কলকাতা, 24 জুন : COVID-19-এর বিরুদ্ধে প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করছেন ডাক্তার ও নার্সরা । অথচ, এই লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত এক সরকারি হাসপাতালের নার্সকে শারীরিক এবং মানসিক হেনস্থার অভিযোগ উঠল ওই হাসপাতালেরই শীর্ষ স্তরের এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় গোটা বিষয়টি লিখিতভাবে স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছেন অভিযোগকারী ওই নার্স । বিচার চাইছেন তিনি । নার্স সংগঠন, নার্সেস ইউনিটিও এই ঘটনায় অভিযোগ জানিয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। অভিযোগের জেরে তদন্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে নার্সেস ইউনিটি। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, “মার্চ মাস থেকে নদিয়া জেলার তেহট্ট সাব ডিভিশন হাসপাতালের এক নার্স শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার শিকার হচ্ছেন ওই হাসপাতালের শীর্ষ স্তরের এক আধিকারিকের জন্য । সে কুপ্রস্তাব দেয় ওই নার্সকে । কিন্তু, সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার তাঁকে বিভিন্ন রকমভাবে ভয় দেখানোর হয়েছে । তাঁর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালানো হয়েছে । কাজের কথা বলে তাঁকে চেম্বার, কোয়ার্টারে ডাকা হত । অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে অভিযুক্ত ওই আধিকারিক । এমনকী হুমকি দেওয়া হয় নার্সকে । অভিযুক্তর কথায় রাজি না হলে করিমপুরে বদলি করে দেওয়ার কথাও বলা হয় । সঙ্গে আরও বলা হয় ওখানকার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক নার্সকে শায়েস্তা করবেন। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে 26 মার্চ, তিন ঘণ্টার নোটিসে তাঁকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে বদলি করে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে ওই হাসপাতালের কাজে যোগ দেন তিনি । তারপর সেখান থেকে চাপরা গ্রামীণ হাসপাতালে বদলি করে দেওয়া হয় । তিনি এখনও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন । অথচ, মহকুমাশাসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।"
ওই চিঠিতে আরও জানানো হয়, “ ওই নার্সকে মানসিক ভাবেও হেনস্থা করতেন ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক । একদিন অভিযুক্ত এবং তাঁর বন্ধুর বাইকে জোর পূর্বক তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু ফাঁকা রাস্তা দেখে তিনি যেতে রাজি হতে চাননি । পরে ওই বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে । দুর্ঘটনায় জখম হন নার্স। এরপরে করিমপুরের ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক নার্সকে হেনস্থা করেন । যে কোয়ার্টারে থাকতে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে, সেটি ছেড়ে অন্য একটি কোয়ার্টারে চলে যেতে বলেন তিনি। নতুন কোয়ার্টারে যান এই নার্স। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন শৌচাগারে জলের কোনও ব্যবস্থা নেই, ভিতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করা যায় না । সেই দরজা ঠিক করে দেওয়ার কথা ওই স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানান তিনি । অনেকবার জানানো হলেও ঘরের দরজা ঠিক করে দেওয়া হয়নি। এ দিকে, দরজা বন্ধ না করতে পারার সমস্যাটি লিখিতভাবে জানাতে চাইলেও তা জমা নেননি করিমপুরের ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং সিস্টার ইনচার্জ । এরপর 14 মে গোটা বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে যান এই নার্স। সেখানে তাঁর অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য জোর করেন অন্য দুই আধিকারিক । অভিযোগ তুলে নিতে না চাইলে জোর করে তাঁকে লিখিয়ে নেওয়া হয় যে তিনি চাপরা গ্রামীণ হাসপাতালে পোস্টিং নিতে চান। এই পরিস্থিতির মধ্যে মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন । অল্প কয়েক দিনের মধ্যে দুই দুই বার তাঁকে COVID-19-এর ক্রাইসিস বলে বদলি করা হয়েছে । এ সব ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে তাঁর মনে হচ্ছে। এরপরে 29 মে তিনি লিখিতভাবে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানান চাপরা গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁকে জোর করে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে, তিনি তেহট্ট সাব ডিভিশন হাসপাতালে পোস্টিং নিতে ইচ্ছুক। ”
এই ঘটনা জানাজানি হতে নড়েচড়ে বসে নার্স সংগঠন । লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় স্বাস্থ্য দপ্তরে । নার্সেস ইউনিটির সেক্রেটারি, ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "COVID-19-এর এই পরিস্থিতির মধ্যে সুস্থ পরিষেবা দেওয়ার জন্য যেখানে সবাই নাজেহাল, সেখানে এই ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক । এই নার্স COVID-19-এর আইসোলেশন ওয়ার্ডেও ডিউটি করেছেন । এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত এবং, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি আমরা ।" এই অভিযোগের বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, " অভিযোগ পেয়েছি। এই ঘটনায় তদন্ত করা হবে।"