কলকাতা, 19 জুন : 11 বছর পর প্রাণ ফিরে পেলেন ‘মৃত’ ব্যক্তি ! আর তারপরই ঘটে গেল বিপত্তি ৷ প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে আটক করল সিবিআই (CBI) ৷ একই কারণে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মুখোমুখি হতে হল তাঁর বাবাকেও ৷ প্রাথমিকভাবে দু’জনকেই কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতর নিজাম প্য়ালেসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ অভিযুক্তরা হলেন অমৃতাভ চোধুরী ও তাঁর বাবা মিহিরকুমার চৌধুরী ৷ এঁদের মধ্যে প্রথমজন এতদিন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় (Jnaneswari Express train derailment) মৃতদের তালিকায় ছিলেন !
2010 সালের 28 মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস উল্টে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ৷ সরকারিভাবে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে 148 জনের ৷ মৃতদের সেই তালিকায় নাম ছিল অমৃতাভ চৌধুরীরও ৷ যার জেরে আর্থিক ক্ষতিপূরণও পায় তাঁর পরিবার ৷ সরকারের তরফে দেওয়া হয় চার লাখ টাকা ৷ সেইসঙ্গে, অমৃতাভর বোন চাকরিও পান ৷
আরও পড়ুন : বধূ নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার শুভশ্রীর জামাইবাবু
সূত্রের খবর, রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিচয় জানতে তাঁদের সকলেরই ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছিল ৷ 11 বছর আগে সেই পরীক্ষা অনুসারেই অমৃতাভকে মৃত বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল রেল ৷ কিন্তু পরে ডিএনএ রিপোর্টে গরমিল নজরে আসে আধিকারিকদের ৷ সত্য উদ্ঘাটনে সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেল ৷ তাদের তরফে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখাকে একটি চিঠি পাঠানো হয় ৷ চিঠিতে গোটা বিষয়টি আরও একবার খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয় ৷
সিবিআই তদন্ত শুরু করতেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে ৷ জানা যায়, যাঁকে এতদিন মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, সেই অমৃতাভ চৌধুরী বহাল তবিয়তেই আছেন ৷ এরপরই অমৃতাভ ও তাঁর বাবাকে আটক করা হয় ৷ প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ডিএনএ রিপোর্টে কারচুপি করেই অমৃতাভকে ‘মৃত’ সাজানো হয়েছিল ৷ যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা এবং সরকারি চাকরি হাসিল করা যায় ৷
আরও পড়ুন : Saradha Chit Fund Case : সারদা মামলায় জামিন পেলেও জেলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি নয় দেবযানীর
এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন রেল কর্তারা ৷ কীভাবে এই কাণ্ড ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ কারণ, রেলের মতো একটি সংস্থার এত বড় ভুল হল কীভাবে ? ঘটনা ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে ৷ যেমন, প্রথমেই জানা দরকার, আদৌ অমৃতাভ সেদিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে ছিলেন কিনা ৷ নাকি তাঁর টিকিটে অন্য কেউ যাত্রা করছিলেন ৷ যাঁর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৷ সেটা হলে আরও একটা অনিয়মের প্রমাণ মিলবে ৷
এছাড়া, বলা হচ্ছে, ডিএনএ রিপোর্টে কারচুপি করা হয়েছিল ৷ যে কারও পক্ষে তো এমন কাজ করা সম্ভব নয় ৷ তার জন্য পেশাদার এবং প্রভাবশালী লোক দরকার ৷ তবে কি কোনও সরকারি চিকিৎসক ও রেলের উচ্চপদস্থ কর্তা এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ?
আরও পড়ুন : খুনের অভিযোগে মুম্বই পুলিশের হাতে ধৃত ভরতপুরের পরিযায়ী শ্রমিক
প্রশ্ন আরও আছে ৷ অমৃতাভ যদি জীবিতই থাকেন, তাহলে কার দেহ অমৃতাভর বলে চালানো হয়েছিল ? সেই মানুষটির পরিচয় কী ? তাহলে কি অন্য কারও সঙ্গে সেই সময় অন্যায় হয়েছিল ? আপাতত এইসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন সিবিআই গোয়েন্দারা ৷