কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি : দুপুর থেকে PSC অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রার্থীরা। আন্দোলন চলাকালীন মোট দু'দফায় বিক্ষোভকারীদের তরফে থেকে এক প্রতিনিধি দল PSC-র চেয়ারম্যান দীপঙ্কর দাশগুপ্তের সঙ্গে কথা বলতে যায়। প্রথম দফার বৈঠকে বিক্ষোভকারীদের কোনও দাবিই চেয়ারম্যান মানতে চাননি বলে অভিযোগ তাদের। অবশেষে পুলিশের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয় দফার আলোচনায় কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ায় সাময়িকভাবে বিক্ষোভ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। তবে, এখানেই শেষ নয় বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। তিনি জানাচ্ছেন, এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।
আজ বিক্ষোভের শুরু থেকেই চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও সঠিক পদ্ধতিতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। "PSC হায় হায়", "PSC চোর হ্যায়" এই ধরনের স্লোগান চলতে থাকে সারাদিন। PSC অফিসের বাইরে অর্ধেক রাস্তাজুড়ে জমায়েত হয়েছিলেন প্রায় ৫০০ জন চাকরিপ্রার্থী। কমিশনের অফিসের মূল দুটি গেটের চারদিকেই ব্যারিকেড করে দিয়েছিল পুলিশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ। এক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের তরফে বলা হয়, বাথরুমে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল আধিকারিকদের। আর তখনই এগিয়ে আসেন আরও বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। কিন্তু, বাকবিতণ্ডায় জড়ালেও কথার মধ্যে দিয়ে মিটিয়ে নেওয়া হয় ঝামেলা। এর মধ্যে একবার নিজেদের দাবি দাওয়া ও অভিযোগ নিয়ে PSC-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে যায় প্রতিনিধি দল। কিন্তু সেই আলোচনায় মেলেনি কোনও সদুত্তর। বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলির মধ্যে একটি ছিল, ফুড এবং ফায়ার সার্ভিসের মতো যে সব পরীক্ষায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেই পরীক্ষাগুলিকে বাতিল করা হোক। প্রতিনিধি দলের একজন বিজয় ঘড়াই জানান, চেয়ারম্যান তাঁদের জানিয়েছেন, সব পরীক্ষা স্বচ্ছভাবে হয়েছে। কোনও পরীক্ষা বাতিলের প্রশ্নই ওঠে না।
PSC দুর্নীতিগ্রস্ত এই অভিযোগকে প্রতিষ্ঠা করতে PSC অফিসের উদ্দেশ্যে খুচরো টাকা ছুড়ে মারতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এর মধ্যে বৃষ্টি আসে। কিন্তু, বৃষ্টিতেও দমে যাননি বিক্ষোভকারীরা। ছাতা মাথায় দিয়ে একইভাবে চলতে থাকে বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে বিকেলের দিকে এসে পৌঁছান পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন DC সাউথ মিরাজ় খালিদ। পুলিশের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে যায় প্রতিনিধিদল। এরপর কাজ শেষে যখনই কোনও PSC আধিকারিক অফিস থেকে বের হচ্ছিলেন তখনই বিক্ষোভকারীদের তরফ থেকে আওয়াজ উঠছিল, "চোর, চোর, চোর"। এমন কী বেশ কয়েকজন আধিকারিক ও কর্মচারীদের পিছনে ধাওয়াও করেন বিক্ষোভকারীরা।
দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে আজকের মত আন্দোলন শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ চলে যান জমায়েতকারীরা। দাবি কি মিটল? কী আলোচনা হল দ্বিতীয় দফার বৈঠকে? আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, "বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছেন আন্দোলনের চাপে। প্রথমত ২০১৯ সালের WBCS-এর অ্যানসার কি ওঁরা অবশ্যই পাবলিশ করবেন। ২০১৮ সালের আন্দোলনের ফলে কাট অফ দিয়েছিলেন, ২০১৯ সালের আন্দোলনের জেরে ওঁরা বললেন অ্যানসার কি পাবলিশ করবেন। ২০১৭ সালের WBCS পরীক্ষায় A এবং B-তে যে দুর্নীতি আছে সেটা সাবজুডিশিয়াল বিষয়। আদালতে ওটার ফয়সালা হবে। কিন্তু, গ্রুপ C এবং গ্রুপ D-র ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে সেই দুর্নীতি ওঁরা স্বীকার করেছেন। সেই জন্য PSC-র একজন স্টাফকে সাসপেন্ড করেছেন। এবং আজকের সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে যে একই নম্বর পরপর ৪ জন পেয়েছেন। তাই গ্রুপ D-র ক্ষেত্রে ওঁরা আবার রি-চেক করবেন এবং প্রিলি ও মেনস সবক্ষেত্রে যে OMR শিট সেগুলি আবার রি-চেক হবে। আমাদের আন্দোলনে যেসব দাবিগুলি ছিল এটি তার মধ্যে দ্বিতীয় দাবি। ফায়ার সার্ভিস এবং ফুড এস আইয়ের পরীক্ষায় যে দুর্নীতি হয়েছিল সেটা প্রথমে একটু অস্বীকার করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, পরে উনি মেনে নিয়েছেন এবং বলেছেন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবেন। তারপরেই এটার রিক্রুটমেন্ট হবে।"
তবে এখানেই শেষ নয় বলে জানাচ্ছেন ইন্দ্রজিৎ। তিনি বলেন, "আমাদের স্পষ্ট কথা। এর আগে আমরা আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলনের ফলে আগে যেখানে পরীক্ষা হত সেখানে সিল থাকত না, আজকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের খামে সিল দিতে ওঁরা বাধ্য হচ্ছেন। মোবাইল ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার ব্যবস্থা করবেন। দুর্নীতির অভিযোগে একজনকে সাসপেন্ড করেছেন শুধু তাই নয়, দুর্নীতির সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে ওঁরা সেটা প্রকারান্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন। আমরা আজকের এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সারাক্ষণ আন্দোলন করেছি এবং আগামী দিনে আমাদের একটাই বক্তব্য যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। এবং এই দুর্নীতি না থামা পর্যন্ত আমরা আগামীদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। আমরা শুধু এখানেই ডেপুটেশন দিয়ে থেমে যাব না। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আদালতে যাব। আদালত তদন্ত করে সমস্ত দুর্নীতিবাজ চোরদের জেলে ভরা না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আজকে সাময়িকভাবে আন্দোলনকে প্রত্যাহার করলেও, আমাদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এবং এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগামীদিনে আমরা রাস্তায় থাকব। চোরদের ছাড়ব না।"