কলকাতা, 3 এপ্রিল : আনিশ খানের রহস্যমৃত্যু, একইদিনে ঝালদা-পানিহাটিতে খুন দুই নবনির্বাচিত কাউন্সিলর, সর্বোপরি রামপুরহাটের বগটুইয়ে গণহত্যা ৷ হিংসার আঁতুড়ঘরে পরিণত বাংলা, অথচ মুখে কুলুপ সমাজের বিশিষ্টদের ৷ স্বাভাবিকভাবেই তথাকথিত বিশিষ্টদের মৌনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন বিরোধীরা ৷ তবে দেরিতে হলেও রাজ্যের হিংসার ঘটনায় মৌনতা ভাঙলেন বিশিষ্টরা ৷ বাংলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুণী 22 জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি শনিবার পৌঁছল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরবারে (Bengal Civil Society writes a letter to Mamata Banerjee over recent violence in State) ৷ সমাজের যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মতই বগটুই গণহত্যাকে 'পৈশাচিক' বললেন অপর্ণা, ধৃতিমান, বোলান, শ্রীজাত, অনুুপম, পরম, কৌশিক, অনির্বাণ ও আরও অনেকে ৷
বাম আমলের শেষদিকে বিশেষ করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ইস্যুতে যখন উত্তাল রাজ্য, তখন বিশিষ্টদের রাস্তায় নেমে কিংবা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ দেখেছে বাংলা ৷ অথচ তৃণমূল সরকারের আমলে রা কাটছেন না তাঁরা ৷ তা নিয়েই চলছিল ব্যাপক চর্চা ৷ এমন সময় মুখ্যমন্ত্রীকে বিশিষ্ট 22 জনের খোলা চিঠি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ৷ চিঠিতে বগটুই কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিশিষ্টরা লিখেছেন, "গত মার্চ মাসে রামপুরহাটে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডটিকে যেকোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দ্ব্য়র্থহীন ভাষায় পৈশাচিক আখ্যা দেবেন। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। ঘটনা পরবর্তীতে আপনার তত্ত্বাবধানে প্রশাসন অনুসন্ধান এবং ক্ষতিপূরণ দানে তৎপর হয়েছে এবং এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে স্বাগত ৷"
তবে ঘটনার আগে পুলিশ প্রশাসন আরেকটু তৎপরতা দেখালে বাংলার বুকে আরেকটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক হিংসার নিদর্শন রুখে দেওয়া যেত বলে মত বিশিষ্টদের ৷ এছাড়া বাকি হিংসার ঘটনাগুলির তদন্তের সঠিক দিশা সাধারণের সামনে তুলে ধরার আর্জিও খোলা চিঠিতে জানান কৌশিক-বোলান-ঋদ্ধিরা ৷ একইসঙ্গে চিঠিতে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের কোনও রাজনৈতিক স্বার্থ নেই বলেও জানান তাঁরা ৷ দেশের অধিকাংশ অংশে গরিষ্ঠতাবাদী বিভাজন সৃষ্টিকারী শক্তি বাংলাতে আপনার জন্যই মাথা তুলতে পারেনি বলে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থনও করেন বিশিষ্টরা ৷ কিন্তু রাজ্যের ভিতরে ভুলত্রুটিগুলো না-শোধরালে বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক শক্তি তার ফায়দা নেবে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান সকলে ৷
আরও পড়ুন : বগটুই-কাণ্ডে জেল হেফাজতে থাকা 9 অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার অনুমতি পেল সিবিআই
যদিও বিশিষ্টদের এই চিঠিকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন, 'বিলম্বিত বোধোদয়'। ওনাদের স্নায়ুতন্ত্র ধীর গতিতে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে বলে মত তাঁর। একইসঙ্গে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ শ্রীজাত এবং রাজ্যের গঠন করা ডেউচা-পাঁচামি সংক্রান্ত কমিটির সদস্য পরমব্রতর স্বাক্ষর থাকা নিয়েও আলোচনা বিরোধী শিবিরে ৷