ETV Bharat / city

ম্যালেরিয়াও বাড়ছে শহরে, চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা - ম্যালেরিয়া বাড়ছে কলকাতায়

বছর তিনেক আগে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ অনেক কম ছিল‌ । ইদানিং, ম্যালেরিয়ার রোগী বেশ দেখা যাচ্ছে । বললেন স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ নন্দী

প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Oct 31, 2019, 7:04 AM IST

Updated : Oct 31, 2019, 8:08 AM IST

কলকাতা, 31 অক্টোবর : ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে । কারণ, গত দুই বছরের তুলনায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ এবার বেশি দেখা যাচ্ছে কলকাতায় । ম্যালেরিয়ার ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্টের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর বলেছে, ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।

বছর তিনেক আগে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ অনেক কম ছিল‌ । ইদানিং, ম্যালেরিয়ার রোগী বেশ দেখা যাচ্ছে । সংখ্যাটা কম নয় । একথা জানিয়ে স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, ডাক্তার অমিতাভ নন্দী বলেন, "আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, গত বছরের থেকে এ বছর ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে । গত বছরের আগের বছর প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম খুব নগণ্য সংখ্যায়, 2-1টি দেখা গেছিল । গত বছর নগণ্য থাকলেও তার আগের বছরের তুলনায় একটু বেশি দেখা গেছিল । এই বছর তার থেকেও বেশি দেখা যাচ্ছে ।" এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "ম্যালেরিয়ার কোনও সমস্যা নেই ৷ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।"

এ দিকে, ম্যালেরিয়া কেন বেশি দেখা যাচ্ছে, তার কারণ হিসেবে স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন এই অধিকর্তা বলেন, "এক, ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হওয়া । দুই, এটা আরবান ম্যালেরিয়া । এখানে অ্যানাফিলিস মশার বিশেষ প্রজাতি জন্মায় । সেই মশাই এখানে ম্যালেরিয়া ছড়ায় । জঙ্গলে যেমন আলাদা মশা । পরজীবী বা জীবাণু একই কিন্তু ছড়ানোর বাহক আলাদা । সেই হিসাবে পৃথক নাম দেওয়া হয়েছে ।" যেমন, ফরেস্ট ম্যালেরিয়া, আরবান ম্যালেরিয়া, রুরাল ম্যালেরিয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যালেরিয়া । বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "কনস্ট্রাকশন এরিয়াতে আরবান ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায় । যে শহরে বর্ষার সময় বেশি জল জমছে, যেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ বেশি হচ্ছে ৷ সেখানে এই মশা জন্মায় ।" শহরাঞ্চলের বিভিন্ন জঞ্জালেও এই মশা জন্মায় বলে তিনি জানিয়েছেন ৷

দেখুন ভিডিয়ো

তা হলে, এক্ষেত্রে কী করণীয়? চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, "জ্বর হলেই ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়া সন্দেহ করুন । প্রথমদিনই রক্ত পরীক্ষা করাতে যান । রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে প্রথম দিনে যদি নেগেটিভ আসে, তা হলে পর পর তিনদিন রক্ত পরীক্ষা করান । স্লাইড পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে তিন দিন করানো যাবে না । তার উপর স্লাইড পদ্ধতির তুলনায় অ্যান্টিজেন পদ্ধতি নিম্নমানের । স্লাইডে ঘন প্রলেপ দিয়ে যে পরীক্ষা করা হয়, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড ।" এই পদ্ধতিতে পর পর তিনদিন রক্ত পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়া না পাওয়া যায়, তখন বলা যেতে পারে সংশ্লিষ্ট রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত নন । বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের পরামর্শ, ম্যালেরিয়া যাতে আটকানো যায়, তার জন্য জ্বরের রোগীকে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত মশারির মধ্যে রাখতে হবে । যাতে রোগীকে মশার কামড়ে অন্য কারও মধ্যে জীবাণু ছড়াতে না পারে । ম্যালেরিয়া নির্ণয় হয়ে গেলে অর্থাৎ, জানা গেলে যে ম্যালেরিয়া হয়েছে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে । রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে । প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ।

তিনি আরও বলেন, "প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ব্রেনে অ্যাটাক করে । এর জন্য একে ব্রেন ম্যালেরিয়াও বলা হয় । এর লক্ষণ, রোগী ঝিমিয়ে পড়বে, ভুল বকবে বা খিঁচুনি শুরু হবে ৷ মেন্টাল কনফিউশন হচ্ছে এমন অর্থাৎ, একটি কাজ করতে গিয়ে অন্য কাজ করছে । এসব যদি কোনও জ্বর অথবা ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে দেখা যায়, তাহলে ধরে নিন রোগীর ব্রেন অ্যাটাক করেছে । সেই জন্য হাসপাতালে পাঠাতে হবে ।" শরীরের অন্য বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে । কী ভাবে বোঝা যাবে? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরিনের পরিমাণ কমে যায় । হিমোগ্লোবিন ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় । তার কারণ ম্যালেরিয়ার জীবাণু রক্তের লোহিত কণিকাকে ফাটিয়ে ফেলে । এটা যখন সাংঘাতিক মাত্রায় হয়, তখন কালো রঙের ইউরিন হয়, অনেকটা কালো রঙের ঠান্ডা পানীয়র মতো দেখতে । এই অসুখকে বলা হয় ব্ল্যাক ওয়াটার ফিভার । এক্ষেত্রে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।

স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা জানিয়েছেন, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে জন্ডিস দেখা দেয় । এর ফলে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায় ৷ ইউরিন সাদা থেকে ধীরে ধীরে হলুদ এবং সেখান থেকে সরষের তেলের মতো লাল হয়ে যায় । ফুসফুস সংক্রমণ হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । ডায়ারিয়া হতে পারে, বমি হতে পারে । খুব বেশি জ্বর 104-106 হতে পারে । বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এইগুলি একটিও দেখা গেলে, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে । তা হলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে ।" তিনি বলেন, "ম্যালেরিয়া যাতে অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য রোগীকে সারারাত মশারির মধ্যে রাখতে হবে ।" ম্যালেরিয়ার মশা যাতে সুস্থ কাউকে কামড়াতে না পারে তার জন্য রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে । অন্য সময় মশা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ধূপ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন ।

বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কথা ভেবে আগে থেকে ওষুধ খাবেন না । অনেকদিন আগে এমন চিন্তা-ভাবনা ছিল । এটাই ম্যালেরিয়ার ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ডেভেলপ হওয়ার সব থেকে বড় কারণ ।" তিনি বলেন, "অনেকের ধারণা রয়েছে, ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে গেলে তিন মাস বা ছয় মাস ওষুধ খেয়ে যেতে হয় । এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় না । কিন্তু, ম্যালেরিয়ার পরজীবীর শরীরে ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে ।"

ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও যেভাবে এবার বেশি দেখা যাচ্ছে, তাতে এই বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের কাছে চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে । এর কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি নিয়ে যতটা হইচই হচ্ছে, ম্যালেরিয়া নিয়ে তার সিকি ভাগের কমও হচ্ছে না । অথচ, ম্যালেরিয়ার মারাত্মক বিষয়টি যদি ধরা হয়, তাহলে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া যাকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলে, সেটা ডেঙ্গির থেকে কিছু কম নয় । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভাইরাস থেকে ডেঙ্গি হয়, ম্যালেরিয়া হয় পরজীবী থেকে । ডেঙ্গির মতো ম্যালেরিয়ার জীবাণু মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে । তফাত হচ্ছে, ডেঙ্গির মশা দিনে কামড়ায়, ম্যালেরিয়ার মশা রাতে কামড়ায় । সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়, এই সময়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা কামড়ায় । কলকাতায় এপ্রিলের পর থেকে ম্যালেরিয়া ছড়াতে শুরু করে তখন, প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স বেশি দেখা যায় । অগাস্টের পর থেকে প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম শহরে ঢুকে পড়ে । নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স কমে যায়, তখন প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম দেখা যায় ।

ম্যালেরিয়ার পরজীবী চার প্রকারের । পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের ম্যালেরিয়া হয় । তিন প্রকারের ম্যালেরিয়া ভারতে দেখা যায় । সব থেকে মারাত্মক পরজীবীর নাম প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, যাকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলা হয় । একে ব্রেন ম্যালেরিয়াও বলা হয় । অন্যটি, প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ‍্যাক্স । ভারতে সবথেকে বেশি এই ম্যালেরিয়া, অর্থাৎ, প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স দেখা যায় । তবে ভারতের কিছু কিছু অংশে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াও বেশি দেখা যায় । ভারতে অন্য আর যে ধরনের ম্যালেরিয়া দেখতে পাওয়া যায় তার নাম প্লাজ়মোডিয়াম ম‍্যালেরিয়া । ম্যালেরিয়ার অন্য আর এক পরজীবীর নাম প্লাজ়মোডিয়াম ওভেল । এই ম্যালেরিয়া ভারতে দেখা যায় না ।

কলকাতা, 31 অক্টোবর : ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে । কারণ, গত দুই বছরের তুলনায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ এবার বেশি দেখা যাচ্ছে কলকাতায় । ম্যালেরিয়ার ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্টের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর বলেছে, ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।

বছর তিনেক আগে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ অনেক কম ছিল‌ । ইদানিং, ম্যালেরিয়ার রোগী বেশ দেখা যাচ্ছে । সংখ্যাটা কম নয় । একথা জানিয়ে স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, ডাক্তার অমিতাভ নন্দী বলেন, "আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, গত বছরের থেকে এ বছর ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে । গত বছরের আগের বছর প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম খুব নগণ্য সংখ্যায়, 2-1টি দেখা গেছিল । গত বছর নগণ্য থাকলেও তার আগের বছরের তুলনায় একটু বেশি দেখা গেছিল । এই বছর তার থেকেও বেশি দেখা যাচ্ছে ।" এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "ম্যালেরিয়ার কোনও সমস্যা নেই ৷ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।"

এ দিকে, ম্যালেরিয়া কেন বেশি দেখা যাচ্ছে, তার কারণ হিসেবে স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন এই অধিকর্তা বলেন, "এক, ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হওয়া । দুই, এটা আরবান ম্যালেরিয়া । এখানে অ্যানাফিলিস মশার বিশেষ প্রজাতি জন্মায় । সেই মশাই এখানে ম্যালেরিয়া ছড়ায় । জঙ্গলে যেমন আলাদা মশা । পরজীবী বা জীবাণু একই কিন্তু ছড়ানোর বাহক আলাদা । সেই হিসাবে পৃথক নাম দেওয়া হয়েছে ।" যেমন, ফরেস্ট ম্যালেরিয়া, আরবান ম্যালেরিয়া, রুরাল ম্যালেরিয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যালেরিয়া । বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "কনস্ট্রাকশন এরিয়াতে আরবান ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায় । যে শহরে বর্ষার সময় বেশি জল জমছে, যেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ বেশি হচ্ছে ৷ সেখানে এই মশা জন্মায় ।" শহরাঞ্চলের বিভিন্ন জঞ্জালেও এই মশা জন্মায় বলে তিনি জানিয়েছেন ৷

দেখুন ভিডিয়ো

তা হলে, এক্ষেত্রে কী করণীয়? চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, "জ্বর হলেই ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়া সন্দেহ করুন । প্রথমদিনই রক্ত পরীক্ষা করাতে যান । রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে প্রথম দিনে যদি নেগেটিভ আসে, তা হলে পর পর তিনদিন রক্ত পরীক্ষা করান । স্লাইড পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে তিন দিন করানো যাবে না । তার উপর স্লাইড পদ্ধতির তুলনায় অ্যান্টিজেন পদ্ধতি নিম্নমানের । স্লাইডে ঘন প্রলেপ দিয়ে যে পরীক্ষা করা হয়, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড ।" এই পদ্ধতিতে পর পর তিনদিন রক্ত পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়া না পাওয়া যায়, তখন বলা যেতে পারে সংশ্লিষ্ট রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত নন । বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের পরামর্শ, ম্যালেরিয়া যাতে আটকানো যায়, তার জন্য জ্বরের রোগীকে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত মশারির মধ্যে রাখতে হবে । যাতে রোগীকে মশার কামড়ে অন্য কারও মধ্যে জীবাণু ছড়াতে না পারে । ম্যালেরিয়া নির্ণয় হয়ে গেলে অর্থাৎ, জানা গেলে যে ম্যালেরিয়া হয়েছে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে । রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে । প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ।

তিনি আরও বলেন, "প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ব্রেনে অ্যাটাক করে । এর জন্য একে ব্রেন ম্যালেরিয়াও বলা হয় । এর লক্ষণ, রোগী ঝিমিয়ে পড়বে, ভুল বকবে বা খিঁচুনি শুরু হবে ৷ মেন্টাল কনফিউশন হচ্ছে এমন অর্থাৎ, একটি কাজ করতে গিয়ে অন্য কাজ করছে । এসব যদি কোনও জ্বর অথবা ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে দেখা যায়, তাহলে ধরে নিন রোগীর ব্রেন অ্যাটাক করেছে । সেই জন্য হাসপাতালে পাঠাতে হবে ।" শরীরের অন্য বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে । কী ভাবে বোঝা যাবে? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরিনের পরিমাণ কমে যায় । হিমোগ্লোবিন ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় । তার কারণ ম্যালেরিয়ার জীবাণু রক্তের লোহিত কণিকাকে ফাটিয়ে ফেলে । এটা যখন সাংঘাতিক মাত্রায় হয়, তখন কালো রঙের ইউরিন হয়, অনেকটা কালো রঙের ঠান্ডা পানীয়র মতো দেখতে । এই অসুখকে বলা হয় ব্ল্যাক ওয়াটার ফিভার । এক্ষেত্রে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।

স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা জানিয়েছেন, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে জন্ডিস দেখা দেয় । এর ফলে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায় ৷ ইউরিন সাদা থেকে ধীরে ধীরে হলুদ এবং সেখান থেকে সরষের তেলের মতো লাল হয়ে যায় । ফুসফুস সংক্রমণ হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় । ডায়ারিয়া হতে পারে, বমি হতে পারে । খুব বেশি জ্বর 104-106 হতে পারে । বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এইগুলি একটিও দেখা গেলে, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে । তা হলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে ।" তিনি বলেন, "ম্যালেরিয়া যাতে অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য রোগীকে সারারাত মশারির মধ্যে রাখতে হবে ।" ম্যালেরিয়ার মশা যাতে সুস্থ কাউকে কামড়াতে না পারে তার জন্য রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে । অন্য সময় মশা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ধূপ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন ।

বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কথা ভেবে আগে থেকে ওষুধ খাবেন না । অনেকদিন আগে এমন চিন্তা-ভাবনা ছিল । এটাই ম্যালেরিয়ার ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ডেভেলপ হওয়ার সব থেকে বড় কারণ ।" তিনি বলেন, "অনেকের ধারণা রয়েছে, ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে গেলে তিন মাস বা ছয় মাস ওষুধ খেয়ে যেতে হয় । এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় না । কিন্তু, ম্যালেরিয়ার পরজীবীর শরীরে ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে ।"

ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও যেভাবে এবার বেশি দেখা যাচ্ছে, তাতে এই বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের কাছে চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে । এর কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি নিয়ে যতটা হইচই হচ্ছে, ম্যালেরিয়া নিয়ে তার সিকি ভাগের কমও হচ্ছে না । অথচ, ম্যালেরিয়ার মারাত্মক বিষয়টি যদি ধরা হয়, তাহলে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া যাকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলে, সেটা ডেঙ্গির থেকে কিছু কম নয় । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভাইরাস থেকে ডেঙ্গি হয়, ম্যালেরিয়া হয় পরজীবী থেকে । ডেঙ্গির মতো ম্যালেরিয়ার জীবাণু মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে । তফাত হচ্ছে, ডেঙ্গির মশা দিনে কামড়ায়, ম্যালেরিয়ার মশা রাতে কামড়ায় । সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়, এই সময়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা কামড়ায় । কলকাতায় এপ্রিলের পর থেকে ম্যালেরিয়া ছড়াতে শুরু করে তখন, প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স বেশি দেখা যায় । অগাস্টের পর থেকে প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম শহরে ঢুকে পড়ে । নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স কমে যায়, তখন প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম দেখা যায় ।

ম্যালেরিয়ার পরজীবী চার প্রকারের । পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের ম্যালেরিয়া হয় । তিন প্রকারের ম্যালেরিয়া ভারতে দেখা যায় । সব থেকে মারাত্মক পরজীবীর নাম প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, যাকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলা হয় । একে ব্রেন ম্যালেরিয়াও বলা হয় । অন্যটি, প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ‍্যাক্স । ভারতে সবথেকে বেশি এই ম্যালেরিয়া, অর্থাৎ, প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স দেখা যায় । তবে ভারতের কিছু কিছু অংশে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াও বেশি দেখা যায় । ভারতে অন্য আর যে ধরনের ম্যালেরিয়া দেখতে পাওয়া যায় তার নাম প্লাজ়মোডিয়াম ম‍্যালেরিয়া । ম্যালেরিয়ার অন্য আর এক পরজীবীর নাম প্লাজ়মোডিয়াম ওভেল । এই ম্যালেরিয়া ভারতে দেখা যায় না ।

Intro:কলকাতা, ৩০ অক্টোবর: ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। কারণ, গত দুই বছরের তুলনায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ এবার বেশি দেখা যাচ্ছে কলকাতায়। ম্যালেরিয়ার ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্টের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও স্বাস্থ্যদপ্তর বলেছে, ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


Body:বছর তিনেক আগে কলকাতায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ অনেক কম ছিল‌। ইদানিং, ম্যালেরিয়ার রোগী বেশ দেখা যাচ্ছে। সংখ্যাটা কম নয়। একথা জানিয়ে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, ডাক্তার অমিতাভ নন্দী বলেন, "আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, গত বছরের থেকে এ বছর ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছরের আগের বছর প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম খুব নগণ্য সংখ্যায়, ২-১টি দেখা গিয়েছিল। গত বছর নগণ্য থাকলেও তার আগের বছরের তুলনায় একটু বেশি দেখা গিয়েছিল। এই বছর তার থেকেও বেশি দেখা যাচ্ছে।" এই বিষয়ে রাজ‍্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "ম্যালেরিয়ার কোনও সমস্যা নেই, নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।"

এ দিকে, ম্যালেরিয়া কেন বেশি দেখা যাচ্ছে, তার কারণ হিসেবে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন এই অধিকর্তা বলেন, "এক, ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হওয়া। দুই, এটা আরবান ম্যালেরিয়া। এখানে অ্যানাফিলিস মশার বিশেষ প্রজাতি জন্মায়। সেই মশাই এখানে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। জঙ্গলে যেমন আলাদা মশা। পরজীবী বা জীবানু একই কিন্তু ছড়ানোর বাহক আলাদা। সেই হিসাবে পৃথক নাম দেওয়া হয়েছে।" যেমন, ফরেস্ট ম্যালেরিয়া, আরবান ম্যালেরিয়া, রুরাল ম্যালেরিয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যালেরিয়া। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "কনস্ট্রাকশন এরিয়াতে আরবান ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায়। যে শহরে বর্ষার সময় বেশি জল জমছে, যেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ বেশি হচ্ছে, সেখানে এই মশা জন্মায়।" শহরাঞ্চলের বিভিন্ন জঞ্জালেও এই মশা জন্মায় বলে তিনি জানিয়েছেন

তা হলে, এক্ষেত্রে কী করণীয়? ডাক্তার অমিতাভ নন্দী বলেন, "জ্বর হলেই ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়া সন্দেহ করুন। প্রথমদিনই রক্ত পরীক্ষা করাতে যান। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে প্রথম দিনে যদি নেগেটিভ আসে, তা হলে পর পর তিনদিন রক্ত পরীক্ষা করান। স্লাইড পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করিতে হবে, অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে তিন দিন করানো যাবে না। তার উপর স্লাইড পদ্ধতির তুলনায় অ্যান্টিজেন পদ্ধতি নিম্নমানের। স্লাইডে ঘন প্রলেপ দিয়ে যে পরীক্ষা করা হয়, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড।" এই পদ্ধতিতে পর পর তিনদিন রক্ত পরীক্ষায় যদি ম্যালেরিয়া না পাওয়া যায়, তখন বলা যেতে পারে সংশ্লিষ্ট রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত নন। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের পরামর্শ: ম্যালেরিয়া যাতে আটকানো যায়, তার জন্য জ্বরের রোগীকে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত মশারির মধ্যে রাখতে হবে। যাতে রোগীকে মশার কামড়ে অন্য কারও মধ্যে জীবাণু ছড়াতে না পারে। যখন ম্যালেরিয়া নির্ণয় হয়ে গেল অর্থাৎ, জানা গেল ম্যালেরিয়া হয়েছে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে। রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, ডাক্তার অমিতাভ নন্দী বলেন, "প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ব্রেনে অ্যাটাক করে। এর জন্য একে ব্রেন ম্যালেরিয়াও বলা হয়। এর লক্ষণ, রোগী ঝিমিয়ে পড়বে, ভুল বকবে বা খিঁচুনি শুরু হবে, মেন্টাল কনফিউশন হচ্ছে এমন অর্থাৎ, একটি কাজ করতে গিয়ে অন্য কাজ করছে। এসব যদি কোনও জ্বর অথবা ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে দেখা যায়, তাহলে ধরে নিন রোগীর ব্রেন অ্যাটাক করেছে। সেই জন্য হাসপাতালে পাঠাতে হবে।" শরীরের অন্য বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। কীভাবে বোঝা যাবে? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইউরিনের পরিমাণ কমে যায়। হিমোগ্লোবিন ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তার কারণ ম্যালেরিয়ার জীবাণু রক্তের লোহিত কণিকাকে ফাটিয়ে ফেলে। এটা যখন সাংঘাতিক মাত্রায় হয়, তখন কালো রঙের ইউরিন হয়, অনেকটা কালো রঙের ঠান্ডা পানীয়র মতো দেখতে। এই অসুখকে বলা হয় ব্ল্যাক ওয়াটার ফিভার। এক্ষেত্রে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অবধারিত।

স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা জানিয়েছেন, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে জন্ডিস দেখা দেয়। এর ফলে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, ইউরিন সাদা থেকে ধীরে ধীরে হলুদ এবং সেখান থেকে সরষের তেলের মতো লাল হয়ে যায়। ফুসফুস সংক্রমণ হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ডায়রিয়া হতে পারে, বমি হতে পারে। খুব বেশি জ্বর ১০৪-১০৬ হতে পারে। বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর মধ্যে এইগুলি একটিও দেখা গেলে, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তা হলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।" তিনি বলেন, "ম্যালেরিয়া যাতে অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য রোগীকে সারারাত মশারির মধ্যে রাখতে হবে।" ম্যালেরিয়ার মশা যাতে সুস্থ কাউকে কামড়াতে না পারে তার জন্য রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। অন্য সময় মশা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ধূপ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কথা ভেবে আগে থেকে ওষুধ খাবেন না। অনেকদিন আগে এমন চিন্তা-ভাবনা ছিল। এটাই ম্যালেরিয়ার ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ডেভেলপ হওয়ার সব থেকে বড় কারণ।" তিনি বলেন, "অনেকে ধারনা রয়েছে, ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে গেলে তিন মাস বা ছয় মাস ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় না। কিন্তু, ম্যালেরিয়ার পরজীবীর শরীরে ওষুধের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।"


Conclusion:ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়াও যেভাবে এবার বেশি দেখা যাচ্ছে, তাতে এই বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের কাছে চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি নিয়ে যতটা হৈচৈ হচ্ছে, ম্যালেরিয়া নিয়ে তার সিকি ভাগের কমও হচ্ছে না। অথচ, ম্যালেরিয়ার মারাত্মক বিষয়টি যদি ধরা হয়, তাহলে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া যাকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলে, সেটা ডেঙ্গির থেকে কিছু কম নয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভাইরাস থেকে ডেঙ্গি হয়, ম্যালেরিয়া হয় পরজীবী থেকে। ডেঙ্গির মতো ম্যালেরিয়ার জীবাণু মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তফাৎ হচ্ছে, ডেঙ্গির মশা দিনে কামড়ায়, ম্যালেরিয়ার মশা রাতে কামড়ায়। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়, এই সময়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা কামড়ায়। কলকাতায় এপ্রিলের পর থেকে ম্যালেরিয়া ছড়াতে শুরু করে তখন, প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স বেশি দেখা যায়। অগাস্টের পর থেকে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম শহরে ঢুকে পড়ে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স কমে যায়, তখন প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম দেখা যায়।

ম্যালেরিয়ার পরজীবী চার প্রকারের। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের ম্যালেরিয়া হয়। তিন প্রকারের ম্যালেরিয়া ভারতে দেখা যায়। সব থেকে মারাত্মক পরজীবীর নাম প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, যাকে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া বলা হয়। একে ব্রেন ম্যালেরিয়াও বলা হয়। অন্যটি, প্লাসমোডিয়াম ভাইভ‍্যাক্স। ভারতে সবথেকে বেশি এই ম্যালেরিয়া, অর্থাৎ, প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স দেখা যায়। তবে ভারতের কিছু কিছু অংশে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়াও বেশি দেখা যায়। ভারতে অন্য আর যে ধরনের ম্যালেরিয়া দেখতে পাওয়া যায় তার নাম প্লাসমোডিয়াম ম‍্যালেরি। ম্যালেরিয়ার অন্য আর এক পরজীবীর নাম প্লাজমোডিয়াম ওভেল। এই ম্যালেরিয়া ভারতে দেখা যায় না।
_______


বাইট:
wb_kol_01a_malaria_bite_7203421
স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, ডাক্তার অমিতাভ নন্দীর বক্তব্য।

_______
Last Updated : Oct 31, 2019, 8:08 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.