কলকাতা, 20 এপ্রিল: কোভিড-19-এর সেকেন্ড ওয়েভ খুব ভয়ঙ্কর ভাবে আছড়ে পড়েছে । এমনই এক অবস্থা আসছে, যেখানে হাসপাতালের লবি, পার্কিং স্পেসকেও হয়তো বেডের জন্য কনভার্ট করতে হবে । ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের চাহিদাও বাড়ছে । সোমবার এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের তরফে । কীভাবে আরও বেড বাড়ানো যায়, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা ।
কোভিড-19-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি এ রাজ্যেও হু হু করে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা । সোমবার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত 24 ঘণ্টায় এ রাজ্যে কোভিড-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন 8,426 জন। গত 24 ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে 38 জনের । এ রাজ্যেও কোভিড-19-এর দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসকদের বিভিন্ন অংশের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আরও বেড বাড়ানো সম্ভব হয়, এই বিষয়ে সোমবার বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসে রাজ্য সরকার ।
এই বৈঠকের পরে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলেন, "কোভিড-19-এর সেকেন্ড ওয়েভ খুব ভয়ঙ্কর ভাবে আসছে । এমনই একটি অবস্থা আসছে, যেখানে হাসপাতালের লবি এবং পার্কিং স্পেসকে হয়তো একটা সময় বেডের জন্য কনভার্ট করতে হবে ।" তিনি বলেন, "অবশ্যই অনেক বেশি বেড আমাদের বাড়াতে হবে । এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বেড কীভাবে আরও বাড়ানো সম্ভব হবে, সেটাও দেখা হচ্ছে । কারণ কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডের ডিমান্ড অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।"
আরও পড়ুন: শিয়রে করোনা, জরুরি নয় এমন অস্ত্রোপচার 15 দিন পিছিয়ে দিল স্বাস্থ্য দফতর
কীভাবে, কত তাড়াতাড়ি আরও কত বেশি বেড কোভিড-19 রোগীদের জন্য বাড়ানো সম্ভব হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে, সোমবারের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, আউটডোর ক্লিনিকগুলিকে হাসপাতালের বাইরে স্থানান্তর করে, সেখানে বেডের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে । টিকাকরণ কেন্দ্রকে হাসপাতালের বাইরে অন্য কোথাও স্থানান্তর করে, সেখানে বেডের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তাও দেখতে বলা হয়েছে । কত তাড়াতাড়ি আরও বেশি স্যাটেলাইট সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে । হোটেলগুলিকে কীভাবে আরও বেশি করে হাসপাতালের বেডে কনভার্ট করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রূপক বড়ুয়া বলেন, "যত জায়গা রয়েছে, যত রকমভাবে বেড বাড়ানো যায় । কিংবা হোমকেয়ার, টেলি কনসালটেশনের মাধ্যমে রোগীকে পরিষেবা দেওয়া যায় । এ সবের জন্য আরও বেশি প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই বৈঠকে ।"
সেকেন্ড ওয়েভ সামাল দেওয়ার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কীভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে । এই বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে জানানো হয়েছে, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী যে সব রোগীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল, কিছু সময়ের জন্য যদি সেই সব অস্ত্রোপচার স্থগিত করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে । নন-ইমার্জেন্সি রোগীরা যেন বেড ভর্তি করে না-রাখেন । অর্থাৎ, যেভাবে সম্ভব হতে পারে, সেভাবে বেডের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সেকেন্ড ওয়েভ সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বৈঠকে রাজ্য সরকার জানিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ।
রূপক বড়ুয়া বলেন, "সেকেন্ড ওয়েভ-এ যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই তুলনায় বেড নেই । এ ভাবে যদি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে, এই বেডের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোটাই ভেঙে পড়বে ।" মানুষকে সচেতন করার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন ডাক্তাররা ৷