কলকাতা, 1 মে : অন্যান্য সবকিছুর মতোই কোরোনা-আবহে থমকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন দ্বারা পরিচালিত সরকারি বিভিন্ন পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া । জনতা কারফিউয়ের আগের দিন অর্থাৎ 21 মার্চ থেকে একের পর এক চাকরির পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে কমিশন । 21 মার্চ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় দফার লকডাউনের শেষ দিন 3 মে পর্যন্ত মোট 12 টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে । 12 টি পরীক্ষা মিলিয়ে প্রায় 95 হাজার প্রার্থী ছিলেন । তাঁরা কেউই বসতে পারেননি চাকরির পরীক্ষায় । পরিস্থিতির বিচারে লকডাউনের মেয়াদ বাড়লে আরও বহু পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (WBPSC) চেয়ারম্যান দেবাশিস বোস বলেন, "21 মার্চ থেকে আমরা পরীক্ষা করতে পারিনি । 21 মার্চ থেকে 3 মে পর্যন্ত এই সময়সীমায় আমাদের 12টা পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল । 12টা পরীক্ষা মিলিয়ে প্রায় 3 হাজার 400-র মতো শূন্যপদ ছিল । প্রায় 95 হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিত ।" কোরোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লকডাউনের মহড়া হিসেবে গত 22 মার্চ দেশজুড়ে জনতা কারফিউয়ের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । পরিস্থিতি বিবেচনার পর প্রাথমিক পর্যায়ে 21 মার্চ থেকে 5 এপ্রিল পর্যন্ত যে সব লিখিত পরীক্ষা ছিল সেগুলি স্থগিত করে দেয় PSC । তারপরে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণার পর 23 থেকে 31 মার্চ পর্যন্ত সব ইন্টারভিউ তথা পার্সোনালিটি টেস্টও স্থগিত করে দেওয়া হয় । সবশেষে টানা 21 দিনের লকডাউন ঘোষণা হতেই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ স্থগিত রাখা হবে, এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন ।
ধাপে ধাপে বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ । তার সঙ্গে বেড়েছে স্থগিত পরীক্ষার সংখ্যাও । পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রকাশিত চাকরির পরীক্ষাগুলির সম্ভাব্য নির্ঘন্ট অনুযায়ী 3 মে পর্যন্ত মোট 12টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে । 21 মার্চ ওয়েলফেয়ার অফিসার আন্ডার কারেকশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা, 22 মার্চ ওয়ার্ড মাস্টার গ্রেড-থ্রি অফ ESI হসপিটালস আন্ডার লেবার ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা, 28 মার্চ ফার্স্ট হাফে সায়েন্টিফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট কেমিক্যাল ও সেকেন্ড হাফে ফিটার হেল্পার অ্যান্ড ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট অফ বয়লার ডাইরেক্টরেট আন্ডার লেবার ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা ছিল । 29 মার্চ উচ্চশিক্ষা দপ্তর অধীনস্থ সরকারি ইঞ্জিনিয়রিং অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরিয়ান ও সরকারি কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদের জন্য পরীক্ষা ছিল । বোটানিস্ট ইন দ্য সিঙ্কোনা ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা 4 এপ্রিল, ICDS সুপারভাইজার বাই প্রোমোশনের পরীক্ষা 4 এবং 5 এপ্রিল হওয়ার কথা ছিল । 12 এপ্রিল ডায়ালিসিস টেকনিশিয়ান আন্ডার লেবার ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা, 19 এপ্রিল এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং অফিসার আন্ডার এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা ছিল । ICDS সুপারভাইজার পদের জন্য মেন পরীক্ষা ছিল 25 এবং 26 এপ্রিল । 3 মে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিটেন্ডেন্ট (নন মেডিক্যাল) ESI হসপিটালস আন্ডার লেবার ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা ছিল ।
জানা গেছে, এই 12টি পরীক্ষার মধ্যে বড় পরীক্ষা ছিল তিনটে । ICDS সুপারভাইজ়ারে প্রায় 30 হাজার প্রার্থী, ICDS সুপারভাইজ়ার বাই প্রোমোশনে প্রায় 40 হাজার প্রার্থী ও ওয়ার্ড মাস্টার 20 হাজার প্রার্থী ছিলেন । অন্যান্য পরীক্ষাগুলোয় 500 থেকে 1 হাজারের মতো প্রার্থী ছিলেন ।
এই পরীক্ষাগুলি কবে, কীভাবে নেওয়া হবে? চেয়ারম্যান দেবাশিস বোস বলেন, "এই পরীক্ষাগুলো হবে তো বটেই। তবে, কবে হবে এবং কীভাবে নেওয়া হবে তা লকডাউন না উঠলে বলা সম্ভব নয়। যেভাবে লকডাউন উঠবে সেভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের যা সিডিউল ছিল সেটা রেখে মাঝে মাঝে এই পরীক্ষাগুলোকে ঢুকিয়ে দেওয়ার। এখন কতদিন পরে উঠে, কতগুলো পরীক্ষা করতে হয় তার উপর নির্ভর করবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে যাতে ক্যালেন্ডার ডিসটার্ব না করে করা যায়। সেটা বাস্তবে করা সম্ভব হবে কি না তা বোঝা যাবে লকডাউন ওঠার পরই।"
শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়। আটকে গেছে অন্যান্য বহু পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া । কিছু ইন্টারভিউ পর্যায়ে, আবার কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়ার অন্য কোনও ধাপে । এ ছাড়া, লকডাউন বাড়লে আরও অনেকগুলো পরীক্ষা বাতিল করা হবে । এমনকি, দিন নির্ধারণ না হলেও জুন-জুলাই মাসে WBCS এক্সিকিউটিভ 2020-র মেইন পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল কমিশনের । পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেই পরীক্ষার উপরেও প্রভাব পড়তে পারে। তবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই জোরকদমে নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানাচ্ছেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দেবাশিস বোস। তিনি বলেন, "দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া করার যে পরিকল্পনা আমরা করেছিলাম সেটা বজায় রাখার যতটা সম্ভব চেষ্টা করব। আমরা চাই যতটা এগিয়েছে এর থেকে আরও এগোতে, আর না পিছোতে ।"