কলকাতা : যতই সময় গড়াচ্ছে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, জো বাইডেনের জয়ের মার্জিন বাড়ছে অধুনা প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলের ইঙ্গিত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশ । তাঁরা মনে করছেন যে অ্যামেরিকার ক্ষমতায় ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাবর্তন এবং বাইডেনের অভিষেক হলে ভারতের পক্ষে তা এক শুভ ইঙ্গিত ।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, অমলকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য পরাজয় শুধু অ্যামেরিকার কাছেই নয়, সমগ্র পৃথিবীর এবং ভারতের পক্ষে একটা শুভ ইঙ্গিত । "ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন একনায়কতন্ত্রের প্রতীক । উনি ব্যবসা ছাড়া কিছুই জানেন না । সেইদিক থেকে দেখতে গেলে ডেমোক্র্যাটরা অনেক কম রক্ষণশীল এবং ডেমোক্র্যাটরা যুদ্ধবাজ নয় । তাই আমি নিশ্চিত যে বাইডেনের নেতৃত্বে ভারত- অ্যামেরিকা সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিশেষত চিন ইশুতে ভারতের স্বার্থে আরও স্বদর্থক ভূমিকা পালন করবে অ্যামেরিকা ।" অমলকুমার মুখোপাধ্যায় ETV ভারতকে জানান ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অধ্যাপক, দীপঙ্কর দাসগুপ্ত মনে করেন যে বাইডেনের জয় ভারতের পক্ষে কতটা শুভ কবে সেটা এখনই বলা না গেলেও, এটা পরিষ্কার যে ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাবর্তন অশুভ ইঙ্গিত কোনওমতেই নয় । তাঁর মতে, কর্পোরেট ট্যাক্স নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের মতের যে মূল পার্থক্য তাতে আশা করা যায় যে অ্যাপেল-এর মতো বহুজাতিক সংস্থা হয়ত ভারতে নিজের প্রোডাকশন ইউনিট খুলতে রাজি হবে । "বাকি অ্যামেরিকার নির্বাচনের ফলাফল ভারতের পক্ষে লাভজনক হবে কি না তার পূর্বাভাস এখনই করা সম্ভব নয় ।" দাসগুপ্ত বলেন।
BJP-র রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাসগুপ্ত মনে করেন যে, বাইডেনের জিতলে ভারতের জন্য এক দিকে যেমন ইতিবাচক, অন্যদিকে থেকে থেকে নেতিবাচকও বটে । তাঁর মতে, কর্পোরেট ট্যাক্স বাড়ানো নিয়ে বাইডেনের যা মতামত তাতে ভারতে অ্যামেরিকান বহুজাতিকদের বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হবে এবং স্বভাবতই তাতে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে । "কিন্তু কাশ্মীর ইশুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন কোনও নাক গলাননি, ঠিক তেমনটাই বাইডেন করবেন বলে আমার মনে হয় না ।" দ্বিতীয়ত চিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক ইশুতে বাইডেনের কী দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে সেটাও দেখার বিষয় । আর শেষ কথা হল, ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের দেশের একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে । নতুন প্রেসিডেন্ট এলে আবার সেই সম্পর্কটা নতুন করে গড়তে হবে ।" স্বপন দাসগুপ্ত বললেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, ওমপ্রকাশ মিশ্রর মতে, অ্যামেরিকার সঙ্গে চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে অচলাবস্থা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, নতুন জমানায় নিশ্চই তাতে নতুন উপাদান আসবে এবং আমার মতে সেই উপাদান হবে ইতিবাচক । "সেই ইতিবাচক চিন-অ্যামেরিকা সম্পর্কের একটা ইতিবাচক প্রভাব আর বাকি সব দেশের মতোই ভারতের উপরও পড়বে । আর যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের আর কী কী ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ভারতের উপর পড়বে সেটার পূর্বাভাস করার সময় আসতে আরও দেরি আছে । এটা আমার মতামত । পার্টির নয় ।" ওমপ্রকাশ মিশ্র ETV ভারতকে জানান ।
কংগ্রেসের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান, মিতা চক্রবর্তী বলেন যে আশা করা যায় যে বাইডেনের জমানায় ভিসা আইন অনেক নমনীয় হবে যেটা ভারতের পক্ষে ভালোই হবে । "এছাড়াও মানবাধিকার সংক্রান্ত ইশুতেও আশা করা যায় যে বাইডেন জমানা ট্রাম্প জমানার থেকে অনেক নমনীয় হবে, যেটি ভারতের পক্ষে সুখকর," মিতা চক্রবর্তী ETV ভারতকে বলেন।