কলকাতা, 30 জানুয়ারি : দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি বাসানো নিয়ে বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না (controversy on Netaji statue in India Gate) । প্রথমে বিতর্ক শুরু হয়েছিল অমর জাওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি বসানোর ভাবনা নিয়ে । কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই উদ্যোগকে বিরোধীদের একটা বড় অংশ একে ইতিহাস বিকৃতির লক্ষ্যে পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে । গত 23 জানুয়ারি ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি মূর্তির হলোগ্রাম উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ ভবিষ্যতে সেখানেই গ্রাফাইটের বিশাল নেতাজি মূর্তি বসার কথা ৷
কিন্তু নেতাজির যে মূর্তি বসানো হবে বলে কেন্দ্র ঠিক করেছে, সেই মূর্তির অবয়ব নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন নেতাজি পরিবারের সদস্যরা ৷ মূর্তিটির স্যালুটিং পশচার নিয়ে আপত্তি উঠেছে ৷ নেতাজির পরিবারের পাশাপাশি এতে আপত্তি তুলেছেন ইতিহাসবিদদের একাংশও ৷ ইতিহাসের বিশিষ্ট অধ্যাপক আশিসকুমার দাস-এর মতে, বর্তমানে ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির যে হলোগ্রাম বসানো হয়েছে তাতে নেতাজির স্যালুটিং পশচার না থাকলেই ভাল হত । তিনি এই মূর্তি স্থাপন সম্পর্কে বলেন, "নেতাজির মূর্তি স্থাপন নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু দেশে বর্তমানে যে দলের সরকার রয়েছে তারা দেশের ইতিহাসকে মুছে দিতে চাইছেন । যেহেতু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না, তাই স্বাধীনতা বা তার পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের বিভিন্ন প্রধানমন্ত্রী বা নেতাদের কৃতিত্ব তারা মুছে দিতে চাইছে ৷ আর সেই লক্ষ্য নিয়েই ইন্ডিয়া গেট থেকে ইন্দিরা গান্ধির একাত্তরের যুদ্ধ জয়ের কৃতিত্ব মুছে দিতে অমর জওয়ান জ্যোতিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে । তার বদলে ইন্ডিয়া গেটে বসানো হবে নেতাজির মূর্তি । কিন্তু এই মুহূর্তে যারা এই মূর্তি বসাচ্ছেন তারা নেতাজির ভাবনা আদর্শ ও জীবনকে কতটা শ্রদ্ধার সঙ্গে মানেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে । মূর্তি না বসিয়ে তারা যদি নেতাজির আদর্শে চলা, সবাইকে নিয়ে চলা, সব ধর্মকে সম্মান করা এবং ঐক্যের আদর্শ অনুসরণ করতো তাহলে সেটাই হত নেতাজিকে সম্মান জানানোর আদর্শ উপায় । মূর্তির স্যালুটিং পশচার নিয়ে বলব একজন তো সারাক্ষণ স্যালুট করছি এমন ভাবে থাকতে পারেন না ৷ এক্ষেত্রে যদি জাতীয় পতাকার সামনে নেতাজি স্যালুট করছেন এমন দেখা যেত তাহলে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হতো, কারণ তাহলে নেতাজির, দেশমাতৃকা ও জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান তার দেখানো হত । কিন্তু আমার মনে হয় এই মূর্তির বদল করলেই ভাল হয় ।"
অনেকটা একই মত নেতাজি পরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি চন্দ্র বসুর । তিনি বলেন, "নেতাজি ভক্তদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির একটি মূর্তি বসানো হোক, তা নিয়ে আমি নিজেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম । আমরা এই মূর্তি স্থাপনকে স্বাগত জানাচ্ছি । কিন্তু 365 দিন 24 ঘণ্টা কারও পক্ষে স্যালুট করা সম্ভব নয় । যেহেতু নেতাজিকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তাই 21 অক্টোবর দিনটিকে দেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক । কারণ 15 অগাস্ট ছিল দেশভাগের দিন আর 21 অক্টোবর ছিল সেই দিন যেদিন নেতাজি ব্রিটিশ ভারতে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণা করেছিল । একে সম্মান জানিয়ে সংসদে থাকা নেতাজির ছবির একটি রেপ্লিকা দিল্লিতে বসানো হোক । " তিনিও ইতিসের অধ্যাপক আশিসকুমার দাসের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন, "365 দিন নেতাজি কাউকে স্যালুট করছেন, এমন পোস্ট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না । "
অন্যদিকে, এর মধ্যে কোনও অসাধারনত্ব দেখছেন না প্রাক্তন আইপিএস নজরুল ইসলাম ৷ তাঁর মতে, একজন সেনা প্রধান বা একজন পুলিশ কর্তা স্যালুট দেন যখন তাঁর সিনিয়র কোনও অফিসার তাঁর সামনে আসেন এবং তিনি ওয়েল ইউনিফর্মড এবং তাঁর মাথায় টুপি থাকবে ৷ এরকম হলেই তিনি শুধুমাত্র স্যালুট দাবি করতে পারেন ৷ এক্ষেত্রে দুজনই দুজনকে স্যালুট দেবেন । দিল্লিতে নেতাজি মূর্তির হলোগ্রাম আমি দেখিনি । তবে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে ৷