কলকাতা, 21 জুন: সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে জাতপাত, ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করে দিচ্ছে শাসক দল (Left slams TMC-BJP)। রাজ্য-কেন্দ্র উভয় সরকারই কার্যত একই এজেন্ডা নিয়ে চলছে । একাধিক ইস্যু ও উদাহরণ টেনে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ বাম ছাত্র-যুবদের ।
কংগ্রেস সরকারকে হারিয়ে 1977 সালের 21 জুন রাজ্যের মসনদ দখল করে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার । সেই দিনকে স্মরণ করে মঙ্গলবার "একালের চোখে সেকাল" শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় 34 বছরের বাম সরকারের ইতিহাস ফিরে দেখল বাম ছাত্র-যুবরা । সেই আলোচনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ব্যর্থতা, ধর্মের রাজনীতি নিয়ে কড়া আক্রমণ করেন বাম নেতারা (SFI, DYFI slams TMC and BJP)।
ডিওয়াইএফআই-এর সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বছরে 2 কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে 2014 সালে ক্ষমতায় এসেছিল । কিন্তু বাস্তবটা অন্য । পরিসংখ্যান তুলে ধরে হিমঘ্নরাজের দাবি, বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একাধিক বিভাগে 60 লক্ষের বেশি শূন্যপদ রয়েছে । যার মধ্যে এক হাজারের বেশি শূন্যপদ রয়েছে ভারতীয় রেলে । সেখানে নিয়োগ তো দূরস্ত, ইতিমধ্যে 56 হাজারের বেশি পদ অবলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে । হিমঘ্নরাজের আরও দাবি, আগের থেকে ভারতীয় রেলের পরিসর বেড়েছে, রেললাইন বেড়েছে । অথচ চাকরি কমেছে । আগে ভারতীয় রেলে 18 লাখের বেশি মানুষ চাকরি করতেন, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে 12 লক্ষতে । কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একাধিক বিভাগ ও পরিষেবায় এ রকম দুর্দশা দেখা দিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ । হিমঘ্নরাজ বলেন, বিষয়টা যে কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গের চাকরি ক্ষেত্রে একই অবস্থা করে রেখেছে ৷ বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি থেকে শুরু করে সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, কাটমানি প্রসঙ্গ ৷
আরও পড়ুন: Social Harmony program by Left: বঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষায় একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা বাম ও সহযোগী 16 দলের
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 1998 থেকে 2010 সাল পর্যন্ত প্রতিবছর নতুন নতুন চাকরির তালিকা বের হত । বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে চাকরি বাতিল হয়ে যাচ্ছে । হবু শিক্ষকদের নামে ফৌজদারি মামলা করা হচ্ছে । সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । বেসরকারি স্কুল কলেজ বাড়ছে । নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তিতে সরকার ইচ্ছাকৃত ভুল করছে বলে মীনাক্ষীর অভিযোগ ।
এ প্রসঙ্গে এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান এ দিন একহাত নেন বাবুল সুপ্রিয় ও অর্জুন সিং-কে ৷ এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্যের কথায়, 34 বছরে বামফ্রন্ট ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিল । শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এসএসকে এমএসকে থেকে শুরু করে নাইট স্কুল ইত্যাদি চালু করেছিল । স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া জারি রেখেছিল । অথচ রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর গণটোকাটুকি শুরু হয় । সাত-আট বছর কলেজগুলোতে কোনও নির্বাচন ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় । কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় পড়ুয়াদের থেকে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি । এ সবের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে ছাত্র-যুবরা লড়াইয়ের ময়দানে থাকবে বলে শপথ নেন বাম ছাত্র ও যুব নেতারা ।