কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2022) আগে ফের একবার ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ এবার 'জাগো বাংলা' (Jago Bangla)-এর উৎসব সংখ্যার পাতায় মমতার সেই বার্তা পাঠের সুযোগ পাবেন পাঠকরা ৷ তৃণমূল নেত্রীর কলমে উঠে এল নারীশক্তিকে দেবী রূপে পুজো করার আবেদনও ৷
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র জাগো বাংলার উৎসব সংখ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিবন্ধটি লিখেছেন, তার নাম, 'ধর্ম যার যার নিজের, উৎসব সবার' ৷ প্রসঙ্গত, মমতা বিভিন্ন সময় তাঁর ভাষণেও এই কথাটি বলেন ৷ এদিকে, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট ৷ তারপর রয়েছে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন ৷ তাই রাজনীতির লড়াই ইতিমধ্য়েই শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, ভোট মরশুমের আগে ফের একবার বাঙালির হিন্দু সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করবে বিজেপি ৷ মমতারও তা অজানা নয় ৷ তাই জেনেবুঝেই নিজের লেখায় নারীশক্তিকে দেবী রূপে পুজো করার বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷ মমতা বলতে চেয়েছেন, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি যতই মুখে রামভক্তির কথা বলুক, দুর্গাপুজোর কথা বলুক, আসলে তারা নারীবিদ্বেষী ৷
মমতা তাঁর লেখায় লিখেছেন, আমি বারবার বলি এবং বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার নিজের, কিন্তু উৎসব সবার ৷ আর সেই উৎসব যখন দুর্গাপুজো হয়ে ওঠে, তখন তার মাহাত্ম্য ও গরিমার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা করা যায় না ৷ তাই রবীন্দ্রনাথের কথা ধার করে বলতে চাই, 'বন্ধু হও শত্রু হও যেখানে যে রও' সবার সম্মিলিত আনন্দে শারদ উৎসব আরও রঙিন হয়ে উঠুক ৷ এরই সঙ্গে তিনি লেখেন, এবারের উৎসবের অবশ্য একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে ৷ সবাই জানেন, ইউনেসকোর কাছ থেকে দুর্গাপুজো অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ৷ সেই সম্মাননার উদযাপন এবারের পুজোকে আরও বেশি বর্ণময় করে তুলেছে ৷ সরকারের সহযোগিতায় যার সূচনা হয় গত 1 সেপ্টেম্বর ৷
আরও পড়ুন: 'কেউ ধোয়া তুলসীপাতা নয়', বিরোধীদের কটাক্ষ মমতার
তাঁর লেখায় মমতা ফের একবার রাজ্যে সব ধর্মকে নিয়ে এগিয়ে চলার কথা বলেন ৷ তিনি লেখেন, কথাগুলো এভাবে একটু বিশদে বলার কিছু কারণ আছে ৷ সেদিন চলতে চলতে দেখেছিলাম, ধর্ম-সম্প্রদায়ের বেড়া ভেঙে সবাই কেমন আন্তরিকভাবে সাড়া দিয়েছেন ৷ তাঁদের হৃদয়ের উষ্ণতা স্পর্শ করতে করতে চলার পথে আমাকে বারবার থামতে হয়েছে ৷ কেউ জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছেন, কেউ হাতপাখা ৷ কোথাও শাঁখ বেজেছে ৷ আবার কোথাও ঢাকের তালে তালে নৃত্য হয়েছে ৷ কলকাতার যেসব এলাকা দিয়ে শারদ উৎসবের এই মিছিল গিয়েছে, তার অনেকটা জুড়েই বসবাস করেন অন্য ধর্মাবলম্বীরা ৷ যুগ যুগ ধরে আমরা সবাই পাশাপাশি থাকি, পাশাপাশি বাঁচি এবং সকল আনন্দ বা দুঃখে পরস্পরের শরিক হয় ৷ তাই এইসব এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা যখন ঘর থেকে বেরিয়ে শারদ উৎসবের উন্মাদনা ভাগ করে নেন, তখন বাংলার জন্য গর্বে বুক ভরে ওঠে ৷ মমতা মনে করেন, এমন দেশ সত্যিই আর কোথাও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় ৷
একইসঙ্গে, এই লেখায় বিরোধী বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসকেও ছেড়ে কথা বলেননি তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ তিনি লিখেছেন, আবার বিতৃষ্ণাও হয়, যখন দেখি একশ্রেণির রাজনীতির কারবারি বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার নোংরা খেলায় মেতেছে ৷ এমনকী দুর্গাপুজোর আনন্দেও তারা ফাঁক খুঁজে বেড়াচ্ছে ৷ পুজো নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে তারা ৷ অপপ্রচার করছে ৷ এর প্রধান পুরোধা বিজেপি ৷ সঙ্গে রয়েছে দুই সঙ্গী সিপিএম এবং কংগ্রেস ৷ বাংলার মানুষ যাদের ইতিমধ্যেই বর্জন করে দিয়েছে ৷ আমি নিশ্চিত, বাংলার ঐতিহ্যকে হেয় করার যেকোনও অপচেষ্টার জবাব বাংলার মানুষ দেবে ৷