ETV Bharat / city

হাঁচি-কাশিতেও ভেঙে যায় পিঠের হাড়, এ কেমন রোগ?

অস্টিওপোরোসিস যখন শুরু হয়, মানুষ তখন কিছু বুঝতে পারে না । এর কোনও উপসর্গ নেই । কোনও যন্ত্রণা নেই । অসুবিধা যেটা, হাড় দুর্বল হয়ে যায় । হাড় দুর্বল হয়ে গেলে যেটা হয়, স্বাভাবিক কোনও দুর্ঘটনায় যেখানে হাড় ভাঙার কথা নয়, অস্টিওপোরোসিস হলে সেই স্বাভাবিক ঘটনাতেই হাড় ভেঙে যায় । বললেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ।

প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Oct 21, 2019, 12:40 PM IST

Updated : Oct 21, 2019, 12:55 PM IST

কলকাতা, 21 অক্টোবর : হাঁচি-কাশির জেরেও এই রোগে ভেঙে যেতে পারে পিঠের হাড় । অথচ, এই রোগের ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না । থাকে না কোন যন্ত্রণা । সাধারণত, বেশি বয়সে হয় এই রোগ । মেনোপজ়ের পরে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন মহিলারা । তবে, অন্য কিছু রোগ এবং ওষুধের কারণেও কম বয়সে হতে পারে এই রোগ । অস্টিওপোরোসিস । এই রোগের ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে সব নিয়ে বললেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ।

"দ্যাটস অস্টিওপোরোসিস"। এমনই প্রচার চালানো হয় বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবসকে কেন্দ্র করে । গতকাল (20 অক্টোবর) ছিল বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস । কিন্তু, অস্টিওপোরোসিস আসলে কী? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "অস্টিওপোরোসিস বলতে আমরা বুঝি মানুষের শরীরে হাড়ের মাস কমে যাওয়া । এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় । হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায় । নির্দিষ্ট কোনও আয়তনের মধ্যে যতটা পরিমাণে হাড় থাকার কথা, অস্টিওপোরোসিস হলে ততটা হাড় থাকে না ।" এর জেরে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় আক্রান্তকে? তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস যখন শুরু হয়, মানুষ তখন কিছু বুঝতে পারে না । এর কোনও উপসর্গ নেই । কোনও যন্ত্রণা নেই । অসুবিধা যেটা, হাড় দুর্বল হয়ে যায় । হাড় দুর্বল হয়ে গেলে যেটা হয়, স্বাভাবিক কোনও দুর্ঘটনায় যেখানে হাড় ভাঙার কথা নয়, অস্টিওপোরোসিস হলে সেই স্বাভাবিক ঘটনাতেই হাড় ভেঙে যায় ।" এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, "হয়ত বয়স্ক কোনও মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রয়েছেন । দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বসে পড়লেন, তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে গেল । বা, সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলেন, কোমরের হাড় ভেঙে গেল । জোরে হাঁচি বা কাশি হল, তাতে পিঠের একটি হাড় ভেঙে গেল । অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় এমনই ভঙ্গুর হয়ে যায় ।"

দেখুন ভিডিয়ো...

কোন বয়সিরা আক্রান্ত হয়? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অস্টিওপোরোসিসকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি । একটি, সেনাইল অস্টিওপোরোসিস । বয়সজনিত কারণে শরীরের সমস্ত কোশ, কলার পরিমাণ যেমন কমে, হাড়ের ক্ষেত্রেও তাই হয় । এটাকে সেনাইল অস্টিওপোরোসিস বলে । অন্য একটি অস্টিওপোরোসিস মহিলাদের হয় । মেনোপজ়ের পরে এই অস্টিওপোরোসিস হয় ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "কিছু রোগের জন্যেও অস্টিওপোরোসিস হয় । কিছু ওষুধের জন্যেও অস্টিওপোরোসিস হয় । এগুলি কম বয়সেও হতে পারে । এগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ চিন্তা-ভাবনা করতে হয় ।" তিনি আরও বলেন, "জীবনযাপনের অভ্যাস বর্তমানে বদলে গেছে । খাবারের অভ্যাস বদলে গেছে । ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া, ব্যালেন্স ডায়েটে না থাকা, রোদে না থাকার অভ্যাস, বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া । যাঁরা এসবে অভ্যস্ত, তাঁদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিস বেশি হয় । কম বয়সে অস্টিওপোরোসিসের এটাও একটি কারণ , অন্য কোনও রোগ নেই । আপাত সুস্থ মানুষ । কিন্তু, এই সব অভ্যাসের কারণে এদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস আমরা দেখতে পাই ।"

পরিস্থিতি এখন কেমন? এই অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "অস্টিওপোরোসিস ভয়ংকর একটি সমস্যা বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি । প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়া দরকার । কারণ অস্টিওপোরোসিস এমন একটি বিষয়, পরবর্তীকালে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি যে বদলে দেওয়া যেতে পারে, তা নয় । এ কারণে যে কোনও চিকিৎসার মতো প্রতিরোধ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে ।" কী ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব? তিনি বলেন, "কম বয়সে যাতে অস্টিওপোরোসিস রুখে দেওয়া যেতে পারে, তার জন্য ব্যালেন্স খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কোনও নেশায় আসক্ত হয়ে না পড়া, এ সব গুরুত্বপূর্ণ । বয়সজনিত কারণে সব ক্ষেত্রে আমরা অস্টিওপোরোসিস আটকাতে পারি না । মেনোপজ়ের পর মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে রোগীর যদি অন্য কোনও সমস্যা না থাকে, তাহলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করে অস্টিওপোরোসিসকে কিছুদিন দমিয়ে রাখা যেতে পারে ।"

বেশি বয়সি মানুষ যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত থাকেন যেমন, ব্যালেন্স ফুড অর্থাৎ, ঠিকঠাক খাবার খাওয়া । এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের সাপ্লিমেন্টেশনের কথা আমরা মাঝে মধ্যে বলি । পড়ে যাওয়া আটকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হয় । বয়স্ক মানুষ যেখানে থাকবেন, সেখানে যেন যথেষ্ট আলো থাকে, যাতে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে না যান । প্রয়োজনে ওয়াকিং স্টিক ব্যবহার করতে পারেন ।" তিনি বলেন, "পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায় হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক নেই, তখন কিছু ওষুধ দেওয়া হয় । অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসার এটাই লক্ষ্য, যেন হাড় ভেঙে না যায় । এটা আটকানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি ।" আগে থেকে বোঝা যায় না । তা হলে কী ভাবে রোগ নির্ণয় হয়? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা ধরেই নিয়েছি মেনোপজ়ের পরে অস্টিওপোরোসিস হবে । পুরুষ এবং মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই যখন 70 বছর বয়স হবে, তখন অস্টিওপোরোসিস হবে, এটাও আমরা ধরে নিচ্ছি । অস্টিওপোরোটিক, এমন মনে করেই জীবনযাপন করা উচিত যে কী ভাবে চলতে হবে ।"

কম বয়সিদের ক্ষেত্রে খাবার, জীবনযাপনের অভ্যাস, কোনও নেশা, এগুলি বাদেও কিছু রোগ আছে ৷ যেমন, থাইরয়েডের কোনও সমস্যা, অনেক সময় ব্লাড সুগার, ক্যানসারের জন্য নিয়মিত যাঁদের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিতে হয়, মৃগী রোগের জন্য যে ওষুধ নিতে হয়, এ সবের কারণেও হাড়ের স্বাস্থ্য বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে । এ কথা জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, "যাঁরা এই ধরনের হাই রিস্কের মধ্যে রয়েছেন, অর্থাৎ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং বিভিন্ন রোগ আর তার ওষুধের মধ্যে, তাঁদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হতে হয় । অস্টিওপোরোসিস আটকাতে প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা একই রকম । হেলদি লাইফ স্টাইল, ঠিকঠাকভাবে ক্যালসিয়াম নেওয়া, যাঁরা হাই রিস্কে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজন মতো ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি ।"

কোনও উপসর্গ থাকে না, কম বয়সিদের ক্ষেত্রে তা হলে কী ভাবে রোগ ধরা পড়ে? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অন্য কোনও কারণে এক্স-রে করতে হয়েছে বা, কোনও ফ্র্যাকচার হয়েছে, দেখা গেল, ওই বয়সে হাড় যেমন থাকার কথা, সেটা নেই । তখন খুঁজে বের করতে হয়, কমবয়সে অস্টিওপোরোসিস দেখা গেল, তা হলে, কোন কারণে হাড়ের এই অবস্থা হল?" তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার কথা আমরা ভাবছি না । আমরা ভাবছি, অস্টিওপোরোসিস যার হচ্ছে, তাঁর যেন ফ্র্যাকচার না হয় । হাড় যাতে না ভাঙে । আমাদের পুরো চিকিৎসার লক্ষ্য, বয়স্ক যাঁদের হচ্ছে, তাঁদের কিছু করার নেই । কম বয়সে যাদের হচ্ছে, তাদের চিকিৎসা করা ।"

এই চিকিৎসক বলেন, "অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা হচ্ছে, যাতে হাড় না ভাঙে । কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলি নাকে দেওয়া হয় । বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে । আধুনিক কিছু ওষুধ বেরিয়েছে । এগুলির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, যাতে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি । " তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস নিয়ে যে দু'টি ফ্র্যাকচার আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে তার একটি হল কোমরের হাড় ভাঙা । অন্যটি হল, পিঠের হাড় ভাঙা । অনেক সময় খুব ছোটখাটো আঘাতে ভেঙে যায় এই দু'টি হাড় । এটা আটকানোর জন্য ওষুধ সহ যা কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার, আমাদের নিতে হয় ।"

এই অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "একটা সময় পরে অস্টিওপোরোসিস আমাদের প্রত্যেকের হবে । এটা যেমন সত্যি, তেমনই হাড়ের যে স্বাস্থ্য সেটা আমরা রক্ষা করতে পারি । হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আমাদের যেটা দরকার তা হল, একদম প্রথম থেকে অর্থাৎ, ছোটোবেলা থেকে হেলদি লাইফ স্টাইলে আসা । যে শিশু মায়ের দুধ খায় এবং যে শিশু কৌটোর দুধ খায়, বয়স যখন বেশি হবে অন্য আর পাঁচটি রোগের প্রকোপ যেমন হয়, তার সঙ্গে অস্টিওপোরোসিস বেশি হবে এই দুই শিশুর মধ্যে যে কৌটোর দুধ বেশি খায়‌ । ফলে আমাদের ওই সময় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । যেটা ন‍্যাচারাল, যেটা স্বাভাবিক, সেই জীবন-যাপন যেন তারা করে । ব্যালেন্স ডায়েট যেন তারা করে, জীবনের স্বাভাবিক কাজ যেন তারা করে । তারা যেন নেশার মধ্যে বেশি আসক্ত না হয়ে পড়ে । এবং, যখন কোনও কারণে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে তার জন্য যাঁদের ওষুধ খেতে হচ্ছে, তাঁরা যেন সাবধান হয়ে যান ৷ যাতে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় এবং ফ্র‍্যাকচার আটকানো যায় ।"

কলকাতা, 21 অক্টোবর : হাঁচি-কাশির জেরেও এই রোগে ভেঙে যেতে পারে পিঠের হাড় । অথচ, এই রোগের ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না । থাকে না কোন যন্ত্রণা । সাধারণত, বেশি বয়সে হয় এই রোগ । মেনোপজ়ের পরে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন মহিলারা । তবে, অন্য কিছু রোগ এবং ওষুধের কারণেও কম বয়সে হতে পারে এই রোগ । অস্টিওপোরোসিস । এই রোগের ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে সব নিয়ে বললেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ।

"দ্যাটস অস্টিওপোরোসিস"। এমনই প্রচার চালানো হয় বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবসকে কেন্দ্র করে । গতকাল (20 অক্টোবর) ছিল বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস । কিন্তু, অস্টিওপোরোসিস আসলে কী? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "অস্টিওপোরোসিস বলতে আমরা বুঝি মানুষের শরীরে হাড়ের মাস কমে যাওয়া । এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় । হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায় । নির্দিষ্ট কোনও আয়তনের মধ্যে যতটা পরিমাণে হাড় থাকার কথা, অস্টিওপোরোসিস হলে ততটা হাড় থাকে না ।" এর জেরে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় আক্রান্তকে? তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস যখন শুরু হয়, মানুষ তখন কিছু বুঝতে পারে না । এর কোনও উপসর্গ নেই । কোনও যন্ত্রণা নেই । অসুবিধা যেটা, হাড় দুর্বল হয়ে যায় । হাড় দুর্বল হয়ে গেলে যেটা হয়, স্বাভাবিক কোনও দুর্ঘটনায় যেখানে হাড় ভাঙার কথা নয়, অস্টিওপোরোসিস হলে সেই স্বাভাবিক ঘটনাতেই হাড় ভেঙে যায় ।" এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, "হয়ত বয়স্ক কোনও মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রয়েছেন । দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বসে পড়লেন, তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে গেল । বা, সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলেন, কোমরের হাড় ভেঙে গেল । জোরে হাঁচি বা কাশি হল, তাতে পিঠের একটি হাড় ভেঙে গেল । অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় এমনই ভঙ্গুর হয়ে যায় ।"

দেখুন ভিডিয়ো...

কোন বয়সিরা আক্রান্ত হয়? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অস্টিওপোরোসিসকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি । একটি, সেনাইল অস্টিওপোরোসিস । বয়সজনিত কারণে শরীরের সমস্ত কোশ, কলার পরিমাণ যেমন কমে, হাড়ের ক্ষেত্রেও তাই হয় । এটাকে সেনাইল অস্টিওপোরোসিস বলে । অন্য একটি অস্টিওপোরোসিস মহিলাদের হয় । মেনোপজ়ের পরে এই অস্টিওপোরোসিস হয় ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "কিছু রোগের জন্যেও অস্টিওপোরোসিস হয় । কিছু ওষুধের জন্যেও অস্টিওপোরোসিস হয় । এগুলি কম বয়সেও হতে পারে । এগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ চিন্তা-ভাবনা করতে হয় ।" তিনি আরও বলেন, "জীবনযাপনের অভ্যাস বর্তমানে বদলে গেছে । খাবারের অভ্যাস বদলে গেছে । ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া, ব্যালেন্স ডায়েটে না থাকা, রোদে না থাকার অভ্যাস, বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া । যাঁরা এসবে অভ্যস্ত, তাঁদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিস বেশি হয় । কম বয়সে অস্টিওপোরোসিসের এটাও একটি কারণ , অন্য কোনও রোগ নেই । আপাত সুস্থ মানুষ । কিন্তু, এই সব অভ্যাসের কারণে এদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস আমরা দেখতে পাই ।"

পরিস্থিতি এখন কেমন? এই অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "অস্টিওপোরোসিস ভয়ংকর একটি সমস্যা বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি । প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়া দরকার । কারণ অস্টিওপোরোসিস এমন একটি বিষয়, পরবর্তীকালে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি যে বদলে দেওয়া যেতে পারে, তা নয় । এ কারণে যে কোনও চিকিৎসার মতো প্রতিরোধ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে ।" কী ভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব? তিনি বলেন, "কম বয়সে যাতে অস্টিওপোরোসিস রুখে দেওয়া যেতে পারে, তার জন্য ব্যালেন্স খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কোনও নেশায় আসক্ত হয়ে না পড়া, এ সব গুরুত্বপূর্ণ । বয়সজনিত কারণে সব ক্ষেত্রে আমরা অস্টিওপোরোসিস আটকাতে পারি না । মেনোপজ়ের পর মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে রোগীর যদি অন্য কোনও সমস্যা না থাকে, তাহলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করে অস্টিওপোরোসিসকে কিছুদিন দমিয়ে রাখা যেতে পারে ।"

বেশি বয়সি মানুষ যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত থাকেন যেমন, ব্যালেন্স ফুড অর্থাৎ, ঠিকঠাক খাবার খাওয়া । এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের সাপ্লিমেন্টেশনের কথা আমরা মাঝে মধ্যে বলি । পড়ে যাওয়া আটকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হয় । বয়স্ক মানুষ যেখানে থাকবেন, সেখানে যেন যথেষ্ট আলো থাকে, যাতে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে না যান । প্রয়োজনে ওয়াকিং স্টিক ব্যবহার করতে পারেন ।" তিনি বলেন, "পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায় হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক নেই, তখন কিছু ওষুধ দেওয়া হয় । অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসার এটাই লক্ষ্য, যেন হাড় ভেঙে না যায় । এটা আটকানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি ।" আগে থেকে বোঝা যায় না । তা হলে কী ভাবে রোগ নির্ণয় হয়? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা ধরেই নিয়েছি মেনোপজ়ের পরে অস্টিওপোরোসিস হবে । পুরুষ এবং মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই যখন 70 বছর বয়স হবে, তখন অস্টিওপোরোসিস হবে, এটাও আমরা ধরে নিচ্ছি । অস্টিওপোরোটিক, এমন মনে করেই জীবনযাপন করা উচিত যে কী ভাবে চলতে হবে ।"

কম বয়সিদের ক্ষেত্রে খাবার, জীবনযাপনের অভ্যাস, কোনও নেশা, এগুলি বাদেও কিছু রোগ আছে ৷ যেমন, থাইরয়েডের কোনও সমস্যা, অনেক সময় ব্লাড সুগার, ক্যানসারের জন্য নিয়মিত যাঁদের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিতে হয়, মৃগী রোগের জন্য যে ওষুধ নিতে হয়, এ সবের কারণেও হাড়ের স্বাস্থ্য বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে । এ কথা জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, "যাঁরা এই ধরনের হাই রিস্কের মধ্যে রয়েছেন, অর্থাৎ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং বিভিন্ন রোগ আর তার ওষুধের মধ্যে, তাঁদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হতে হয় । অস্টিওপোরোসিস আটকাতে প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা একই রকম । হেলদি লাইফ স্টাইল, ঠিকঠাকভাবে ক্যালসিয়াম নেওয়া, যাঁরা হাই রিস্কে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজন মতো ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি ।"

কোনও উপসর্গ থাকে না, কম বয়সিদের ক্ষেত্রে তা হলে কী ভাবে রোগ ধরা পড়ে? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অন্য কোনও কারণে এক্স-রে করতে হয়েছে বা, কোনও ফ্র্যাকচার হয়েছে, দেখা গেল, ওই বয়সে হাড় যেমন থাকার কথা, সেটা নেই । তখন খুঁজে বের করতে হয়, কমবয়সে অস্টিওপোরোসিস দেখা গেল, তা হলে, কোন কারণে হাড়ের এই অবস্থা হল?" তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার কথা আমরা ভাবছি না । আমরা ভাবছি, অস্টিওপোরোসিস যার হচ্ছে, তাঁর যেন ফ্র্যাকচার না হয় । হাড় যাতে না ভাঙে । আমাদের পুরো চিকিৎসার লক্ষ্য, বয়স্ক যাঁদের হচ্ছে, তাঁদের কিছু করার নেই । কম বয়সে যাদের হচ্ছে, তাদের চিকিৎসা করা ।"

এই চিকিৎসক বলেন, "অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা হচ্ছে, যাতে হাড় না ভাঙে । কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলি নাকে দেওয়া হয় । বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে । আধুনিক কিছু ওষুধ বেরিয়েছে । এগুলির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, যাতে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি । " তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস নিয়ে যে দু'টি ফ্র্যাকচার আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে তার একটি হল কোমরের হাড় ভাঙা । অন্যটি হল, পিঠের হাড় ভাঙা । অনেক সময় খুব ছোটখাটো আঘাতে ভেঙে যায় এই দু'টি হাড় । এটা আটকানোর জন্য ওষুধ সহ যা কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার, আমাদের নিতে হয় ।"

এই অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "একটা সময় পরে অস্টিওপোরোসিস আমাদের প্রত্যেকের হবে । এটা যেমন সত্যি, তেমনই হাড়ের যে স্বাস্থ্য সেটা আমরা রক্ষা করতে পারি । হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আমাদের যেটা দরকার তা হল, একদম প্রথম থেকে অর্থাৎ, ছোটোবেলা থেকে হেলদি লাইফ স্টাইলে আসা । যে শিশু মায়ের দুধ খায় এবং যে শিশু কৌটোর দুধ খায়, বয়স যখন বেশি হবে অন্য আর পাঁচটি রোগের প্রকোপ যেমন হয়, তার সঙ্গে অস্টিওপোরোসিস বেশি হবে এই দুই শিশুর মধ্যে যে কৌটোর দুধ বেশি খায়‌ । ফলে আমাদের ওই সময় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । যেটা ন‍্যাচারাল, যেটা স্বাভাবিক, সেই জীবন-যাপন যেন তারা করে । ব্যালেন্স ডায়েট যেন তারা করে, জীবনের স্বাভাবিক কাজ যেন তারা করে । তারা যেন নেশার মধ্যে বেশি আসক্ত না হয়ে পড়ে । এবং, যখন কোনও কারণে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে তার জন্য যাঁদের ওষুধ খেতে হচ্ছে, তাঁরা যেন সাবধান হয়ে যান ৷ যাতে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় এবং ফ্র‍্যাকচার আটকানো যায় ।"

Intro:কলকাতা, ২১ অক্টোবর: হাঁচি-কাশির জেরেও এই রোগে ভেঙে যেতে পারে পিঠের হাড়। অথচ, এই রোগের ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। থাকে না কোন যন্ত্রনা। সাধারণত, বেশি বয়সে হয় এই রোগ। মেনোপজের পরে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন মহিলারা। তবে, অন্য কিছু রোগ এবং ওষুধের কারণেও কম বয়সে হতে পারে এই রোগ। এটা অস্টিওপোরোসিস। এই রোগের ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে সব নিয়ে বলেছেন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়।


Body:"দ্যাটস অস্টিওপোরোসিস"। এমনই প্রচার চলছে অস্টিওপোরোসিস ডে-কে কেন্দ্র করে। ২০ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড অস্টিওপোরোসিস ডে। কিন্তু, অস্টিওপোরোসিস আসলে কী? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "অস্টিওপোরোসিস বলতে আমরা বুঝি মানুষের শরীরে হাড়ের মাস কমে যাওয়া। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কোনও আয়তনের মধ্যে যতটা পরিমাণে হাড় থাকার কথা, অস্টিওপোরোসিস হলে ততটা হাড় থাকে না।" এর জেরে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় আক্রান্তকে? তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস যখন শুরু হয়, মানুষ তখন কিছু বুঝতে পারে না। এর কোনও উপসর্গ নেই। কোনও যন্ত্রণা নেই। অসুবিধা যেটা, হাড় দুর্বল হয়ে যায়। হাড় দুর্বল হয়ে গেলে যেটা হয়, স্বাভাবিক কোনও দুর্ঘটনায় যেখানে হাড় ভাঙার কথা নয়, অস্টিওপোরোসিস হলে সেই স্বাভাবিক ঘটনাতেই হাড় ভেঙে যায়।" এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, "যেমন হয়তো, বয়স্ক কোনও মানুষ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বসে পড়লেন, তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে গেল। বা, সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলেন, কোমরের হাড় ভেঙে গেল। জোরে হাঁচি বা কাশি হল, তাতে পিঠের একটি হাড় ভেঙে গেল। অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় এমনই ভঙ্গুর হয়ে যায়।"

কোন বয়সিরা আক্রান্ত হয়? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অস্টিওপোরোসিসকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি, সেনাইল অস্টিওপোরোসিস। বয়সজনিত কারণে শরীরের সমস্ত কোষ, কলার পরিমাণ যেমন কমে, হাড়ের ক্ষেত্রেও তাই হয়। এটাকে সেনাইল অস্টিওপোরোসিস বলে। অন্য একটি অস্টিওপোরোসিস মহিলাদের হয়। মেনোপজের পরে এই অস্টিওপোরোসিস হয়।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "কিছু রোগের জন্যেও অস্টিওপোরোসিস হয়। কিছু ওষুধের জন্যেও অস্টিওপোরোসিস হয়। এগুলি কম বয়সেও হতে পারে। এগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ চিন্তা-ভাবনা করতে হয়।" তিনি বলেন, "জীবনযাপনের অভ্যাস বর্তমানে বদলে গিয়েছে। খাবারের অভ্যাস বদলে গিয়েছে। ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া, কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া, ব্যালেন্স ডায়েটে না থাকা, রোদে না থাকার অভ্যাস, বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া। যাঁরা এসবে অভ্যস্ত, তাঁদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিস বেশি হয়। কম বয়সে অস্টিওপোরোসিসের এটাও একটি কারণ, অন্য কোনও রোগ নেই। আপাত সুস্থ মানুষ। কিন্তু, এই সব অভ্যাসের কারণে এদের মধ্যে অস্টিওপরোসিস আমরা দেখতে পাই।"

পরিস্থিতি এখন কেমন? এই অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "অস্টিওপোরোসিস ভয়ঙ্কর একটি সমস্যা বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রতিটি মানুষের সচেতন হওয়া দরকার। কারণ অস্টিওপোরোসিস এমন একটি বিষয়, পরবর্তীকালে চিকিৎসার মাধ্যমে পরিস্থিতি যে বদলে দেওয়া যেতে পারে, তা নয়। এ কারণে যে কোনও চিকিৎসার মতো প্রতিরোধ এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।" কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব? তিনি বলেন, "কম বয়সে যাতে অস্টিওপোরোসিস রুখে দেওয়া যেতে পারে, তার জন্য ব্যালেন্স খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কোনও নেশায় আসক্ত হয়ে না পড়া, এ সব গুরুত্বপূর্ণ। বয়সজনিত কারণে সব ক্ষেত্রে আমরা অস্টিওপোরোসিস আটকাতে পারি না। মেনোপজের পর মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ক্ষেত্রে রোগীর যদি অন্য কোনও সমস্যা না থাকে, তাহলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করে অস্টিওপোরোসিসকে কিছুদিন দমিয়ে রাখা যেতে পারে।"

বেশি বয়সি মানুষ যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত থাকেন যেমন, ব্যালেন্স ফুড অর্থাৎ, ঠিকঠাক খাবার খাওয়া। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিনের সাপ্লিমেন্টেশনের কথা আমরা মাঝে মধ্যে বলি। পড়ে যাওয়া আটকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। বয়স্ক মানুষ যেখানে থাকবেন, সেখানে যেন যথেষ্ট আলো থাকে, যাতে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে না যান। প্রয়োজনে ওয়াকিং স্টিক ব্যবহার করতে পারেন।" তিনি বলেন, "পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায় হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক নেই, তখন কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসার এটাই লক্ষ্য, যেন হাড় ভেঙে না যায়। এটা আটকানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি।" আগে থেকে বোঝা যায় না। তা হলে কীভাবে রোগ নির্ণয় হয়? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা ধরেই নিয়েছি মেনোপজের পরে অস্টিওপোরোসিস হবে। পুরুষ এবং মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই যখন ৭০ বছর বয়স হবে, তখন অস্টিওপোরোসিস হবে, এটাও আমরা ধরে নিচ্ছি। অস্টিওপোরোটিক, এমন মনে করেই জীবনযাপন করা উচিত যে, কীভাবে চলতে হবে।"

কম বয়সিদের ক্ষেত্রে খাবার, জীবনযাপনের অভ্যাস, কোনও নেশা, এগুলি বাদেও কিছু রোগ আছে যেমন, থাইরয়েডের কোনও সমস্যা, অনেক সময় ব্লাড সুগার, ক্যান্সারের জন্য নিয়মিত যাঁদের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিতে হয়, মৃগী রোগের জন্য যে ওষুধ নিতে হয়, এ সবের কারণেও হাড়ের স্বাস্থ্য বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কথা জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, "যাঁরা এই ধরনের হাই রিস্কের মধ্যে রয়েছেন, অর্থাৎ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং বিভিন্ন রোগ আর তার ওষুধের মধ্যে, তাঁদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হতে হয়। একই ভাবে অস্টিওপোরোসিস থেকে তাঁদেরকে আমরা আটকাবো।
প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা একই রকম। হেলদি লাইফ স্টাইল, ঠিকঠাকভাবে ক্যালসিয়াম নেওয়া, যাঁরা হাই রিস্কে রয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রয়োজন মতো ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি।"

কোনও উপসর্গ থাকে না, কম বয়সিদের ক্ষেত্রে তা হলে কীভাবে রোগ ধরা পড়ে? অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অন্য কোনও কারণে এক্সরে করতে হয়েছে বা, কোনও ফ্র্যাকচার হয়েছে, দেখা গেল, ওই বয়সে হাড় যেমন থাকার কথা, সেটা নেই। তখন খুঁজে বের করতে হয়, কমবয়সে অস্টিওপোরোসিস দেখা গেল, তা হলে, কোন কারণে হাড়ের এই অবস্থা হল?" তিনি বলেন, "অস্টিওপোরোসিস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার কথা আমরা ভাবছি না। আমরা ভাবছি, অস্টিওপোরোসিস যা়র হচ্ছে, তাঁর যেন ফ্র্যাকচার না হয়। হাড় যাতে না ভাঙে। আমাদের পুরো চিকিৎসার লক্ষ্য, বয়স্ক যাঁদের হচ্ছে, তাঁদের কিছু করার নেই। কম বয়সে যাদের হচ্ছে, তাদের চিকিৎসা করা।"


Conclusion:এই বিশেষজ্ঞ বলেন, "অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা হচ্ছে, যাতে হাড় না ভাঙে। কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলি নাকে দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। আধুনিক কিছু ওষুধ বেরিয়েছে। এগুলির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, যাতে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি।" তিনি বলেন, "অস্টিওপরোসিস নিয়ে যে দু'টি ফ্র্যাকচার আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে তার একটি হল কোমরের হাড় ভাঙা। অন্যটি হলোষ, পিঠের হাড় ভাঙা। অনেক সময় খুব ছোটখাটো আঘাতে, স্পন্টেনিয়াসলি ভেঙে যায় এই দু'টি হাড়। এটা আটকানোর জন্য ওষুধ সহ যা কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার, আমাদের নিতে হয়।"

অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "একটা সময় পরে অস্টিওপোরোসিস আমাদের প্রত্যেকের হবে। এটা যেমন সত্যি, তেমনই হাড়ের যে স্বাস্থ্য সেটা আমরা রক্ষা করতে পারি। হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে আমাদের যেটা দরকার তা হল, একদম প্রথম থেকে অর্থাৎ, ছোটবেলা থেকে হেলদি লাইফ স্টাইলে আসা। যে শিশু মায়ের দুধ খায় এবং যে শিশু কৌটৈর দুধ খায়, বয়স যখন বেশি হবে অন্য আর পাঁচটি রোগের প্রকোপ যেমন হয়, তার সঙ্গে অস্টিওপোরোসিস বেশি হবে এই দুই শিশুর মধ্যে যে কৌটোর দুধ বেশি খায়‌। ইন্টারভেনশন আমাদের ওই সময় থেকে করা উচিত। যেটা ন‍্যাচারাল, যেটা স্বাভাবিক, সেই জীবন-যাপন যেন তারা করে। ব্যালেন্স ডায়েট যেন তারা করে, জীবনের স্বাভাবিক কাজ যেন তারা করে। তারা যেন নেশার মধ্যে বেশি আসক্ত না হয়ে পড়ে। এবং, যখন কোনও কারণে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে তার জন্য যাঁদের ওষুধ খেতে হচ্ছে, তাঁরা যেন সাবধান হয়ে যান, যাতে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় এবং ফ্র‍্যাকচার প্রিভেনশন করা যায়।"
_______

বাইট:
wb_kol_01a_osteoporosis_bite_7203421
অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়

_______
Last Updated : Oct 21, 2019, 12:55 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.