কলকাতা, 8 মে: শহর ও শহরতলির দূষণ বৃদ্ধিতে রাশ টানতে এ বার কোমর বেঁধেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর । কলকাতার রাজপথে কোনও ভাবেই আর চলতে পারবে না 15 বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি । ফলে মাথায় হাত পড়েছে বেসরকারি মালিকদের (New engine for old buses)। তাঁদের মতে, গোটা গাড়ি ফেলে না দিয়ে শুধুমাত্র দূষণকারী ইঞ্জিন পরিবর্তন করলে আর্থিক ভাবে অনেকটাই সাশ্রয় হবে তাঁদের । লোকসানে চলা পরিবহণ শিল্প আবারও চাঙ্গা হয়ে ওঠার একটা সুযোগ পাবে । তবে বিশেষজ্ঞের মতে, এমনটা হলে আখেরে লাভ হবে না । থেকে যাবে সমস্যা ।
শহর কলকাতা ও শহরতলিতে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হল যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া (New engine for old buses)। গাড়ির ইঞ্জিন যত পুরনো হতে শুরু করে, তার শক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে (air pollution)। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি বাণিজ্যিক গাড়ির ইঞ্জিন 10 বছরের মাথায় তার ক্ষমতা হারায় । তবুও আর্থিক দিক বিবেচনা করে এবং বারে বারে ইঞ্জিনের কাজ করিয়ে একটি পুরনো ইঞ্জিনকে বড় জোর 15 বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় । তবে তার পরে তা কর্মক্ষমতা হারায় (owners proposes to add new engines in old buses)।
অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক প্রবীরকুমার বসু বলেছেন, "একটি গাড়ির ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতার মেয়াদ 10 বছর । তবুও বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে টেনেটুনে 15 বছর পর্যন্ত করা হয়েছে ।"
পাবলিক ভেহিকেল ডিপার্টমেন্ট (PVD)-এর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, আগামী বেশ কয়েক মাসের মধ্যে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মিলিয়ে বাতিল হয়ে যাবে প্রায় 500-র কাছাকাছি বেসরকারি বাস । এই তালিকায় অটোর সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং ট্যাক্সির সংখ্যা 1000 থেকে 2000-এর মধ্যে । যদিও 2024 সালের মধ্যে এই সংখ্যাগুলি আরও বেড়ে যাবে ।
কথায় আছে, মরা হাতি লাখ টাকা । এমনটাই মনে করছেন বেসরকারি বাস মালিকপক্ষ । জয়েন কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "একটি গাড়ির মেয়াদ ফুরোলে পুরো গাড়িটাকে ফেলে দিতে হবে কেন ? এই নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে আমি একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করেছিলাম । গাড়ির ইঞ্জিন খারাপ বা পুরনো হয়ে গেলে তার থেকে বায়ু দূষণ হয় । তাই একটি পুরনো ইঞ্জিনকে ফেলে দিয়ে যদি তার জায়গায় নতুন ইঞ্জিন বসানো যায়, তাহলে সেই গাড়িটি আবার আগের মতোই নতুন হয়ে যাবে । তার থেকে দূষণও সৃষ্টি হবে না । কারণ গাড়ির বডি তৈরি হয় লোহা বা স্টিল দিয়ে । তাই গাড়ির বডি কী দোষ করল ? কিন্তু পুরনো হয়ে গেলে পুরো গাড়িটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে । পাশাপাশি যদি জ্বালানি ডিজেল আরও পরিশুদ্ধ করা যায়, তাহলে দূষণ আরও কমবে । সমস্যা হল, আনবার্ন্ট ডিজেল থেকে কালো ধোঁয়া বা দূষিত ধোঁয়া ছড়ায় । তাই তার দিকে যদি নজর দেওয়া যায় তাহলে পুরো গাড়িটা বাতিল হয় না । এর ফলে আর্থিক ভাবে অনেকটাই লাভ হবে মালিকপক্ষের ।"
ঠিক একই কথা বললেন হাওড়া বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত ঘোষ । তিনি বলেন, "সরকারি বাসের বডি নিলাম হলে সেগুলিকে কিনে তাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে তৈরি হয়েছে বহু বেসরকারি বাস । অর্থাৎ এর থেকে বোঝা যায় যে, একটি বাসের বডি পুরনো হলেও তা ইঞ্জিনের মতো বিকল হয়ে যায় না । তাই সেগুলিকে মেরামত করে একেবারে নয়া রূপ দেওয়া যায় । তাই বেসরকারি বাস মালিকদের উপর যাতে বাড়তি আর্থিক বোঝা না চাপে, সে জন্য পুরনো ইঞ্জিন ফেলে দিয়ে তার জায়গায় নতুন ইঞ্জিন বসানো যেতে পারে । এই প্রস্তাব রেখে আমরা বহুবার রাজ্য পরিবহণ দফতরে চিঠিও দিয়েছি । কিন্তু দফতরের তরফে কোনও উত্তর মেনেনি ।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিনিবাস মালিক জানিয়েছেন যে, এখনকার যে 'প্রোফাইল বডি' ব্যবহার করা হয় তা বহু বছর চলে । তাই সেগুলির চেহারা বিগড়ে গেলে তার থেকে হয়তো দৃশ্য দূষণ হতে পারে কিন্তু তার থেকে পরিবেশ দূষণ হয় না । সেগুলিকে মেরামত করে আবার নতুনের মত করা যায় । কারণ একটি বাণিজ্যিক বাসের ক্ষেত্রে বাসের বডিকে এক মাসের বেশি একেবারে ঝাঁ চকচকে রাখা মুশকিল ।
তবে এ বিষয়ে অধ্যাপক বসুর মত একবারে অন্যরকম । তিনি বলেন, "ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে লোড ক্যালকুলেশন বলে একটি ব্যাপার আছে অর্থাৎ বাসে কতজন যাত্রী বসবে বাসের ডিজাইন কী রকম হবে তার উপর নির্ভর করে ইঞ্জিন তৈরি হয় । ফলে পুরনো বাসে যদি ভারত স্টেজ ফোর বা ভারত স্টেজ সিক্সের ইঞ্জিন বসানো হয়, তাহলে সেই বাসের ডিজাইনের সঙ্গে নতুন ইঞ্জিন খাপ খাবে না । পুরনো বাসের বডিতে যদি নতুন ইঞ্জিন বসানো হয়, তাহলে তার কর্মক্ষমতাও 100 শতাংশ হবে না । ফলত গাড়িতে অনেক বেশি ভার পড়বে ৷ আর বেশি ভার পড়লে ইঞ্জিন তার সক্রিয়তা হারাবে । এর ফলে তা আবার যেমন দূষণ ছড়াবে তেমনই খুব তাড়াতাড়ি বিকলও হয়ে যাবে ।"
প্রসঙ্গত একটি বাসের দাম প্রায় 30 থেকে 40 লক্ষ টাকা ৷ অন্যদিকে একটি ইঞ্জিনের দাম পড়ে 5 লক্ষ টাকার কাছাকাছি । রাজ্যে যে বেসরকারি বাসগুলি চলে, তার ইঞ্জিন তৈরি করে মূলত তিনটি কোম্পানি টাটা, অশোক লেল্যান্ড এবং এসার ।
15 বছরের পুরনো বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত গাড়িকে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই । এই বছরের মাঝামাঝি থেকেই বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে । বাতিল হবে বাস-মিনিবাস, অটো ট্যাক্সি মিলিয়ে হাজার হাজার বাণিজ্যিক যান । এই তালিকায় রয়েছে বেসরকারি গাড়িও ।