কলকাতা, 24 এপ্রিল : মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির পালটা জবাব দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ গতকাল তিনপাতার চিঠির পর আজ ফের মুখ্যমন্ত্রীকে 14 পাতার চিঠি পাঠালেন তিনি ৷ ওই চিঠির ছত্রে ছত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মনোনীত বলেছিলেন ৷ তাঁর উত্তরে ধনকড় লিখেছেন, "আমি নিযুক্ত ৷ আর রাজ্যপাল রাবার স্ট্যাম্প বা ডাকঘর নয় ৷" পাশাপাশি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তোষণ করেন মুখ্যমন্ত্রী, তিনি কোরোনা নিয়ে রাজ্যের মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন ৷ এরকম একাধিক অভিযোগ করেন ধনকড় ৷
চিঠির প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন রাজ্যপাল ৷ লেখেন, ‘‘আমাদের কিছু সাংবিধানিক দায়-দায়িত্ব রয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যেমন আপনাকে সংবিধান মেনে চলতে হবে, তেমনই রাজ্যপাল হিসেবে সংবিধান রক্ষা করার দায়িত্ব আমারও ৷’’ কোরোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ, এই অভিযোগ করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য আপনি বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন ৷’’ এমন কী এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী তাতেও সাম্প্রদায়িকতাকে টেনে এনেছেন বলে উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল ৷
গোটা বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য যা যা করা দরকার তাই করার পরামর্শ দেন ধনখড় ৷ তিনি জানান, COVID-19 এর মোকাবিলায় যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক কোয়ারানটাইন সেন্টার খোলা না যায়, হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়া হয়, চিকিৎসকদের PPE না দেওয়া যায় বা দুষ্কৃতীদের হাত থেকে তাঁদের বাঁচানো না যায়, তাহলে বিপর্যয় আসতে বেশি দেরি করবে না ৷ তাই ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’, ‘তৃণমূল কংগ্রেস’, ‘জগদীপ ধনখড়’ বা ‘রাজ্যপাল’-এর ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে ৷ রাজ্যপালকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ভুলে যাবেন না আপনি মনোনীত রাজ্যপাল ৷ আমি নির্বাচিত জন-প্রতিনিধি ৷’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই দুই শব্দের বিরোধিতা করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এই শব্দগুলি সংবিধানের পরিপন্থী ৷ আমি মনোনীত নই, নিযুক্ত ৷ রাজ্যপাল রাবার স্ট্যাম্প বা ডাকঘর নয় ৷’’
শুধু চিকিৎসা পরিষেবা নয়, রেশন ব্যবস্থার দুর্নীতির প্রসঙ্গেও মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন তিনি ৷ রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রেশনের চাল-ডাল বিলির ক্ষেত্রেও যদি রাজনীতি করা হয় ও লুটপাট চালানো হয় এবং লকডাউনের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে রাজ্য ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজ্যের অসহায় মানুষগুলি অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাবে ৷’’ কোরোনা পরবর্তী সময়ে রাজ্যের আর্থিক নীতি এখনই ঠিক করা উচিত বলে তিনি মনে করেন ৷ রাজ্যের মানুষ বহু বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ সেসবে কান দেওয়া হচ্ছে না ৷ ফলে রাজ্য আরও বড় বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীকে রাজনীতি ছেড়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷
লকডাউন শুরু হওয়ার পর রাস্তায় নেমে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা বজায় রাখার অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এটা বিপর্যয়ের সময় ৷ আপনার পথে নামার মনোবৃত্তি বিপরীত ছাপ ফেলতে পারে সাধারণ মানুষের মনে ৷’’ রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘আপনার রাজনৈতিক স্টান্সের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে বহু টাকা খরচ হয়েছে ৷ এতে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট হয়েছে ৷’’ CAA-বিলের প্রতিবাদে একসময় পথে নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেইসময় তাঁকে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল বলে জানান রাজ্যপাল ৷ পুরো বিষয়টি তাঁর সাংবিধানিক এক্তিয়ারের বাইরে বলে উল্লেখ করেন ধনখড় ৷
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের তুলনা টেনে ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘তাঁর সময়ে বাংলায় কোনও অরাজকতা ছিল না ৷ কোনও লুটপাট ছিল না ৷ মানুষ শান্তিতে ছিলেন ৷ সেরকম মুখ্যমন্ত্রী এখন আর নেই ৷’’ তাঁকে অপমানের বিষয়ে রাজ্যপাল জানান, একজন মুখ্যমন্ত্রী কখনওই রাজ্যপালের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করতে পারেন না ৷ মুখ্যমন্ত্রী সবসময় জোর গলায় কথা বলেন ৷ যা মোটেই ঠিক চোখে দেখছেন না তিনি ৷ সবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘রাজভবনে আপনার একজন বন্ধু রয়েছেন ৷ সাধারণ মানুষের জন্য তিনি সবসময় আপনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চান ৷’’