কলকাতা, 31 মে : দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে দেখা গেল আশার আলো । ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা দাস এসএসসির থেকে পেলেন চাকরির সুপারিশপত্র (Cancer Sufferer Soma Das gets recommendation from SSC for her Job)। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) রায়ের ভিত্তিতেই বীরভূম নলহাটির সোমাকে নিয়োগের সুপারিশপত্র পাঠানো হয়েছে এসএসসির তরফে ৷
এসএসসির শিক্ষক নিয়োগের মেধাতালিকায় নাম ছিল সোমার ৷ তার পরও তিনি চাকরি পাননি ৷ পরে এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Recruitment Scam) বিরুদ্ধে আন্দোলনেও সামিল হন তিনি ৷ কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তাঁর চাকরির বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করে দেখতে বলে কলকাতা হাইকোর্ট ৷
সেই মতো পরবর্তী বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে অবশেষে চাকরি পেলেন সোমা ৷ জানা গিয়েছে যে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখেই তাঁকে বাড়ির কাছে নলহাটির মধুরা হাই স্কুলে নবম-দশম শ্রেণীর বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করা হতে চলেছে ৷ সোমা দাস বলেন, "আমি আচার্য সদন অর্থাৎ এসএসসি কমিশনের থেকে চিঠি পেয়েছি ৷ এখানে কোন স্কুলে এবং ক্লাসের জন্য আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে, তা লেখা রয়েছে । তবে কবে থেকে কাজে যোগ দিতে হবে, সেই সংক্রান্ত চিঠি আমি এখনও পায়নি ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই খবর পেয়ে আমার যতটা আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, আমি ততটা হতে পারছি না ৷ কারণ, আমরা সবাই মিলে এই আন্দোলন শুরু করেছিলাম ৷ তাঁদের মধ্যে শুধু আমি চাকরি পেলাম ৷ আপাতত বাকিরা এখনও পাইনি ৷ তাই তাদের দ্রুত নিয়োগের আবেদন রইল আমার । মেধা তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও আমাকে এই চাকরি পাওয়ার জন্য আইনি লড়াই লড়তে হয়েছে । আমি আমার নিজের মেধার উপর ভর করেই এই চাকরি পেলাম ।"
তিনি আরও বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যখন বর্ধিত আসনের ঘোষণা করেন, তখন সেখানে আমার নাম ছিল ঠিকই, তবে যত সংখ্যক আসনের ঘোষণা করা হয়, তা যথেষ্ট নয় । তাই বেশিরভাগ প্রার্থী বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে চাকরি পাওয়া থেকে ।"
আইনজীবী ফিরদৌস শামিম, যিনি এই পুরো লড়াইয়ে সোমাদেবীর পাশে ছিলেন এবং কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই সোমাদেবীর আইনি লড়াইটি করেছেন, তিনিই এই খবর পেয়ে আনন্দিত । তিনি বলেন, “আজ সত্যিই একটা আনন্দের দিন । তবে সোমা দাসের মতো আরও বহু সোমা দাস পশ্চিমবঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও চাকরি পাননি ৷ আজও তাঁদের জন্য আমাদের এই লড়াই জারি থাকবে ৷ আমরা আশা করি সবাই যেন ন্যায্যভাবে চাকরি পান ।"
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, দীর্ঘদিন ধরে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা দাস । গত 18 এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে প্রথমবার আশার আলো দেখেন আন্দোলনকারীরা ৷ সেখানে সোমা দাসের পাশাপাশি বাকি বঞ্চিতদের চাকরি দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত ।
তবে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল 2019 সালে ৷ সেই সময় প্রেস ক্লাবের সামনে একটা ছোট ত্রিপল টাঙিয়ে বিক্ষোভে বসেন হাতে গোনা কয়েকজন । দিনে দিনে বাড়তে থাকে সেই জমায়েত। চওড়া হতে থাকে মাথার উপরের ত্রিপলের ছাউনি । সেই সময় লাগাতার অনশন চালানোর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে আন্দোলন তুলে নেন তাঁরা । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই সমস্যা সমাধানের জন্য চাকরি প্রার্থীদের পাঁচজন ও শিক্ষা দফতরের পাঁচ সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় । তবে তারপরেও বন্ধ হয়নি দুর্নীতি । ফলে আবার শুরু হয় আন্দোলন ৷
আরও পড়ুন : Cancer Sufferer Soma Das : ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি দিতে স্কুল শিক্ষা দফতরকে নির্দেশ রাজ্য়ের