কলকাতা, 24 জুন : পুলিশের চাকরি তো আর গতে বাঁধা নিয়মে চলে না ৷ 10টা-5টার বদলে 24 ঘণ্টাই সজাগ থাকতে হয় তাঁদের ৷ সেই কারণেই কি পুলিশ কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে চলে আসছে মানসিক অবসাদ ! পার্ক সার্কাসে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সি লেপচার ঘটনার পর এই প্রশ্ন বারবার উঠছে ৷
এই পরিস্থিতিতে ‘সৈনিক সম্মেলন’ শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) ৷ সেখানে রীতিমতো কাউন্সেলিং চলছে ৷ কীভাবে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management) করা যাবে পুলিশ কর্মীদের, সেই নিয়ে আলোচনা চলছে সেখানে ৷ পুলিশ কর্মীরা কাজের চাপে তৈরি হওয়া অবসাদ থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন, ওই সম্মেলনে তার সুলুক সন্ধান দিচ্ছেন ড. মালা গোস্বামী ৷
তবে এই ধরনের অবসাদ শুধু কলকাতা নয়, অনেক সময় বিদেশের পুলিশের মধ্যে দেখা যায় ৷ মনরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া জর্জ ফ্লয়েডের (George Floyd Murder Case) ঘটনাটির অবসাদের সংযোগ ছিল ৷ ঠিক যেমন দিনকয়েক আগে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল সি লেপচা পার্ক সার্কাস এলাকায় এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর পর নিজে আত্মঘাতী হলেন ৷ জর্জ ফ্লয়েড পুলিশের হাঁটুর চাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৷ আর পার্ক সার্কাসে সি লেপচার গুলিতে মারা গেলেন হাওড়ার ওই তরুণী রিমা সিং ৷
পুলিশই সমাজের রক্ষক ৷ তাঁরাই যদি এমন ঘটনা ঘটান, তাহলে সাধারণ মানুষের পুলিশের প্রতি ভরসা কমবে ৷ সেই কারণেই পার্ক সার্কাসের ঘটনার পর কলকাতার সমস্ত থানা ও ইউনিটের পুলিশকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন আছে, তা জানতে চাওয়া হয় লালবাজারে তরফে । এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে ও কলকাতার পুলিশকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য (Mental Health) ঠিক রাখতেই কাউন্সেলিং করানো শুরু হয় ৷ তাই কলকাতা পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকে ৷ আর উদ্যোগ নিতে গিয়ে যে কলকাতা পুলিশ সিরিয়াস, তা কাউন্সেলর বাছাই দেখে বোঝা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে ৷
কারণ, ড. মালা গোস্বামী এর আগে নিউইয়র্ক এবং আফগানিস্তান পুলিশের সঙ্গে কাজ করে এসেছেন । নিউইয়র্ক পুলিশের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করতে তিনি বহু বছর সাহায্য করেছেন ৷ পাশাপাশি আফগানিস্তান পুলিশ বাহিনীতেও তিনি মানসিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করেছেন । এবার সেই পদ্ধতিতেই কলকাতা পুলিশের কর্মীদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের কাজ চলছে ৷
প্রত্যেক সপ্তাহে এই সৈনিক সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানা এবং ট্রাফিক গার্ডে । ইতিমধ্যেই জেমস লং সরণি এবং ডায়মন্ড হারবারের ট্রাফিক গার্ডে আয়োজন করা হয়েছে এই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ক্লাস । এই বিষয়ে কলকাতার এসিপি (বেহালা) অলক সান্যাল জানিয়েছেন, এই সৈনিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা পুলিশকর্মীদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ।
জানা গিয়েছে যে ড. মালা গোস্বামী ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষ আপনাদের কাছে আশা অতিরিক্ত কাজ পেতে চায় । ফলে মন এবং মস্তিস্ককে ঠান্ডা করতে হবে । প্রয়োজন পড়লে ছুটি নিতে হবে । দিনে অন্তত এক ঘণ্টা নিজের জন্য কাটাতে হবে । বন্ধুবান্ধব প্রত্যেকের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে হবে । কোনও ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশকর্মীদের উত্তেজিত করতে পারেন ৷ কিন্তু সেই প্ররোচনায় পা না দিয়ে নিজের মুখে সবসময় হাসি রাখতে হবে ।
এই বিষয়ে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ধরনের সম্মেলন ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের প্রত্যেক বাহিনীর মধ্যে সাড়া ফেলেছে । এই ধরনের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ক্লাসের ফলে আমরা আমাদের কলকাতা পুলিশের বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা রাখতে পারব । এই সম্মেলন প্রত্যেক সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে বিভিন্ন থানা এবং ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ কর্মীদের নিয়ে ।’’