কলকাতা, 8 অক্টোবর: মঞ্চে উপবিষ্ট ইউনেসকো-র (UNESCO) প্রতিনিধিরা ৷ অদূরেই বসে কলকাতা তথা আপামর বাঙালির প্রাণের পুজোকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়ার মূল হোতা তপতী গুহ ঠাকুরতা (Tapati Guha Thakurata) ৷ অতিমারি পরবর্তী প্রথম পুজো কার্নিভাল হওয়ায় এমনিতেই আবেগের অন্ত ছিল না ৷ তাতে যোগ হয়েছে বিশ্বজনীন স্বীকৃতি ৷ স্বভাবতই শনিবাসরীয় রেড রোডের সন্ধ্যা গত পুজো কার্নিভালগুলো থেকে যেন একটু বেশিই রঙিন (Kolkata delivers best ever Pujo Carnival in front of UNESCO delegates) ৷
বিসর্জনকে ঘিরে কার্নিভালকে উৎসবের সূচনা 2016-তে ৷ তবে 2022 বাড়তি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর ইউনেসকো-র প্রতিনিধিদের সামনে কার্নিভালকে জমকালো করে তুলতে হত যে ৷ আর সেটা করতে বরাবরের মতো সবচেয়ে উদ্যোগী হয়ে উঠলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ অন্যান্য দিন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে যেভাবে দেখা যায়, এদিন রেড রোডে সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেল তাঁকে ৷ কখনও বহুরূপী সাজে শিশুদের হাত থেকে গোলাপ নিয়ে তাদের চকলেট বিলোলেন, তো কখনও আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে তালে-তালে পা মেলালেন। আবার কখনও কাঁসর বা করতালে সঙ্গ দিয়ে ইউনেসকো প্রতিনিধিদের যেন বোঝাতে চাইলেন বাংলার দুর্গাপুজোকে বিশ্বজনীন স্বীকৃতি দিয়ে তারা যথার্থই করেছেন।
উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা এবং সল্টলেকের মোট 95টি দুর্গাপুজো কমিটিকে নিয়ে শুরু হয় এদিনের মেগা শো (95 Pujo Committee participated in Pujo Carnival 2022)। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিভিন্ন পুজো কমিটির তরফে সাজানো হয় ট্যাবলো ৷ সেই ট্যাবলো প্রদর্শনের সঙ্গেই চলল একের পর এক পারফরম্যান্স। সবমিলিয়ে শনিবারের সান্ধ্যকালীন রেড রোড যেন আরব্য রজনীর গাথা। কে ছিল না সেখানে ? চেতলা অগ্রণী, সিংহী পার্ক, চক্রবেড়িয়া সর্বজনীন, বাবুবাগান সর্বজনীন থেকে শুরু করে দমদম তরুণ দল, কলেজ স্কোয়্যারের মতো পুজো কমিটি অংশগ্রহণে জমকালো রেড রোড। ঢাকের বাদ্যি, গরবা নাচ, ধামসা-মাদলে বর্ণময় পুজো কার্নিভাল।
এদিন বিকেল 4টে 15 নাগাদ রেড রোডে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তখনও রেড রোডের দু'পাশে অনেক নিমন্ত্রিতের আসন ফাঁকা। কার্ড নেই অথচ বাইরে বহু মানুষ কার্নিভাল চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করতে জড়ো হয়েছেন। তাদের জন্য মুশকিল আসান হলেন মমতা ৷ পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, যারা এই অনুষ্ঠান দেখতে চায় তাদের ভেতরে বসার ব্যবস্থা করতে ৷ সেইমত সাধারণ জনতাকে কার্নিভাল দেখার সুযোগ করে দিল পুলিশ। ঠিক সাড়ে 4টেয় শুরু হল মূল অনুষ্ঠান ৷
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ঢাক বাজানো, সাঁওতালি নাচে জমজমাট পুজো কার্নিভাল
কার্নিভাল শুরু হয় আলিপুর বডিগার্ড লাইনের পুজো দিয়ে। এরপর একে একে দক্ষিণ কলকাতা সর্বজনীন, কলেজ স্কোয়্যার সর্বজনীন, বেহালা নূতন দল, ভবানীপুর 75 পল্লি, অবসর, সিংহী পার্ক, কাশী বোস লেন, হিন্দুস্তান পার্ক সর্বজনীন, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, আহিরীটোলা দুর্গোৎসব সমিতি, বরানগর নতুন পাড়া দাদা-ভাই সংঘ, দমদম তরুণ দল, বেলঘরিয়া বাণী মন্দির, বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, 41 পল্লি, হালতু নন্দীবাগান দুর্গোৎসব, দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসব কমিটি, দমদম পার্ক তরুণ সংঘ প্রত্যেকেই একে অপরকে পাল্লা দেয় তাদের উপস্থাপনায় ৷
এরপর বলার মত অনেককিছুই ঘটেছে ৷ যাইহোক দু'বছরের বিরতির পর আবারও তিলোত্তমায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত একটা কার্নিভাল, সবচেয়ে বড় পাওনা বোধহয় এটাই ৷