কলকাতা, 2 অক্টোবর : রাজ্যজুড়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা গতকাল থেকে শুরু হয়েছে । কোরোনা আবহে তৈরি নিউ নর্মালে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে । অনলাইন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর ঘরে বসেই ওপেন-বুক পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিলেন পরীক্ষার্থীরা । আবার পরীক্ষা শেষে অনলাইন মাধ্যমেই পাঠিয়ে দিলেন উত্তরপত্র । শহর কলকাতার অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠুভাবেই মিটেছে প্রথম দিনের পরীক্ষা । এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়াটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে । তাই প্রথম দিনের পরীক্ষায় তারাও সফল হল বলা যায় । এর মধ্যেও কয়েকজন পড়ুয়াকে কলেজ ক্যাম্পাসে বসে পরীক্ষা দিতে দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ কলেজগুলিতে 1 থেকে 8 অক্টোবর পর্যন্ত স্নাতকের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা চলবে । প্রথম দিনের পরীক্ষা নিয়ে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল কর বলেন, "আমাদের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে । কোনও অসুবিধা বা সমস্যার কথা জানা যায়নি । আশা করি, পরবর্তী দিনের পরীক্ষাগুলোও এভাবেই হবে । তাহলে ছাত্র ও আমাদের যে উদ্বিগ্নতা সেটা কাটবে । নতুন ফরম্যাটে একটু ভালোভাবে হলেই আমাদের ভালো লাগবে । আজকের দিনটা তো সামলে উঠেছি । আমরা আসলে অনেকটাই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম । ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে ট্রায়াল করিয়েছিলাম । তার জন্য আজকের দিনটা ঠিকঠাকই গেল ।"
বেথুন কলেজের অধ্যক্ষা কৃষ্ণা রায় বলেন, "কোনও অসুবিধাই হয়নি । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশ্নপত্র এক ঘণ্টা আগে এসেছে । সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তা সমস্ত বিভাগের প্রধানদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি । তাঁরা পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । এ ব্যাপারে আমাদের মক টেস্ট হয়েছিল বিভিন্ন বিভাগে নির্দিষ্ট সময়ে । পরীক্ষা হয়েছে, সময়মতো তাঁরা উত্তরপত্র জমাও দিয়ে দিয়েছেন । আমার কাছে রিপোর্টও জানিয়ে দিয়েছেন । আশা করছি, বাকি দিনগুলোও ভালোভাবেই পরীক্ষা নিতে পারব ।"
জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, "100 শতাংশ ভালোভাবে হয়ে গেছে । সবাই সময়ের মধ্যে খাতা দিয়ে দিয়েছে । আধ ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ খাতা জমা পড়ে গেছিল । আমাদের 95-96 শতাংশ খাতা অনলাইনেই জমা পড়েছে । বাকি 4-5 শতাংশ খাতা পরীক্ষার্থীরা এসে সময়ের মধ্যেই জমা দিয়ে গেছেন । আমরা ভীষণ টেনশনে ছিলাম । এত বড় একটা পরীক্ষা ভালোভাবেই হয়েছে । এতগুলো বিভাগ, বিষয় নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম । তবে, আর কোনও সমস্যা হবে না ।"
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও গতকাল পরীক্ষা শুরু হয় । চলবে 11 অক্টোবর পর্যন্ত । প্রথমদিনের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে বলে জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, "পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে । কোনও রিপোর্টিং নেই । অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা ঘটার খবর নেই । হেল্পলাইনে কিছু ফোন এসেছিল । নেটওয়ার্ক ক্যানেক্টিভিটিতে কিছু সমস্যা হচ্ছে, উত্তরপত্র জমা দিতে একটু দেরি হতে পারে, এই ধরনের সমস্যার কথা তারা জানিয়েছিল । সেগুলো কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে ।"
তবে, অধিকাংশ জায়গায় পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হলেও ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের পরীক্ষা দিতে দেওয়ায় বিতর্কে জড়াল আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কলেজ । জনা কুড়ি পরীক্ষার্থী এসে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন অফলাইন মাধ্যমে । সামাজিক দূরত্ব ও স্যানিটাইজ়েশন মেনেই হয়েছে পরীক্ষা । তবুও ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে দেওয়ায় নিয়মের লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সংশ্লিষ্ট মহলে । যদিও কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতির দাবি, UGC-র নিয়ম মেনেই কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে ক্যাম্পাসে বসে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে ।
পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, "কিছু প্রান্তিক এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ছিল । যাদের ইন্টারনেট পরিষেবা, স্মার্টফোন, এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত নেই । তাঁরা আমায় জিজ্ঞেস করেছিল স্যার আমরা কী করব? আমি তাঁদের বলেছিলাম, আমি আর কী করতে পারি, একমাত্র আমার কলেজ ক্যাম্পাসটাকে দিতে পারি, তোমরা সেখানে বসে পরীক্ষাটা দিয়ে যাবে UGC-র গাইডলাইন মেনে । UGC-র গাইডলাইন বলা ছিল, অনলাইন দিতে পারে, অফলাইন দিতে পারে, অনলাইন-অফলাইন দুটির ব্লেন্ডেড মোডে দিতে পারে । তাহলে যারা অনলাইনে পারছে না টেকনোলজির অভাবে, তাঁদের আমরা পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে পারব না । এই রকম গোটা 25 ছাত্র-ছাত্রী আজ এসেছিল ।কোরোনার নিয়ম মেনে অর্থাৎ, সামাজিক দূরত্ব মেনে, স্যানিটাইজ় করে পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে ।"