কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি : বিধানসভায় ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করার শুরুতেই বিপত্তি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা শুরু করতেই বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা৷ তাঁরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন৷
এবার যেহেতু রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে৷ তাই রাজ্য সরকার নিয়ম মেনে অন্তর্বর্তী বাজেট বা ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করছেন৷ এবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অসুস্থ৷ সেই কারণে বাজেট পেশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
এবারের বাজেট আগেই বয়কট করেছেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের বিধায়করা৷ তাঁরা সভায় উপস্থিত হননি৷ কিন্তু বাজেট বক্তৃতা শুরু হতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা৷ তার ফলে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেও থেমে যেতে হয়৷ একাধিকবার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় থামার কথা বললেও, শোননেনি কেউ৷
কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷ তার পর অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তবে তার আগে বিজেপি বিধায়কদের এই আচরণের সমালোচনা করেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, তিনি একাধিকবার রেল বাজেট পেশ করেছেন৷ তাছাড়া সংসদে একাধিক সাধারণ বাজেট পেশ করার উপস্থিত থেকেছেন৷ বাজেট পেশের সময় গোলমাল না করাই সৌজন্যতা৷
আরও পড়ুন : বিধানসভায় অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ মুখ্যমন্ত্রীর
বাজেট বক্তৃতাতেও রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ করোনা প্যানডেমিক আমফানের সময় কেন্দ্র বাংলাকে বঞ্চনা করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার বাংলার উন্নয়নে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে বাজেটে৷
এছাড়া এদিন রাজ্য বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী যা যা বলেছেন, তা হল -
2021-22 আর্থিক বছরে ব্যয় বরাদ্দের জন্য 2 লক্ষ 99 হাজার 688 কোটির বাজেট পেশ করা হয়৷
গত 10 বছরে 100 দিনের কাজে রাজ্য সরকার 7.4 কোটি গ্রামের মানুষকে কাজ দিয়েছে৷ চলতি বছরে কাজ দেওয়া হয়েছে 1.1 কোটি গ্রামের মানুষকে৷ এর ফলে দেশের মধ্যে এক নম্বরে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ৷
গত 10 বছরে 1 কোটি 12.5 লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে৷ সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি স্তর এবং স্বনিযুক্তি কর্মসংস্থানকে ধরে 1.5 কোটি নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে৷ এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা হচ্ছে 12 হাজার 030 কোটি টাকা৷
আগামী তিন বছরে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে ও পুলিশ প্রশাসনের শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ শেষ করা হবে৷
রাজ্যের পশ্চিম অংশের অনুর্বর জমিতে মাটির সৃষ্টি প্রকল্প চলছে৷ এই প্রকল্পে আগামী বছর আরও 14 হাজার একর জমির উপর এই পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এতে কর্মসংস্থান বাড়বে৷
পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে 2439 একর জমির উপর৷ এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে কর্মসুন্দরী প্রকল্প৷ এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে 100 কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷
আগামী 2 বছরের মধ্যে অন্ডাল বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক উড়ানের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে৷ এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে 150 কোটি ব্যয়বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷
ইএম বাইপাস থেকে নিউটাউন পর্যন্ত উড়ালপুল নির্মিত হবে৷ জীবনানন্দ সেতু থেকে দেশপ্রাণ শাসমল রোড পর্যন্ত প্রিন্স আনোয়ার শা রোজে একটি উড়ালপুল তৈরি হবে৷ উল্টোডাঙা থেকে পোস্তা পর্যন্ত উড়ালপুল৷ পাইকপাড়া থেকে শিয়ালদা উড়ালপুল৷ গড়িয়া থেকে যাদবপুর পর্যন্ত উড়ালপুল৷ পথচারীদের জন্য পার্কসার্কাস কানেক্টরে স্কাইওয়াক৷ মাঝেরহাট-টালিগঞ্জ ও যাদবপুর-গড়িয়া উড়ালপুল৷ এই প্রকল্পগুলির জন্য আগামী অর্থবর্ষে 2475 কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হল৷ সেতুগুলি তৈরি করবে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাইওয়ে অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন৷ পশ্চিমবঙ্গ হাইওয়ে কর্পোরেশনের নাম বদলে এই নতুন কমিশন তৈরি করা হবে৷
রাজ্যে 373টি পুরনো সেচ ও নিকাশি খালগুলির উপর কাঠের সেতুর পরিবর্তে নতুন কংক্রিট সেতু তৈরি হবে৷
পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে 50 হাজার থেকে 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়া হবে৷ প্রথম বছরে সুদের 50 শতাংশ রাজ্য সরকার বহন করবে৷ এর জন্য 10 কোটি টাকা আগামী অর্থবর্ষে বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে৷
যাত্রীবাহীগড়ির রোড ট্যাক্স 2021 এর 1 জানুয়ারি থেকে 30 জুন পর্যন্ত মকুব করা হল৷
আঞ্চলিক বিমান যোগাযোগ বাড়াতে বালুরঘাট, মালদা, কোচবিহার বিমানবন্দর তৈরি ও উড়ান চলাচলে আগামী অর্থবর্ষে 50 কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ করা হয়েছে৷
শিল্পায়নে বিশেষ প্রকল্প৷ এই প্রকল্পে তাজপুর বন্দর, অশোকনগরে গ্যাস উত্তোলন, দেউচা-পাচামি থেকে কয়লা উত্তোলন৷
আগামী অর্থবর্ষে থেকে প্রতি বছর 9 লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে ট্যাব দেওযা হবে৷ এই প্রকল্পের নাম ‘তরুণের স্বপ্ন’৷ এর জন্য আগামী অর্থবর্ষে 900 কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ করা হয়েছে৷
আগামী অর্থবর্ষ থেকে পার্শ্বশিক্ষকদের 3 শতাংশ হারে বর্ধিত পারিশ্রমিক পাবেন৷ অবসরের পর 3 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে৷ এর জন্য 100 কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছে৷
60 বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত মানুষকে পেনশন ও 18 বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত বিধবাদের পেনশন৷ এর জন্য 1 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে৷
এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক উড়ালপুল তৈরিরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে৷ পথশ্রী প্রকল্পে 46 হাজার কিলোমিটার নতুন গ্রামীণ রাস্তা৷ এতে ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব 500 কোটি টাকা৷
চা সুন্দরী প্রকল্পে 150 কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ আগামী অর্থবর্ষে৷
নিউটাউনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্মানে আজাদ-হিন্দ স্মারক নির্মাণ৷ ব্যয়বরাদ্দ 100 কোটি টাকা৷ প্রতিটি জেলায় জয়হিন্দ ভবন নির্মাণ৷ আগামী অর্থবর্ষে ব্যয় বরাদ্দ 100 কোটি টাকা৷ কলকাতা পুলিশে নেতাজি ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব৷ বরাদ্দ 10 কোটি টাকা৷
নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন৷ বরাদ্দ 5 কোটি টাকা৷ 2021 সালের পরও চালু থাকবে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কাজ৷ আগামী অর্থবর্ষে বরাদ্দ 1500 কোটি টাকা৷ স্বল্পমূল্যে খাবার দিতে মা প্রকল্প৷ বরাদ্দ 100 কোটি টাকা৷ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বরাদ্দ 1500 কোটি টাকা৷
রাজবংশী ভাষায় 200টি বিদ্যালয়ের অনুমোদন৷ 50 কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ করা হয়েছে৷ আন-এডেড মাদ্রাসাগুলির জন্য 50 কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব৷ তফশিলি জাতি-উপজাতিদের 20 লক্ষ গৃহনির্মাণ৷ বরাদ্দ 1500 কোটি টাকা৷ কৃষকবন্ধুদের আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হল৷
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য মাতৃবন্দনা প্রকল্প৷ বরাদ্দ 150 কোটি টাকা৷ নির্মাণ ও পরিবহণ শিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের 450 কোটি টাকা৷ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে বরাদ্দ 100 কোটি টাকা৷