কলকাতা, ২১ ফেব্রুয়ারি : পরীক্ষাকেন্দ্রের মেন গেটের ভিতরে কোনওরকম ব্যাগ নিয়ে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। বিজ্ঞপ্তিতে ভেনু সুপারভাইজ়ারদের নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, কোনও পরীক্ষার্থী যেন কোনওরকম ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের মেনগেটের ভিতরে ঢুকতে না পারে। মোবাইলের বিষয়টিকে সমর্থন করলেও ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানাচ্ছে শিক্ষক মহল।
২২ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে চলেছে এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। এবার প্রথমদিনের পর থেকেই পর পর ছ'টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। যা মিলে যায় আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে। সাত নম্বর দিনেও জীবন বিজ্ঞানের একটি প্রশ্নপত্র সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু, তা আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মেলেনি। উচ্চমাধ্যমিকে এই ধরনের ঘটনা এড়াতেই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভেনু সুপারভাইজ়ারদের নিশ্চিত করতে অনুরোধ করা হচ্ছে যে, কোনও পরীক্ষার্থী যেন কোনওরকম ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের মেন গেটের ভিতরে ঢুকতে না পারে। ব্যর্থতা ছাড়া এই নির্দেশ মেনে চলতে মেন গেটের বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।
সংসদের এই নির্দেশের প্রতিবাদ জানাচ্ছে শিক্ষক মহল। কারণ, অনেক পরীক্ষার্থীই একা আসে পরীক্ষা দিতে, অনেকেই পরীক্ষা শুরুর আগে পড়াশোনা করে। সেক্ষেত্রে ব্যাগ না নিয়ে ঢুকতে দিলে তারা সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, "মুশকিলটা হচ্ছে সংসদ এবং পর্ষদ দু'জনেই সর্ষের মধ্যে ভূত দেখছেন। দু-তিনজন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষার হলে অসাধু উপায় অবলম্বন করছে। আর তার জন্য সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। একজন যদি ব্যাগ না নেয়, ধরে নিচ্ছি মোবাইল আনতে হল না, কিন্তু, তার কাছে জলের বোতল থাকবে না, বই থাকবে না। তাকে আবার বলা হয়েছে সকাল ন'টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হবে। এত কিছু যদি করতে হয় তাহলে তো সে পরীক্ষার আগে হাফ কোমাস্টেজে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সে পরীক্ষাটা দেবে কী করে? আমাদের বার বারই মনে হচ্ছে যারা নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা অতীতটা ভুলে গেছেন। তাদের বাড়ির কোনও সন্তান কখনও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। নিজের সন্তান পরীক্ষা দিলে তিনি তখন বৈপ্লবিক হয়ে যেতেন। আর আমরা যখন ফতোয়া জারি করছি সেগুলো এমন যার কোনও স্ট্যান্ডপয়েন্ট নেই।"
সৌগত বসু আরও বলেন, "আমরা একবারও ভাবছি না যে ১৭-১৮ বছরের ছেলেরা পরীক্ষা দিতে আসছে, সারাদিন থাকবে। ৯টার মধ্যে পরীক্ষার হলে ঢুকে যেতে তাকে বাধ্য করা হচ্ছে। সে ৯টা থেকে দশটা এই এক ঘণ্টা করবেটা কী? এইভাবে পরীক্ষা হয় না কি? এত পুরো সেনাবাহিনীর মতো জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম, দে বাবা পরীক্ষা দে। এটা কোনও পদ্ধতি নয়। এরপর সেই বাচ্চাটাই ভালো রেজ়াল্ট করবে কী করে? ফলে এটা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আগামীকাল আমরা কাউন্সিলে যাব। এবিষয়ে চিঠি দেব।"
সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়েজ় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "একেবারে ঠিক নয়। এগুলো বালখিল্য আচরণ। যারা উচ্চমাধ্যমিক দেয় তাদের মধ্যে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র-ছাত্রী থাকে। তাঁদের অনেকেই কর্মরতও হয়। এখানে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। মোবাইল ফোন আনতে পারবে না, মোবাইল ফোন নিয়ে হলের ভিতরে ঢুকতে পারবে না এটা একটা স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন, গুড ইন্সট্রাকশন। কিন্তু, তারা ব্যাগ নিয়ে যেতে পারবে না, বইপত্র নিয়ে যেতে পারবে না এবং এক ঘণ্টা আগে ঢুকে যেতে হবে। এর একটা মনস্তাত্ত্বিক নেতিবাচক দিক আছে সেটা ভেবে দেখেছে? নিজেদের অবহেলা ও অপদার্থতা ঢাকতে ছাত্র-ছাত্রীদের ঘাড়ে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘাড়ে কিছু এমন জিনিস চাপিয়ে দিচ্ছে যা একেবারেই মানা যায় না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং এর আমরা প্রতিবাদ করছি।" এ বিষয়ে জানতে সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।