কলকাতা, 11 এপ্রিল : হাঁসখালির ঘটনায় মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) । তাঁর অভিযোগ, টিআরপি বাড়াতে গিয়ে নীতিহীন কাজ করছে সংবাদমাধ্যমগুলো । এই নীতিহীন সংবাদ প্রচারের কড়া নিন্দা করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর আশ্বাস, বাংলায় তদন্ত রাজনীতির রং দেখে হয় না । অপরাধীরা শাস্তি পাবে বলে আশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ।
প্রসঙ্গত, সোমবার ছিল সংস্কারের পর নতুন করে মিলন মেলা প্রাঙ্গণের উদ্বোধন । নয়া সাজে আন্তর্জাতিক মানের এই মেলা প্রাঙ্গণে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যের একটা বড় অংশজুড়ে মিডিয়ার সমালোচনায় সরব হন । মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে বলতে গিয়ে এদিন হাঁসখালির প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee Reaction on Hanskhali Rape) ।
তিনি বলেন, ‘‘হাঁসখালিতে খুব খারাপ ঘটনা ঘটেছে । মেয়েটি মারা গিয়েছে 5 তারিখ, পুলিশ জেনেছে 10 তারিখে । এক্ষেত্রে আপনি ধর্ষণ বলবেন নাকি অন্তঃসত্ত্বা বলবেন নাকি প্রেমের সম্পর্ক বলবেন ? সেটা খতিয়ে দেখেছেন কী ? আমি পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছি ।’’
তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘আপনারা বলুন কোনওরকম অভিযোগ থাকলে 5 তারিখ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন ? দেহটা পুড়িয়ে দেওয়া হল । আমি সবটা না জেনেও বলছি প্রমাণ পাবে কোথা থেকে ? আসলে ধর্ষণ নাকি অন্তঃসত্ত্বা ছিল নাকি অন্য কোনও কারণ আছে ? নাকি কেউ ধরে দু'টো চড় মেরেছে ? শরীরটা খারাপ হয়েছে ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রেমের সম্পর্ক তো ছিলই শুনেছি । বাড়ির লোক, পাড়ার লোকেরাও জানত । এখন যদি কোনও ছেলেমেয়ে, কেউ কারও সঙ্গে প্রেম করে, আমার পক্ষে তাকে আটকানো সম্ভব নয় । এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে লাভ জিহাদ করব । এটা তার স্বাধীনতা । হ্যাঁ এটা আমরা নিশ্চয়ই দেখব, যদি কেউ কোনও অন্যায় করে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে । গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কোনও রং দেখা হচ্ছে না ।’’
এদিন হাঁসখালি ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । মমতা বলেন, ‘‘কেউ অন্যায় করলে তার শাস্তি হবে । তাই হাঁসখালির ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে । এবং সেটা কোনও রাজনৈতিক রং না দেখেই । কিন্তু মনে রাখবেন এটা মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে নয় । এটা কোনও রাজনৈতিক দলের বিষয় নয় । কী করবেন বলুন, এখানে সবাই তৃণমূল দল করেন । তাই তৃণমূলকে টানবার কী দরকার ! পশ্চিমবঙ্গে সবাই তৃণমূল ।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বাবা যদি তৃণমূল করে, ছেলে প্রেম করেছে না কী করেছে, তাতে তৃণমূলকে টানা কেন ? কেউ বন্ধু হয়ে যেন কারও ক্ষতি না করে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে । এই ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিতে হবে । শিশু কমিশন এই ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট দেবে । কিন্তু ছেলেমেয়েরা প্রেম করলে, সেটা আমার পক্ষে আটকানো সম্ভব নয় ।’’
এখানে সংবাদমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়ে নেতিবাচক ভাবে না দেখে ইতিবাচকভাবে দেখুন, বাংলার জন্য গর্ব করুন, প্লিজ আপনারা টিআরপির জন্য বাংলার বদনাম করবেন না ।’’ এখানেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কড়া সুর শোনা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় । তিনি বলেন, ‘‘একটা বাচ্চা যদি নির্যাতিত হয়, তা নিয়ে এভাবে প্রচার করতে পারেন না । শিশু কমিশনকে এই বিষয়টি নিয়ে দেখতে বলব ।’’
মুখ্যমন্ত্রী হাঁসখালির ঘটনায় মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে সরব হলেও যেভাবে ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ । মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাকে ধর্ষণ না প্রণয়ঘটিত বিষয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । রাজনৈতিক মহলের পাল্টা প্রশ্ন, বিষয়টি যদি প্রণয়ঘটিত হয়, যেহেতু ওই মেয়েটি নাবালিকা, তাই এখানে বিষয়টি আইনের চোখে ধর্ষণ হিসেবেই ধরা হবে ।
আরও পড়ুন : Hanskhali Rape : প্রেমের ফাঁদে ফেলে হাঁসখালির নাবালিকাকে ধর্ষণ ! মৃতার দিদির দাবি ঘিরে নয়া জল্পনা