কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি: জাতীয় সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (HC On Govt Officer)। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এই নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে জাতীয় সড়কের জলপাইগুড়ি বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ডিরেক্টর সঞ্জীব শর্মা, জাতীয় সড়কের ম্যানেজার শৈলেন্দ্র শম্ভু এই অধিগ্রহণের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত ভূমি আধিকারিক দাওয়া তেশরিং দুপকা এবং এই চক্রে জড়িত অসমের এক ব্যক্তি-সহ মোট 4 জনের বিরুদ্ধে পুলিশকে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এফআইআর করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। প্রাথমিকভাবে দু'মাসের মধ্যে তদন্ত করে সেই রিপোর্ট নিম্ন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ার থানাকে।
বিচারপতি রাজশেখর মান্থা নির্দেশে বলেছেন, "ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ উঠলেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এফআইআর করে তদন্ত করতেই হবে। অভিযুক্ত যত বড় আধিকারিকই হন না কেন তদন্ত বাধ্যতমূলক।" ফলে, আলিপুরদুয়ারের সবিতা রায় নামে এক জমিদাতার প্রাপ্য টাকা অসমের এক ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা করা এবং তা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এবার বড়সড় প্রশ্নের মুখে গোটা জমি অধিগ্রহণ এবং সেখানে টাকা মেটানোর প্রক্রিয়াও। এদিন আদালতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, এই ভুল ইতিমধ্যেই শুধরে নেওয়া হয়েছে। মামলাকারী ইতিমধ্যেই তাঁর প্রাপ্য টাকা পেয়েও গিয়েছেন। তাতে মামলাকারীর আইনজীবী অরিন্দম দাস বলেন , "ঘটনাটি যে ঘটেছিল তা রাজ্যের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। সেক্ষেত্রে সেটা ভুল নাকি এর পিছনে কোনও গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে তার তদন্ত হওয়া জরুরি। কারণ ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ারে এই জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রায় 100 কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমার মক্কেলের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা উচিত।" এই টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ করেছে তাও এদিন আদালতকে জানান মামলাকারীর আইনজীবী।
আরও পড়ুন: পৌরনিগমের ভোটের মামলায় কমিশন ও রাজ্যকে হলফনামা দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
তিনি বলেন, "আমার মক্কেলকে চিঠি দিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ভিজিল্যান্স তদন্ত শুরু করেছে। আদালত মামলাকারীর বক্তব্যে সায় দিয়ে দ্রুত এফআইআর করার নির্দেশ দেয়। ফলে এবার সম্ভবত এই প্রথম রাজ্যে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে প্রজেক্ট ডিরেক্টরের মতো অফিসারের বিরুদ্ধে এবার ফৌজদারি অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে হাইকোর্টের নির্দেশে।" গুজরাট থেকে অসমের মধ্যে নতুন হাইওয়ে তৈরির জন্য একসময় আলিপুরদুয়ারে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বহু জমির ফিজিক্যাল পজিশন নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ফের জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। সবিতা রায়ের চাংপাড়া মৌজার জমির জন্য সাড়ে সতেরো লক্ষ টাকা তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হয়ে রাজ্যের ভূমি দফতর। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় একটি অ্যাকাউন্ট সবিতা রায়ের নামে হলেও সেটি অসমের। সেই অ্যাকাউন্টে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা পড়ার পর তা তুলে নিয়ে অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হয়। এই নিয়ে থানা-পুলিশ করতে গেলে তাঁকে নতুন করে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এই অভিযোগে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলাতেই এদিন এফআইআর করার নির্দেশ দেয় আদালত।