কলকাতা, 26 জুলাই : 9 হাজার টাকা না পেলে পার্ক সার্কাস থেকে মেডিকেল কলেজে দুই কোরোনা আক্রান্তকে নিয়ে যাবে না ৷ এই অভিযোগ উঠল পার্ক সার্কাসের এক বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে ৷ পরে দীর্ঘ টালবাহানার পর অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের চালক সাড়ে চার হাজার টাকায় ওই দুই শিশুকে পার্ক সার্কাসের হাসপাতাল থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে রাজি হন ৷ এই ঘটনায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত বলে মত চিকিৎসকদের ৷
হুগলির নয় বছরের এক নাবালক এবং কলকাতার দশ মাসের এক শিশুর চিকিৎসা চলছিল পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে । সেখানে কয়েকদিন ধরে তাদের ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল । হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাদের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে নেগেটিভ আসে । শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ভেন্টিলেটরের বাইরে আনা হয় তাদের । ফের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । জানা যায়, 10 মাসের শিশু কোরোনার পাশাপাশি ডেঙ্গিতেও আক্রান্ত । হাসপাতাল সূত্রে খবর, রিপোর্ট পাওয়ার পর স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় । এরপর কলকাতা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয় তাদের । স্বাস্থ্যভবন থেকে জানানো হয়, স্থানান্তরের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হবে । তবে অন্য রোগীদের চাপে দেরি হতে পারে । বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে পারে । এর পর অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । একটি অ্যাম্বুলেন্স যেতে রাজি হয় । দুই রোগীর পরিবারের অভিযোগ, পার্ক সার্কাস থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজে যেতে 9 হাজার টাকা দাবি করে ওই অ্যাম্বুলেন্স চালক । অথচ দুই হাসপাতালের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার ।
এরপর অন্য আম্বুলেন্সগুলির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় । শেষপর্যন্ত সাড়ে চার হাজার টাকায় অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স তাদের নিয়ে যেতে রাজি হয় । এক শিশুর পরিবার অ্যাম্বুলেন্সের অর্ধেক খরচ দিতে সক্ষম ছিলেন না । এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক তাঁদের টাকা দেন ।
এই ঘটনার জেরে চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, হাসপাতাল থেকে কোনও রোগীকে ফেরানো হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে কেন এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । অনেক সময় অভিযোগ উঠছে, রোগী কোরোনায় আক্রান্ত জানার পর তাকে নিতে চাইছে না অ্যাম্বুলেন্স । বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবার অভিযোগ উঠছে, কোরোনায় আক্রান্ত রোগীকে নিতে চাইলেও ভাড়া হিসেবে অনেক বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে । পার্ক সার্কাসেরর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে রোগীকে ফেরানো হলে যেমন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, রোগীকে নিতে না চাইলে অথবা বেশি টাকা চাওয়া হলে অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধেও তেমন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত । অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বেঁধে দেওয়া উচিত ।’’
এই বিষয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক তথা চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘রোগীকে নিতে না চাইলে অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ৷ অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নির্দিষ্ট করা উচিত । তবে এই পদক্ষেপের আগে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে ।’’