় লোকবল তথা চিকিৎসকের অভাব পূরণের জন্য MBBS-এর চতুর্থ এবং পঞ্চম বর্ষের পড়ুয়াদের দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন চিকিৎসকদের সংগঠনের অধিকাংশ প্রতিনিধি। বিরোধিতার জেরে এই প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যাহার করেন বলে চিকিৎসকদের সংগঠনের তরফে জানানো হয় ।
এরপর ছাত্রসংগঠন AIDSO-র রাজ্য সম্পাদক মণিশংকর পট্টনায়কের তরফে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, নবান্নে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে MBBS পড়ুয়াদের COVID-19 রোগীদের ওয়ার্ডে ডিউটি করানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু চিকিৎসকদের অধিকাংশ সংগঠনের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করলেও বুধবার সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রস্তাবটি সিদ্ধান্ত হিসাবে ঘোষণা করেন।
ছাত্রসংগঠনের তরফে জানানো হয়, লকডাউন শুরুর পর থেকে অন্যান্য ক্ষেত্রের পড়ুয়াদের মতোই মেডিকেলের সব কোর্সের পঠন-পাঠনও বন্ধ রয়েছে। মেডিকেলের মতো ক্লিনিক এবং প্র্যাকটিকাল নির্ভর একটি কোর্সে পড়ুয়ারা উপযুক্ত ট্রেনিং না পেলে তার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি পড়ুয়াদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও পড়ুয়াদের শিক্ষার ব্যাপারে রাজ্য সরকার উদাসীন।
তারা বলে, মুখ্যমন্ত্রীর একতরফা ঘোষণা থেকে বোঝা গেল কেন্দ্রীয় সরকারের মতোই রাজ্য সরকারের কাছেও বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কোনও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। আসল সমস্যাকে চাপা দিতে চাইছেন, তাই চিকিৎসার ব্যাপারে উপযুক্ত জ্ঞান ও দক্ষতাহীন আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়ুয়াদের কাজে লাগিয়ে চিকিৎসায় সমস্যার সহজ সমাধান করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছাত্রসংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে যেভাবে দ্রুত হারে COVID-19 সংক্রমণ বাড়ছে, তা মোকাবিলার জন্য টেস্টিংয়ের হার বহুগুণ বাড়ানো প্রয়োজন। হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ICU ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রচুর চিকিৎসকেরও প্রয়োজন রয়েছে । কিন্তু এই প্রয়োজন কখনোই অনভিজ্ঞ আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়ুয়াদের মাধ্যমে পূরণ হতে পারে না। এর জন্য বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের যেমন উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে COVID-19 ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত করে তোলা দরকার, তেমনই সব কাজে সক্ষম রেজিস্টার্ড প্রাকটিশনারকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োগ করে রাজ্য ব্যাপী একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বর্তমান স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে সরকারের কোনও উৎসাহই দেখা যাচ্ছে না বলে জানায় ছাত্রসংগঠন।
ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলা হয়, "পড়ুয়াদের সত্যিকারের পঠনপাঠন ও শিক্ষার বন্দোবস্ত না করে তাঁদের সস্তা শ্রম ব্যবহার করে সহজ সমাধান খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। অবৈজ্ঞানিক এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন মানুষকে প্রকৃত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেবে, অন্যদিকে উপযুক্ত ট্রেনিং এবং সুরক্ষা ছাড়া এই পড়ুয়াদের কাজ করতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে তাঁদেরও কোরোনা সংক্রমণের মুখে ফেলে দেওয়া হবে।" মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে AIDSO তরফে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।