কলকাতা ও হুগলি, 10 মে : মহার্ঘ আলু । জ্যোতি বিকোচ্ছে 30 টাকায়, চন্দ্রমুখী 40 । ফলে ভোজন রসিক বাঙালির আলু প্রেমে মন্দা । সপ্তাহখানেক ধরে সামগ্রিক বাজারদর ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী । এপ্রিল থেকে একের পর এক উৎসব পেরিয়ে ধাপে ধাপে চড়েছে মাছ, মাংস থেকে সমস্ত সবজির দাম ।
তবে মে মাঝামাঝি এসে যেভাবে আলুর দাম চড়ছে (Potato price soars in West Bengal), তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ মধ্যবিত্তের । এমনকি হুগলিতেও আলুর দামে নাগাল ক্রমশ মধ্যবিত্তের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে ৷ অথচ হুগলিই আলু চাষে দেশের উল্লেখযোগ্য জায়গায় রয়েছে ৷ চাষিদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, বর্ষায় বা ডিসেম্বরে আরও দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে ।
কেন দাম বাড়ল আলুর ? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Bengal CM Mamata Banerjee) গড়ে দেওয়া টাস্কফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের কথায়, যে আলু আগে বস্তা প্রতি বিক্রি হত 800 থেকে 850 টাকায়, তার দাম বেড়ে হয়েছে 1300 টাকা । চন্দ্রমুখী আলুর বস্তা প্রতি বিক্রি হত 1100 থেকে 1200 টাকার মধ্যে তার দাম বেড়ে হয়েছে 1700 টাকার কাছাকাছি । অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতা থেকে ক্রেতা সমস্যায় পড়েছেন সবাই ।
তিনি আরও বলেন, ‘‘এবার প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার জন্য আলুর ফলন কম হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই বাজারে আলুর জোগান কম আছে । রাজ্যে প্রতি বছর 1 কোটি 10 লক্ষ মেট্রিকটন আলুর ফলন হয় । তবে এবার তা কমে 80 লক্ষ মেট্রিকটনে দাঁড়িয়েছে । একই সঙ্গে গত বছর বাংলার হিমঘরগুলিতে 14 কোটি 48 লক্ষ প্যাকেট আলু মজুত হয়েছিল । এ বার সাড়ে 12 কোটি প্যাকেট রয়েছে ।’’ তিনি আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh) থেকে আলু নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ওই আলু চলে এলে রাজ্যে আলুর দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ।
অন্যদিকে হুগলি জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের সর্ববৃহৎ আলু উৎপাদক জেলা হল হুগলি । প্রতি বছর গড়ে 30 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয় হুগলিতে । গত মরসুমে জেলায় 88 হাজার 945 হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল । আগের বছর আলু উৎপাদন হয়েছিল 35 লক্ষ মেট্রিক টন । এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসময়ে বৃষ্টির ফলে আলু চাষে ক্ষতি হয় । একবার আলু বসানোর পর আবার বসাতে হয় ৷ ফলে আলু চাষের জমি কমে যায় অনেকটাই । 73 হাজার 614 হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল । হুগলি জেলা কৃষি দফতরের 14-15 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে ।
প্রসঙ্গত, এবার উত্তরবঙ্গে আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে । বহু জায়গায় যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে, তা রাখার জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না । মূলত, উত্তরবঙ্গে হিমঘরের অভাবেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে । এই অবস্থায় দাবি উঠেছে উত্তরবঙ্গ থেকে আলু নিয়ে এসে দক্ষিণবঙ্গে সুফল বাংলার মাধ্যমে, তা জোগান দেওয়ার । তাছাড়া আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে ব্যবসায়ী সমিতি হিমঘরের ভাড়া বেড়ে যাওয়াকেও দায়ী করেছেন ৷ সেই কারণে মঙ্গলবার প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে ধর্মঘটেরও ডাক দেওয়া হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে । ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বাজারে নজরদারি শুরু হয়েছে । আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে ।’’
আরও পড়ুন : Price Hike : মূল্যবৃদ্ধির আগুনে নাজেহাল গৃহস্থ, চলছে শাসক-বিরোধী তরজা